বাঙালি উত্তরাধিকার ধরে রাখা
কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেলবোর্নে। বাবা ভিক্টোরিয়া রাজ্যের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক এবং মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হোসাইন চৌধুরী। ২০১৯ সালে “অর্ডার অফ অস্ট্রেলিয়া অ্যাওয়ার্ড (OAM)” পেয়েছেন। আর মা লায়লা চৌধুরী।
কিশোয়ার বলেন,
“আমি ছোটবেলা থেকেই রান্না করি। আমার বাবা-মা দু’জনেই খুবই ভাল রান্না করেন। আমার বাবা বিক্রমপুর, ঢাকা থেকে আর আমার মা কলকাতা বর্ধমান থেকে। আমার বাবা-মা দু’জনেই অনেক বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, ১৯৭০ এর দশকে।”
আমার স্বপ্নটা খুব ছোট ছিল। আমার বাচ্চাদের, আমার বন্ধুদের বাচ্চাদের, সবার জন্য একটা কুক বুক লিখে দেওয়া, যেটা আমাদের খাবার, আমাদের কালচার বা আমরা যেভাবে খাবার নিয়ে চিন্তা করি, এই জিনিসটা রেখে যেতে চেয়েছি।
“তখন থেকেই তাদের নিজেদের হেরিটেজ (উত্তরাধিকার) ধরে রাখার জন্য বা জাস্ট তাদের নিজেদের বাসার খাওয়ার (সংস্কৃতি) ধরে রাখার জন্য সবসময় আমরা বাসায় বাঙালি খাবারই খেতাম।”
প্রতিদিন আমরা একবেলার খাবার খেতাম, বাংলাদেশী খাবার। আমাদের বাবা-মায়ের হাতে রান্না করা, বলেন কিশোয়ার।
“কমপক্ষে এক বেলা। রাতের খাবার আমরা একসাথে বসে খেতাম। তো ওখান থেকেই আমি রান্না করতে শিখেছি। আর, নিজের জন্য যেগুলো রান্না করতাম, অনেক ধরনের মিস্টি, কেক, এই ধরনের জিনিস আমরা বেক করতাম। আর, যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় জন্মেছি, আমরা অনেক বৈচিত্রপূর্ণ খাবার খেতাম। যেটা হয় একটা বাইরের দেশে থাকলে।”
মা লায়লা চৌধুরী ও মেয়ের সঙ্গে কিশোয়ার চৌধুরী। Source: Network 10
গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- মুক্তিযোদ্ধা কামরুল হোসাইন চৌধুরী (OAM) এর মেয়ে কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা মেলবোর্নে।
- তিন পুরুষ ধরে কিশোয়ারদের পরিবার প্রিন্টিং ব্যবসায় নিয়োজিত।
- মাস্টারশেফে এই প্রথম বাঙালি রান্না নিয়ে এলেন কিশোয়ার।
মাস্টারশেফে অংশ নিলেন ছেলের উৎসাহে
মূলত ছেলের কথাতেই কিশোয়ার মাস্টারশেফে যোগ দেন। তবে, শুধু ছেলেই নয়, পরিচিত সবাই তাকে বলতো যে, তার রান্না ভাল। তিনি নিজেও জানতেন তিনি ভাল রান্না করেন, বলেন কিশোয়ার।
মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পেছনে কে বা কারা অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন, জিজ্ঞাসা করা হলে দুই সন্তানের জননী কিশোয়ার বলেন,
“আমার ছেলে আমাকে সবসময় বলতো যে, মা, তোমার এখানে যাওয়া উচিত। তুমি খুব ভাল রান্না কর। বিভিন্ন ধরনের অনেক কিছু রান্না কর। তুমি তো সবকিছু পার। তুমি চেষ্টা করো না কেন?”
আমার মনে হয় না দ্বিতীয় কোনো প্রতিযোগী এই প্লাটফর্মে একটা খাসির রেজালা রাঁধতে পারতো।
ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য কিছু একটা করতে চাওয়া
কিশোয়ারদের প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং এর পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে। এ নিয়ে তিনি খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন,
“আমার ছেলের ১১ বছর বয়স, এখন এ বছর ১২ হবে। তখন (গত বছর লকডাউনের সময়ে) আমার মনে হচ্ছিল যে, এই যে আমার বাবা-মা এতদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ায় আছেন, তারপর, তারা তাদের রান্না, ভাষা, খাবার, আর্ট, কালচার— এ জিনিসগুলো তারা সবসময় চেয়েছেন যে, আমরা এগুলো ধরে রাখি।”
তিনি বলেন, তার বাবা-মা এক্ষেত্রে সফল হয়েছেন।
“তারা আমাদের ক্ষেত্রে এটা পেরেছেন। কিন্তু, আমি এটা আমার নিজের বাচ্চাদের জন্য রেখে যেতে পারবো কিনা, ঐ জিনিসটা আমার কাছে খুব বড় ভাবে অনুভূত হয়েছে।”
কিশোয়ার বলেন, শুধু তিনি একা নন, তার বন্ধু-বান্ধবেরা যারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, তারাও এটা অনুভব করে থাকেন।
পরবর্তী প্রজন্ম সম্পর্কে তার মনে প্রশ্ন জাগে, “আমরা কি এটা তাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারবো?”রান্নার বই লিখতে চেয়েছিলেন কিশোয়ার
কিশোয়ার বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকেই রান্না করি। আমার বাবা-মা দু’জনেই খুবই ভাল রান্না করেন। আমার বাবা বিক্রমপুর, ঢাকা থেকে আর আমার মা কলকাতা বর্ধমান থেকে।" Source: Network 10
ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে বাঙালি উত্তরাধিকার পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে কিশোয়ার বলেন,
“সে কারণে আমার মনে হচ্ছিল যে, আমি এ রকম কিছু একটা রেখে যেতে চাই। যখন আমার বাচ্চারা বড় হবে, তখন তাদের সেই চয়েসটা যেন থাকে যে, হ্যাঁ, এটা আমার হেরিটেজ ছিল, এটা আমার নানা-নানী, দাদা-দাদীর হেরিটেজ। এই জিনিসটা যেন তারা পায় আমার কাছ থেকে। আর এটার জন্য আমি সবসময় একটা কুক বুক লিখতে চেয়েছিলাম। যেন আমার বন্ধুদের বাচ্চারাও, আমার নিজের বাচ্চারাও এটা ধরে রাখতে পারে আর গর্ববোধ করতে পারে যে, হ্যাঁ, এটা আমার কালচার।”
কিশোয়ারের স্বপ্ন একটি রান্নার বই লিখা।
“আমার স্বপ্নটা খুব ছোট ছিল। আমার বাচ্চাদের, আমার বন্ধুদের বাচ্চাদের, সবার জন্য একটা কুক বুক লিখে দেওয়া, যেটা আমাদের খাবার, আমাদের কালচার বা আমরা যেভাবে খাবার নিয়ে চিন্তা করি, এই জিনিসটা রেখে যেতে চেয়েছি।”
শুধুই কি বাঙালি রান্না?
কিশোয়ার বলেন, মাস্টারশেফ প্রতিযোগিতায় বিচারকগণ ও অন্যান্য প্রতিযোগীরা সকলেই বাঙালি কুইজিন নিয়ে অনেক কৌতুহলী ছিলেন।
“তারা এত ইন্টারেস্টেড ছিল জানার জন্য যে, বাঙালি ফুড আসলে কী? তারা আসলে কোনোদিন শুনে নি বা দেখে নি বা বুঝে নি যে, এটা কত ডিফারেন্ট, আমাদের ফুড প্রোফাইল।”
বাঙালি রান্না ছাড়া অন্যান্য রান্নাও তিনি ভাল জানেন, বলেন কিশোয়ার। তিনি আরও বলেন, এখন একটি প্রশ্নের উদয় হচ্ছে যে, কিশোয়ার কি কারি ছাড়া অন্য কিছুও রাঁধতে পারে?
“এখন একটা ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে যে, ‘ও, সে কারি ছাড়া অন্য কিছু রাঁধতে পারে কিনা’।”
আসলে নিজের ইচ্ছাতেই তিনি এখানে বাঙালি রান্না করেন।
“আমি খাসির রেজালা রান্না করবো না তো কে রান্না করবে এখানে?”
“আমার ইচ্ছা ছিল বাঙালি খাবার রাঁধতে। কারণ, আমি ছাড়া এই প্লাটফর্মে আর কেউ এই বিশেষ খাবার রাঁধতে পারে না। আর, এটা আমার মনের ইচ্ছা ছিল। এটার মানে (এটা) না যে, আমি অন্য কিছু রাঁধতে পারি না।”
কিশোয়ার আরও বলেন,
“আমার মনে হয় না দ্বিতীয় কোনো প্রতিযোগী এই প্লাটফর্মে একটা খাসির রেজালা রাঁধতে পারতো।”
মাস্টারশেফ সম্পর্কে তিনি বলেন,
“কিন্তু আমি মাস্টারশেফ-এ দেখলাম যে, It is very unique and it is very interesting.”
এই প্রতিযোগিতায় অংশে নেওয়া সম্পর্কে কিশোয়ার বলেন,
“It was my job and I did it and I absolutely loved it.”
মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া
চ্যানেল টেন-এর রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ত্রয়োদশ আসরের মূল পর্ব শুরু হয়েছে গত ২০ এপ্রিল ২০২১ থেকে।
কিশোয়ার চৌধুরীর সাক্ষাৎকারটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।