- অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ধরণের চাইল্ডকেয়ার পরিষেবার মধ্যে আছে ডে কেয়ার সেন্টার, ফ্যামিলি ডে কেয়ার, স্কুলঘন্টা বহির্ভূত সেবাকেন্দ্র, ইন-হোম কেয়ার এবং প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয়।
- ডে কেয়ার সেন্টার হোক বা স্বতন্ত্র কিন্ডারগার্টেন — যে কোন প্রাক প্রাথমিক স্কুলে অংশ নেওয়ার সময়ে শিশুর অভিন্ন পাঠক্রম অনুসরণ করা উচিৎ
- পরিবারের রোজগার আর কর্র্মঘন্টা বা পড়ালেখার সময় বিবেচনা করে ফেডারেল সরকার চাইল্ডকেয়ারের খরচে সহায়তা করে থাকে।
তিন সন্তানের মা সারাহ গার্ডিনার একজন ব্যবসায়ী। তার সাত বছর বয়সী এক ছেলে সহ সাড়ে চার বছরের এক কন্যা আর নয় মাসের এক শিশু আছে।
দ্বিতীয় আর তৃতীয় সন্তান জন্মদানের আট মাস সময় ছুটি নেওয়া ছাড়া গত ছয় বছর ধরে তিনি পুরোদমে কাজ করে আসছেন।
বিভিন্ন ধরণের চাইল্ড কেয়ার পরিষেবা এবং সুবিধাজনক কাজের সময় বা নমনীয় কর্মঘন্টা থাকার কারণে তিনি নির্বিঘ্নে কাজ করতে পেরেছেন। তিনি সব ধরণের চাইল্ডকেয়ার সেবা নিয়েছেন যেমন ফ্যামিলি ডে কেয়ার, 'কে ইউ ' প্রি-স্কুল ইত্যাদি।ডক্টর রস ব্যাক্সটার ডিপার্টমেন্ট অফ এডুকেশন, স্কিলস এন্ড এমপ্লয়মেন্ট এর অন্যতম বিভাগ প্রারম্ভিক শৈশব ও শিশু সেবার (Early Childhood and Child Care Group) এর ডেপুটি সেক্রেটারির দায়িত্বে আছেন।
Girl in red dress playing with wooden blocks Source: Cottonbro/Pexels
তিনি জানান, অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের চাইল্ড কেয়ার পরিষেবা আছে।
চাইল্ড কেয়ার সেন্টার বা দিবাযত্ন কেন্দ্র (ডে কেয়ার সেন্টার) তার মধ্যে অন্যতম।
ডে কেয়ার সেন্টার ছাড়াও আপনার সন্তানদের ফ্যামিলি ডে কেয়ারে রাখতে পারেন।
ফ্যামিলি ডে কেয়ারে সেবাদাত্রী বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজ বাসায় শিশুর যত্ন নিয়ে থাকেন।
স্কুলঘন্টার বাইরে শিশুদের দেখাশোনা করার জন্য আছে আউটসাইড স্কুল আওয়ারস কেয়ার। স্কুলের সময়ের আগে বা পরে আপনার সন্তানদের এইসব সেবাকেন্দ্রে রাখতে পারেন।
সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে নয়টা, বিকাল তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা এবং স্কুল বন্ধের সময়ে এখানে শিশুদের রাখা যায়।
যেসব স্থানে এধরনের সেবাকেন্দ্র নেই, সেখানে 'ইন হোম কেয়ার' নেয়া যায়। এক্ষেত্রে শিক্ষিকা বা সেবাদাত্রী শিশুটির বাসায় এসে তার দেখাশোনা করেন।
বাসা দূরে হবার কারণে যারা উপরোক্ত বিভিন্ন ধরনের চাইল্ড কেয়ার সেবা নিতে পারছেন না
তাদের জন্য ইন হোম কেয়ার উপযুক্ত হতে পারে।
ভৌগোলিক দূরত্ব ছাড়াও যাদের অন্যান্য জটিলতা আছে যেমন সাধারণ কর্মঘন্টার বাইরে কাজ — তারা গৃহস্থ সেবা নেওয়ার কথা ভাবতে পারেন।পঞ্চম প্রকারটি হচ্ছে প্রি-স্কুল বা প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়। ডক্টর ব্যাক্সটার বলেন,
colouring art with crayons Source: Pixabay
বিভিন্ন স্টেট বা স্থানভেদে এইধরনের প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন নামে দেখা যায়।
কোথাও একে কিন্ডার বলা হয়, কোথাও বা প্রি স্কুল। সরকার এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে।
তিনি আর বলেন যে, প্রি স্কুল ছাড়া বাকি সব ধরনের চাইল্ড কেয়ার ব্যক্তিবিশেষ ও পারিবারিক প্রয়োজনানুরূপ হয়ে থাকে।
মিসেস গার্ডিনারের বাচ্চারা যখন বাড়ন্ত বয়সের ছিল তখন ডে কেয়ার সেবা তার অনেক কাজে লেগেছে। তিনি যেখানে থাকতেন সেখানে তার দুবছরের বাচ্চাকেদিনভর রাখার মত ডেকেয়ার সেন্টার ছিল না। তখন তিনি ফ্যামিলি ডে কেয়ার সেবা নিয়েছিলেন।
বড় দুই সন্তানের বয়স দু বছর পূর্ণ হবার পর তাদের তিনি দীর্ঘ সময়ের জন্য ডে কেয়ারে রেখে আসতেন। বয়স সাড়ে তিন বছর হবার পর তিন দিন প্রি-স্কুল আর বাকি কিছু দিন সেন্টারে রাখা হতো।
স্কুলে ভর্তির আগে প্রাক প্রাথমিক স্কুলে যাওয়ার ফলে তাদের হাতে খড়ির পর্ব সম্পন্ন হয়।
প্রি-স্কুলে নিয়মিত অংশ নেওয়ার ফলে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার অভ্যাস ও প্রস্তুতি সম্পন্ন হয় বলে মনে করেন মিসেস গার্ডিনার।কে ইউ একটি অলাভজনক সংস্থা যারা গোটা অস্ট্রেলিয়ার ১৫০ টি শাখার মাধ্যমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা সহ চাইল্ডকেয়ার সেবা দিয়ে থাকে। সারাহ গার্ডিনারের সন্তান এরকম একটি কে ইউ পরিচালিত স্কুলে অংশ নিয়েছিল।
Source: Helena Lopes/Pexels
ডক্টর ব্যাক্সটার এর মতে শিশু শিক্ষায় প্রি-স্কুল, ডে কেয়ার, স্বতন্ত্র কিন্ডারগার্টেন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান নির্বিশেষে একই কারিকুলাম অনুসরণ করা উচিত।
মিসেস গার্ডিনার এর ক্ষেত্রে ডে কেয়ারের চাইতে প্রি-স্কুল কম খরচের ছিল। বিভিন্ন কারণে চাইল্ড কেয়ার সেবা ব্যয়বহুল হয়ে থাকে।
ডক্টর ব্যাক্সটার এর মতে, রাজ্য সরকার ও কমনওয়েলথ সরকার
শিশুর বেড়ে উঠায় এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনা করে পর্যাপ্ত ভর্তুকি দিয়ে থাকে।
অন্যদিকে ডে কেয়ার সেন্টারে শিশুকে ১০-১২ ঘন্টা রাখতে হয়, শুধু তাই নয়,
সেখানে শিশুর সার্বিক আয়োজন, যেমন খাবারের ব্যবস্থাটাও থাকতে হয় বলে তা ব্যয়বহুল।
স্বল্প আয়ের পরিবারদের ক্ষেত্রে সরকারী বরাদ্দের পরিমান বেশি। বরাদ্দের পরিমান নিয়ে ডক্টর ব্যাক্সটার ব্যাখ্যা করে বলেন,
আপনি যদি বছরে অনধিক ৭০ হাজার ডলার আয় করেন, তবে আপনি সর্বোচ্চ ভর্তুকি পেতে পারেন। এটা মোট খরচের প্রায় ৮৫ শতাংশ হয়ে থাকে অর্থাৎ, ডে কেয়ার সেন্টারে যদি আপনার ১০ ডলার খরচ পড়ে, আমরা তার ৮৫ ভাগ খরচ দেবো বা ঘণ্টায় ৮.৫ ডলার দেবো। কিন্তু আপনি যদি সর্বোচ্চ পর্যায়ের আয় করেন সেক্ষেত্রে সরকারী বরাদ্দ মাত্র ৩০ শতাংশ হবে।
Source: Getty Images/Lyn Walkerden Photography
এক্টিভিটি টেস্ট একটি সমন্বিত পরীক্ষা যাতে শিশুর বহুমুখী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়াকে বিবেচনায় আনা হয় যেমন পড়ালেখা, স্বেচ্ছাশ্রম, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কাজ।
আপনার সন্তানকে কাংক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে হলে আর বিলম্ব করবেন না।
কেননা কোন কোন প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অপেক্ষমান তালিকা দুই বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সরকারী চাইল্ড কেয়ার সুবিধা পেতে হলে বাবা মা বা অভিবাবকের জীবনসঙ্গীকে
অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা কিংবা উপযুক্ত ভিসা থাকতে হবে
যেমন- বিশেষ ক্যাটেগরি ভিসা অথবা অস্থায়ী প্রোটেকশন ভিসা।
প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।
এ বিষয়ে আরও জানতে দেখুনঃ
আরও দেখুন: