আনন্দ ও উৎসবমুখরতার মধ্য দিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় পালিত হল বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু উৎসব

Boishabi Festival 2

উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। Source: Susnat Chakma

মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রকোপ কাটিয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনার ভেতর দিয়ে আগের দুই বছরের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় এই বছর আরও বড় করে আয়োজিত হল নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রাণের এই উৎসব।


অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্য ও শহরে বসবাসরত পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী প্রতি বছরের মত এ বছরেও এপ্রিল মাসের বিভিন্ন দিনে পালন করেছেন বৈসু, সাংগ্রাই ও বিঝু উৎসব।

পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর এই উৎসবটিকে অনেকে বৈসাবি নামেও ডাকেন।

বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি আদিবাসী সম্প্রদায় ত্রিপুরা, মারমা, এবং চাকমাদের অন্যতম প্রধান উৎসব বৈসু থেকে বৈ, সাংগ্রাই এর সা এবং বিঝু থেকে বি মিলিয়ে বৈসাবি নামের উৎপত্তি।
ভিক্টোরিয়ার অধিবাসী প্রবীণ খীসা তাতু অবশ্য মনে করেন বৈসাবি নামটি আসলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই উৎসবকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিনিধিত্ব করে না। তিনি মনে করেন, তার বদলে বরং উৎসবের আদি নামগুলোতে এটিকে সম্বোধন করাই শ্রেয়।

তবে সম্মিলিতভাবে অথবা আলাদা করে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, উৎসবের আমেজ ও আনন্দ আসলে অভিন্ন।
Boishabi Festival
উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। Source: Susnat Chakma
ডারউইনে বসবাসরত সন্তোষ ত্রিপুরা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে থাকাকালীন এই উৎসবের আবহ যেভাবে অনুভব করা যায়, প্রবাসে এসে হয়ত ঠিক সেরকমটা সবসময় পাওয়া যায় না।

তাঁর মতে, এখানকার উদযাপন অনেকটাই প্রতীকি হয়ে থাকে। যার কারণ মূলত, এক শহরে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অনেক মানুষ না থাকা।

তিনি বলেন, গত বছরগুলোয় কোভিড-১৯ এর প্রকোপ এবং নানা বিধিনিষেধ থাকার কারণে এই উৎসবের উদযাপন তেমন করে না হলেও, এ বছরে অন্য শহর থেকে তাঁর আত্মীয়েরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে এসেছিলেন।

তাই, ছোট করে উদযাপিত হলেও নতুন প্রজন্ম এই আনন্দটুকু দেখার ও উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছে। দুই প্রজন্মের মানুষদের কাছেই যেটি অনেক আনন্দের একটা ব্যাপার।
এদিকে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের লিসমোর শহরে বৈসাবি উৎসবের কিছুদিন আগেই পরপর দুইবার হয়ে গেল ভয়াবহ বন্যা। পুরো শহর পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল তখন।

সেই অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে সেখানকার অধিবাসী ডলিপ্রু মারমা বলেন, পুরো লিসমোর শহর প্রায় ১৫ মিটার পানির নিচে ডুবে গিয়েছিল।

সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি হল যখন ঠিক এক সপ্তাহ পরেই দ্বিতীয়বার আবার বন্যা হল।

তবে বৈসাবির আগমন বন্যার দুঃখ ধীরে ধীরে অনেকটা লাঘব করেছে। উৎসবের আগমন মনে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে। উৎসবের রীতি নিয়ে ডলিপ্রু মারমা জানিয়েছেন, সাংগ্রাই যেহেতু একটি উৎসব আর উৎসব মানেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশী, সবাই মিলে একত্র হওয়া।

যদিও কোভিড পরিস্থিতি, বন্যা, সব মিলিয়ে একদম মনের মত উৎসব পালন করা হয়নি, তবু তাঁরা চেষ্টা করেছেন আনন্দের সাথে এটি উদযাপনের।

লিসমোরে ১৪ এপ্রিল সাংগ্রাই উৎসব পালিত হয়েছে।

ডলিপ্রু মারমা বলেছেন, "প্রতিবছর আমি পাঁচন অবশ্যই রান্না করি- যেটাকে খাগড়াছড়ির মারমারা বলে ফাসং। এই বছর বিশেষ করে আমি কলা পাতা দিয়ে বিন্নি চালের গুড়ি দিয়ে পিঠা বানিয়েছিলাম। তো সব মিলিয়ে ভালই লেগেছে।"
Food for the festival
উৎসবের আয়োজনে তৈরিকৃত পিঠা ও পাঁচন। Source: Doli Pru Marma
এদিকে ভিক্টোরিয়া রাজ্যে এ বছরে বেশ বড় করে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবীণ খীসা তাতু।

কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধের কারণে গত দুই বছর পালন করা না গেলেও এই বছর ভিক্টোরিয়ায় বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা পরিবার নিয়ে দুই দিন ব্যাপী এই উৎসব পালন করেন।

রাজ্যের একটি ক্যাম্পিং এলাকায় প্রায় আশি জন মিলে একসাথে রান্না, গান করা ও খাওয়া দাওয়াসহ অনেক আনন্দ-আয়োজন করা হয়েছিল।

তরুণ প্রজন্মের অনেকে ও বহুসংখ্যক ছাত্রছাত্রীরা এই উৎসবে শুধু অংশগ্রহণ করেছেন এমনটাই নয়, এর আয়োজনেও তারা অনেক অবদান রেখেছেন বলে জানিয়েছেন প্রবীণ খীসা তাতু।

নতুনদের এই সক্রিয় অংশগ্রহণ ভবিষ্যতের জন্যে আশাব্যাঞ্জক বলে জানিয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, সব মিলিয়ে মনে রাখার মত অসাধারণ একটি উৎসব হয়েছে এই বছর।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন। 


এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।

রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন:  

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share