শুরুর দৃশ্যটি ২০১৩ সালের; যখন বই সংখ্যা ছিল শ'খানেক। ২০১৮ সালে এসে বসার রুমের লাইব্রেরিটি জায়গা করে নিয়েছে গাড়ির গ্যারেজে। বই সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বহু আগে।
এটি দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী এ্যাডিলেইডের একমাত্র বাংলা লাইব্রেরি 'পিদিম পাঠাগার'। যার প্রতিষ্ঠাতা এ এফ এম এনায়েতউল্লাহ; ২০১১ সালে দক্ষ অভিবাসী ভিসায় তিনি এ্যাডিলেইড আসেন।
"আসার পর থেকে খেয়াল করে দেখলাম কমিউনিটি সংগঠনগুলো নানা রকম সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িত। কিন্তু একুশে ফেব্রুয়ারিতে কেউ বইমেলার আয়োজন করছে না। তখনই মনে হলো বাংলা বই নিয়ে কিছু একটা করা দরকার," বলেছেন এনায়েত।২০১৩-র ডিসেম্বরে বিজয় দিবসের এক অনুষ্ঠানে বইয়ের দোকান নিয়ে বসেন এনায়েত উল্লাহ। যতটা না চমক দিলেন তার চেয়ে বেশী আবেগাপ্লুত করলেন এ্যাডিলেইড প্রবাসী বাংলাদেশীদের। সেই শুরু।
পিদিম পাঠাগারে এনায়েত উল্লাহ। Source: Supplied
"একটা গরীব দেশ আমাকে অনেক দিয়েছে; কিন্তু আমিতো তার জন্য কিছুই করতে পারি নাই। এই ঋণ স্বীকার এবং দায়বদ্ধতা থেকে অন্তরগত একটা যন্ত্রণা অনুভব করি। তারই সৃষ্টি পিদিম।"
মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বই মিলবে পিদিম পাঠাগারে। দুই বাংলার সেরা লেখকদের বইতো আছেই, বিশেষ প্রাধাণ্য দেয়া হয়েছে নতুন প্রজন্মের প্রতি। আছে বর্ণমালা শিখার বইসহ শিশু কিশোরদের অসংখ্য বই।
"আমার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের সন্তানদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করা। তারই প্রেক্ষিতে প্রতিটি পরিবারে বই পড়ার অভ্যাস চালু করতে চাচ্ছি। যাতে এটা পারিবারিকভাবেই সংক্রমিত হয়," বলেছেন এনায়েত।পাঠাগার শুরুর পর থেকে যতবার দেশে গিয়েছেন, প্রতিবার আসার সময় এনায়েত এবং তার পরিবারের ব্যাগ ভর্তি থাকে নতুন নতুন বাংলা বইয়ে। তাছাড়া প্রতিনিয়তই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বই আসে পিদিম পাঠাগারে। বাংলাদেশে আজ যা নতুন, আগামী সপ্তাহে তাই মিলবে এনায়েতের পাঠাগারে।
পিদিমের পক্ষ থেকে কৃতি শিক্ষার্থী সম্বর্ধনা। Source: Supplied
তবে কি বই কিনে দেউলিয়া হওয়ার পথে প্রবাসী এই বাংলাদেশী?
"এটা আমার শখের শান্তি, সুখের জায়গা। অনেকেই দামী গাড়ি- বাড়ির মধ্যে সুখ খুঁজে পায়। আমি পাই বইতে। এটাকে আমি মানসিক প্রশান্তির নান্দনিক ব্যয় বলে মনে করি।" শুধু কিন্তু পাঠাগারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই পিদিম। এরই মধ্যে আয়োজন করেছে বাচ্চাদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, আবৃত্তি ও সঙ্গীত সন্ধ্যা, দিয়েছে এ্যাডিলেইডের সিনিয়র দশ জন মা এবং ইয়ার টুয়েল্ভ পাশ কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা।
২০১৬ সালে এ্যাডিলেইড প্রবাসী সিনিয়র দশজন মা'কে সম্বর্ধনা দিয়েছে পিদিম। Source: Supplied
তাছাড়া্ও এবছর অংশ নিয়েছে সিডনির এ্যাশফিল্ড পার্কের বইমেলায়। প্রকাশ করছে 'প্রত্যয়' নামক বাংলা ম্যাগাজিন।
"বাংলাদেশের বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মত একটি ভ্রাম্যমান পাঠাগার করার ইচ্ছা আমার। পরিকল্পনা আছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি রাজ্যে বইমেলার আয়োজন করার," বলেছেন এনায়েত।পারিবারিক জীবনে এক সন্তানের জনক এনায়েত। এ পাঠাগারের শুরু থেকেই অকৃত্রিম সহায়তা পেয়েছেন স্ত্রী এবং সন্তানের। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন নাদেরা সুলতানা নদী এবং হাসান ইমাম শামীমকে। পিদিমের অগ্রযাত্রায় তারাই দিকপাল।
পিদিম পাঠাগার। Source: Supplied
"পিদিম এখন এ্যাডিলেইড প্রবাসী বাংলাদেশীদের ব্র্যান্ড," এমনটাই দাবি এনায়েত উল্লাহর।