আইনের ছাত্রী প্রিন্সেস আভিয়া তার সামোয়ান ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরম্পরা রক্ষার ব্রত নিয়েছেন।
প্রতি রবিবার গির্জা থেকে ফিরে তিনি নিজের বর্ধিত পরিবার আর একদল শিশুর কাছে সামোয়ান ভাষার পাঠ দান করেন।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
নিজের ভাষাগত সীমাবদ্ধতার কথা ব্যাখ্যা করে মিস আভিয়া বলেন, তিনি নিউজিল্যান্ডে ইংরেজী ভাষা ও শিক্ষার বাতাবরণে বেড়ে উঠেছেন। ২০০৮ সালে তারা সপরিবারে ব্রিসবেনে চলে আসেন। সেখানে অস্ট্রেলিয়ার সামোয়ান জনগোষ্ঠীর সাথে মেলামেশার সময় তিনি নিজের ভাষা ও সংস্কৃতিতে সীমাবদ্ধতা উপলদ্ধি করেন।
আভিয়া বলেন,
আমার খুব হতাশ লাগতো, যখন দেখি তারা কি নিয়ে গান গাইছে বা কি বলছে— আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এই হাতাশাবোধ থেকে আমি নিজের ভাষা শেখা শুরু করি
মিস আভিয়ার ভাষা শিক্ষা গতি পায় যখন তার দাদী মোয়রা লোগো অসুস্থ হয়ে পড়েন। আভিয়া তার দাদীর অসুখ বা ওষুধ-পথ্যের তথ্য বুঝতে পারতেননা কেননা তার দাদী কেবল সামোয়ান ভাষাতেই কথা বলতে পারতেন। একবার অসুস্থ অবস্থায় তার দাদীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ডাক্তার কি বলছেন তা তার দাদীকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিলেন না তিনি।
এই ঘটনার পর ২৫ বছর বয়সের আভিয়া আর ৮৫ বছর বয়সের তার দাদীর ভাবনার বিনিময় আরও বেড়ে যায়; ঘটে সংস্কৃতি ও অভিজ্ঞতার বিনিময়, যা আভিয়ার জীবনোপলদ্ধিকে আরও সমৃদ্ধ করে।
আভিয়ার দাদী বলতেন,
নিজের ভাষা শেখার মধ্য দিয়ে মানুষ নিজের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে জানতে পারে। এর মধ্য দিয়ে মানুষ নিজেকে জানতে শেখে, নিজেকে আর অপরকে ভালোবাসতেও শেখে।
মিস আভিয়ার উদ্যোগ চার্চ এবং তার কমিউনিটির কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এ বিষয়ে তার মা হেলেন বলেন, ইংরেজী ভাষা বলা প্রবাসী তরুণেরা কেউ এখন সামোয়ান ভাষা শিখছে— এই ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে। প্রিন্সেস আভিয়া তার পদক্ষেপকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন শিশুদের জন্য সামোয়ান ভাষা শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে।প্রিন্সেস আভিয়ার নিবাস কুইন্সল্যান্ডের লোগান এলাকায়। সেখানে প্রায় ৭ হাজার সামোয়ান জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। আভিয়া আশা করেন, তার কর্মসূচির মাধ্যমে স্থানীয় মানুষেরা নিজের শেকড়ের সংস্কৃতির সাথে যুক্ত হতে পারবে।
Samoan matai or chiefs attend the opening ceremony of the 35th Pacific Forum summit in Samoa. Source: Getty Images/Michael Field
তিনি অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে উইম্যান্স লিডারশিপ এন্ড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম এর বরাবরে নিজের প্রলল্প পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করেছিলেন।
অস্ট্রেলিয়ায় নারী উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতার কথা খুব একটা শোনা যায় না। এখানে প্রতি এক দশমিক আট জনপুরুষ উদ্যোক্তার বিপরীতে একজন নারী উদ্যোক্তা দেখা পাওয়া যায়।
মিস আভিয়া ক্রমবর্ধমান নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যতম একজন, যিনি চলমান অতিমারীর কালে অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ব্যবসায় উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।
তিনি নিজের কর্মসূচীর মাধ্যমে ভাষা প্রসারের জন্য এক্সেলারেটর ফর এন্টারপ্রাইজিং উয়োমেন্স কিকস্টার্টার চ্যালেঞ্জ এর আওতায় তহবিলের আবেদন করেছেন। এই কর্মসূচির মুখপাত্র জেসিকা ট্যাঙ্ক্রেড বলেন, কিকস্টার্টার চ্যালেঞ্জ এর মাধ্যমে তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উপযুক্ত একটি ব্যবসায় প্রকল্পকে ৬০ হাজার ডলারের মূলধন দেওয়া হয়, যা দিয়ে নতুন উদ্যোগকে চালিকাশক্তি প্রদান করা হয়।
Communion at a Catholic Church Source: SBS
সামোয়ান ভাষা জানার পর প্রিন্সেস আভিয়ার কাছে চার্চে প্রচারিত ধর্মের বানী যেন নতুন আর আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে। ধর্মীয় শিক্ষার গভীর বানী তিনি মাতৃভাষায় বুঝতে পারছেন— এ যেন নতুন এক উপলদ্ধি। তিনি এই নতুন উপলদ্ধ্বির বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চান।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: