গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা আগের চাইতে দীর্ঘ সময় কাজ করার অনুমতি পাবেন
- অস্ট্রেলিয়ার ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টরে কর্মরত ওয়ার্কিং হলিডে ভিসাধারীদের জন্য নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে
- নাগরিকত্ব আবেদন ফি বেড়ে গিয়ে ২৮৫ ডলার থেকে ৪৯০ ডলার হয়েছে
অস্থায়ী ভিসাধারী যারা অস্ট্রেলিয়ার পর্যটন ও কৃষি ক্ষেত্রে কাজ করছেন, তারা এবার অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানকাল আরও বাড়াতে পারবেন।
'অনশোর' বা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী, যারা কৃষি, হসপিটালিটি, পর্যটন খাত সহ স্বাস্থ্য সেবা, প্রতিবন্ধী সেবা, ও বয়স্ক সেবা কেন্দ্রে কাজ করছেন- তারা আগের চাইতে দীর্ঘ সময় কাজ করার অনুমতি পাবেন।
মাইগ্রেশন ডাউন আন্ডার নামক অভিবাসন এজেন্সির স্বত্বাধিকারী ও সিনিয়র রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্ট জুলি উইলিয়ামস বলেন, গত বছর সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬০০০০ সংখ্যক অভিবাসন ধার্য করা হয়েছিল।
"যদিও এই মাইগ্রেশন প্লানিং লেভেল অনুযায়ী গত বছর থেকে অভিবাসন কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে, তবে বিভিন্ন ভিসার ধরণ অনুযায়ী কোটার বন্টন আলাদা হয়ে থাকে।"
এই প্রোগ্রামের আওতায় দক্ষ জনশক্তির জন্য ৫০ ভাগ বরাদ্দ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- অত্যাধিক দক্ষ অভিবাসী, উদ্ভাবনশীল ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগদাতা এবং গ্লোবাল ট্যালেন্ট ভিসা।
২০২০-২১ সালে Business, Investment and Innovation Program এর আওতায় আসন সংখ্যা দ্বিগুন বেড়ে গিয়ে ১৩,৫০০ হয়েছে এবং গ্লোবাল ট্যালেন্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট প্রোগ্রাম এর আসন বরাদ্দ তিনগুন বেড়ে গিয়ে ১৫,০০০ হয়েছে। তবে চলতি বছর এই বরাদ্দে তারতম্য আসতে পারে।
দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান করতে বিনিয়োগ আর ব্যবসায় স্পনসর ভিসার সুবিধার্থে এই সংশোধন আনা হতে পারে।শেফ, একাউন্ট্যান্ট, ইঞ্জিনিয়ার, সফটওয়্যার প্রোগ্রামারসহ ২২টি পেশাকে প্রায়োরিটি মাইগ্রেশন স্কিল্ড অকুপেশন তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। উক্ত ক্ষেত্রে দক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশিদের আবেদন দ্রুত নিস্পত্তি হতে পারবে।
অতিমারির সংকটকালীন খাতে পর্যটন ও হসপিটালিটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। Source: Getty Images/Attila Csaszar
কোভিড-১৯ এর বিপর্যয় ঠেকাতে এখনকার ৪১টি পেশার অস্থায়ী তালিকাটি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তৈরি করা হয়েছিলো।
Work Visa Lawyers-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং অভিবাসন আইনজ্ঞ ক্রিস জনস্টন এর মতে, সরকারের নির্দিষ্ট সংখ্যক অভিবাসন আসলে মূলত অভিবাসী আনার প্লানিং লেভেল বা একটি পরিকল্পিত স্তরকে নির্দেশ করে, সেটা কোন সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা নয়।
কৃষি ফার্মে কর্মী সংকট পূরণ করতে ফেডারেল সরকার নতুন একটি এগ্রিকালচার ভিসার ঘোষণা দিয়েছে যা আসিয়ান অঞ্চলের ১০টি দেশের ক্ষেত্রে কাজ করবে।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলসহ দূরবর্তী এলাকায় ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি সেক্টরে কর্মরত ওয়ার্কিং হলিডে ভিসাধারীদের জন্য সরকারী নীতিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
২০২২ সালের মার্চ থেকে ৮৮ দিন কর্মবিরতি ছাড়াও তারা দ্বিতীয় বারের জন্য ওয়ার্কিং হলিডে মেকার ভিসা পাওয়ার যোগ্য হবেন।
অবশ্য ফ্যামিলি স্ট্রিম প্রোগ্রাম এর আওতায় আসন আগের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে অর্থাৎ ৭৭,৩০০ টি থাকবে বলে জানিয়েছেন ক্রিস জনস্টন।
অফশোর এপ্লিকেন্টদের অনশোর বা দেশে থেকেই ভিসা সুবিধা পাওয়ার ফলে পার্টনার ভিসা আবেদনকারীদের সময় বাঁচবে।
গত বছরের ফেডারেল বাজেটে ঘোষিত পার্টনার ভিসা পাথওয়েতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে তার ফলে ভিসা প্রসেসিং এর সময়সীমা বেড়ে যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন জুলি উইলিয়ামস কেননা চলমান নিয়মানুযায়ী স্পনসর ভিসার কোন বাঁধাধরা সময় সীমা আর থাকছে না।
ভিসা প্রসেসিং এর ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন এ বছরের নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।২০২০-২১ সালের ফেডারেল বাজেটের আরেকটি পরিবর্তন এই বছর নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। এবার থেকে দ্বিতীয় ধাপের পারমানেন্ট পার্টনার ভিসা এবং তাদের পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট স্পনসরদের ইংরেজী ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে হবে।
ফ্যামিলি ভিসা প্রার্থীরা এখানে থেকেই এখন ভিসা আবেদনের সাময়িক সুবিধা নিতে পারছেন। Source: Getty Images/Oliver Rossi
অন্যদিকে সরকার দেশে কর্মী সংকট কাটিয়ে উঠতে ৪০৮ কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক ইভেন্ট ভিসায় ইতোমধ্যে পরিবর্তন এনেছে।
এই ভিসায় ট্যুরিজম এবং হসপিটালিটি সেক্টর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যার ফলে এদেশে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থিরা উপকৃত হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জুলি উইলিয়ামস। কেননা যেসব শিক্ষার্থী ট্যুরিজুম ও হসপিটালিটি খাতে কাজ করছেন তারা এবার ৪০ ঘন্টার বেশি কাজ করতে পারবেন।
সরকার কৃষি খাতে কর্মরত Temporary Activity Visa Subclass 408 ভিসাধারীদের অধিক কাল ধরে দেশে থাকার সুযোগ করে দিয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে যে কর্মীর ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, উক্ত ভিসায় আগমনকারীরা তা পূরনে ভূমিকা পালন কতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন ক্রিস জনস্টন।
যেসব ৪০৮ ভিসাধারীরা ভিসার মেয়াদ পার হয়ে গেলেও দেশে অবস্থান করতে পারবেন যদি তারা দেখাতে পারেন যে তাদের কৃষিফার্মের কাজ চলমান রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কৃষি শিল্পে কর্মী সংকট প্রবল দেখা দিয়েছে যা সরকার উক্ত ভিসা সুবিধা দিয়ে পূরন করতে চাইছে।
করোনাভাইরাস অতিমারি কালে রিজিওনাল এলাকায় অবস্থানরত প্যাসিফিক অঞ্চলের কর্মীদের ভিসাও বাড়ানো হয়েছে,
জানিয়েছেন জুলি উইলিয়ামস।
তিনি বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত প্যাসিফিক কর্মীদের ভিসার মেয়াদ ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সুতরাং তারা অতিমারির এই সময়টাতে অস্ট্রেলিয়ার রিজিওনাল অঞ্চলে থাকতে ও কাজ করতে পারবেন।”
পয়লা জুলাই ২০২১ থেকে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বর্ধিত ফি দিতে হবে। citizenship by conferral বা সম্মেলনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব আবেদন ফি বেড়ে গিয়ে ২৮৫ ডলার থেকে ৪৯০ ডলার হয়েছে এবং জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আবেদনের ফি ২৩০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে ৩১৫ ডলার হয়েছে।
আগের মতই ১৫ বছর বা তার চেয়ে কমবয়সী শিশুর আবেদন বাবা-মার আবেদনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে, এবং তা বিনামূল্যে সম্পাদিত করা হবে কিন্তু স্বতন্ত্র আবেদন বা স্ট্যান্ড এলোন সিটিজেনশিপ এপ্লিকেশন এর ফি ১৮০ ডলার থেকে বেড়ে গিয়ে ৩০০ ডলার ধার্য করা হয়েছে।
২০১৬ সালের পর এই প্রথম নাগরিকত্ব আবেদনের ফি বৃদ্ধি হয়েছে বলেছেন, ইমিগ্রেশন মিনিস্টার এলেক্স হৌক।
এদিকে ২০২১-২২ সালের বাজেট অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারী থেকে যারা স্থায়ী বাসিন্দা হবেন- তাদের সরকারী কল্যান ভাতা লাভ করতে হলে আরও চার বছর অপেক্ষা করতে হবে।
এটা এই বাজেটের অন্যতম একটি হতাশাজনক দিক বলে মন্তব্য করেন মিস্টার ক্রিস জনস্টন।পুরো প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
১ জানুয়ারি ২০২২ এর পর থেকে যারা স্থায়ী বাসিন্দা হবেন তাদের সরকারী পারিতোষিক, ভাতা ইত্যাদি পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে। Source: Wendell Teodoro/Getty Images
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
এখানে যে তথ্য দেয়া হয়েছে তা অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন বিষয়ে সাধারণ তথ্য এবং নির্দিষ্ট কোন পরামর্শ নয়। কেউ যদি আরো প্রাসঙ্গিক এবং সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে চান তাহলে একজন রেজিস্টার্ড মাইগ্রেশন এজেন্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
আরো তথ্যের জন্য ভিজিট করুন: অস্ট্রেলিয়া গভর্নমেন্ট, ডিপার্টমেন্ট অফ হোম অ্যাফেয়ার্সঃ
ট্রান্সল্যাটিং এন্ড ইন্টারপ্রেটিং সার্ভিসের জন্য কল করুন131 450 এই নাম্বারে (২৪ ঘন্টা) এবং আপনি যে প্রতিষ্ঠানের সার্ভিসটি চান তা উল্লেখ করুন।
এসবিএস বাংলার রেডিও অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ফেইসবুক পেইজটি ভিজিট করুন।
আরো দেখুন: