বিশ্বের কয়েকটি খ্যাতনামা ব্যাংকের পদ্ধতিগত জালিয়াতির প্রমান সহ বড় ধরণের দলিলাদি ফাঁস হয়েছে। ১৬ বছরের তদন্তের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারী থেকে উচ্চ শ্রেণিভুক্ত একাধিক নথি প্রকাশ করা হয়।এতে প্রায় ২০ বছর সময় কালে ২.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য দুর্নীতিগ্রস্ত লেনদেনের বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছিল।
জেপি মরগান, এইচএসবিসি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডয়চে ব্যাংক, বার্কলে এবং নিউইয়র্ক মেলন সহ বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংকগুলির বিরুদ্ধে অপরাধী নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে অবৈধ নগদ অর্থ সরানোর অভিযোগ উঠেছে - তাদের মধ্যে কয়েকজন অত্যন্ত প্রভাবশালী।
উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্ষমতাধর গোষ্ঠী যারা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাবেক সহযোগী পল ম্যানাফোর্টের সাথে যুক্ত ছিলেন।
কেন গাম্বল একজন বেসরকারী তদন্তকারী, যার তদন্ত সংস্থা বেশ কয়েজন ক্লায়েন্টের পক্ষে কাজ করছে -যারা দাবি করে যে তাদের স্ক্যাম করা হয়েছিল। "ব্যাংকগুলির পক্ষে এমন একটি অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়েছে যা অর্থ পাচারের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। এবং যখন তারা অপরাধমূলক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত অ্যাকাউন্টটি সনাক্ত করে, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।
দুই হাজারেরও বেশি ফিনসেন ফাইল যা বাজফিড (Buzzfeed) এর হাতে আসে এবং ৮৮ টি দেশের ১০০ টিরও বেশি সংবাদ সংস্থা যাদের তদন্তকারী সাংবাদিকরা আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে যুক্ত হয়ে এটি তদন্ত করে। ওই ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেশনাল জার্নালিস্টস প্রকল্প পরিচালক, ফার্গুস শীল বলেন
এটি এমন একটি নজিরবিহীন তথ্য ফাঁস হয়েছে , যা আমাদের আগে কখনও বলেনি এই সন্দেহজনক অর্থ সম্পর্কে ব্যাংকগুলি কী জানে।
ডয়চে ব্যাংক এবং জেপি মরগানএর মাধ্যমে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সতর্ক করার পরও তাদের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক ক্রিয়াকলাপ থেকে লাভবান হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যকেও মানি লন্ডারিং হাব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বৃহত্তম ব্যাংক, এইচএসবিসি যাদের বিরুদ্ধে ধনী ধোকাবাজদের বিদেশে চুরি করা নগদ অর্থ স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে - এবং কেলেঙ্কারির কথা জানালেও তারা কিছুই করেনি।
জুলিয়ো রামোস, জালিয়াতির শিকার ব্যক্তিদের আইনজীবী। তিনি বলেন "সুতরাং তাদের কাছে তথ্য ছিল, তারা এ নিয়ে চুপ ছিল জালিয়াতি সম্পর্কে জানত এবং এ সম্পর্কে কিছুই করেনি।ডোজিয়ারের কাছে ১১৪ টি সন্দেহজনক কার্যকালাপের প্রতিবেদন রয়েছে, এর মধ্যে ৫৭ টি অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তি এবং সংস্থার সাথে সম্পর্কিত।
কেন গ্যাম্বেল বলেন যে অস্ট্রেলিয়া যাদের অন্যতম দেশ হিসাবে চিহিন্ত।
ব্যাংকগুলি নিয়মাবলী উন্নত করা এবং সন্দেহজনক আচরণ বন্ধ করার জন্য সাম্প্রতিক প্রচেষ্টার বিষয়ে কথা বলছে। এইচএসবিসি এক বিবৃতিতে বলেছে যে ৬০ টিরও বেশি ক্ষেত্রে আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দক্ষতা বাড়াতে ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি যাত্রা শুরু করেছে।যদিও জেপি মরগান বলেছেন যে তারা মানি লন্ডারিং বিরোধী সংস্কারে নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছে ... কয়েক হাজার মানুষ এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার এর জন্য নিবেদিত হচ্ছে।
ডয়চে ব্যাংক বলেছে যে ইস্যুগুলি ইতিমধ্যে তদন্ত করা হয়েছে এবং নিয়ন্ত্রক রেজোলিউশনের দিকে পরিচালিত করেছে যাতে ব্যাংকের সহযোগিতা এবং প্রতিকারটিকে জনসাধারণ কর্তৃক স্বীকৃত হয় । অস্ট্রেলিয়ার ব্যাঙ্কিং অ্যাসোসিয়েশন বলেছে: "কোনও অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক জেনেশুনে কোনও ফৌজদারি লেনদেন করবে না।ব্যাংকগুলো তাদের নজরদারি এবং রিপোর্টিংয়ের ক্ষমতা উন্নত করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।"
ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে একটি যৌথ টাস্কফোর্সের জন্য এখন দুর্নীতি দমন গ্রূপগুলি থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটির পরিচালক জেফ্রি ওয়াটসন বলেন। এটি এই গ্রহের একক বৃহত্তম অপরাধ, এই ধরণের দুর্নীতি ছাড়া আন্তর্জাতিক ড্রাগের ও মাদকের ব্যবসা থাকতে পারে না।