রাজশ্রী প্যাটেল এবং তার ছেলে নেভান শেষবারের মতো অস্ট্রেলিয়ায় ছিলেন জুলাই ২০১৯ সালে।
বাচ্চাটিকে তার দাদা-দাদির সাথে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কিছুদিন আগেই তিনি নার্সিংয়ের স্নাতক শেষ করেছিলেন।
এর ১৮ মাস পরে, তিন বছর বয়সী এবং তার মা বর্ডার বন্ধের কারণে পৃথক হয়ে গেলো ।
মিজ প্যাটেল এসবিএস নিউজকে বলেন, "আমার মনে হচ্ছে কেউ যেন আমার শরীরের অঙ্গ সরিয়ে নিয়েছে।"৩১ বছরের রাজশ্রী আট বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন, এবং তিনি ২০১৮ সালে নাগরিক হয়েছিলেন এবং গত ছয় মাস ধরে সিডনির একটি কোভিড - ১৯ টেস্টিং ক্লিনিকে কাজ করছেন।
Rajshree Patel with her son Neevan. Source: Supplied/Rajshree Patel
তিনি সিঙ্গেল মা, এবং তার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা রয়েছে, তিনি তার মা এবং বাবার মাধ্যমে তার ছেলেকে অস্ট্রেলিয়ায় আনার জন্য ভ্রমণ ছাড়ের জন্য তিনবার আবেদন করেছিলেন, কিন্তু তার আবেদন অগ্রাহ্য হয়েছে।
নেভান অস্ট্রেলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক তবে একা ভ্রমণের মতো বয়স হয়নি। তবে দেশের কোভিড -১৯ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতায় কেবলমাত্র একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দাদের 'নিকটতম পরিবারের সদস্য' হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের অনুমতি রয়েছে।'নিকটতম পরিবার' বিধি অনুসারে স্বামী বা স্ত্রী, দি ফ্যাক্টো পার্টনার, নির্ভরশীল শিশু বা আইনী অভিভাবকদের বোঝায়। পিতামাতাদের এখানে 'নিকটতম পরিবার' হিসেবে গণ্য করা হয় না।
"এটা আমার হৃদয় আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার মতো," মিসেস প্যাটেল বলেন।
তার সাম্প্রতিক আবেদনে, তার মায়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় ভ্রমণের আবেদন অনুমোদিত হয়েছিল, তবে তার বাবার জন্য নয়। মিজ প্যাটেল বলেছেন যে তিনি তার বাবা-মাকে আলাদা করতে চান না।
তিনি ভারতে যাওয়ার কথাও বিবেচনা করেছিলেন কিন্তু তিনি আরও হাজার হাজার অস্ট্রেলিয়ানদের মত যারা ফিরে আসতে পারছে না, তাদের মত বিদেশে আটকে থাকতে চান না, তাই সেই দলে যোগ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চান না।
"আমি যদি ফিরে যাই তবে এখানে কে বাড়ি ভাড়া দেবে? আমি যদি সেখানে ছয় মাস, চার মাস ধরে আটকে থাকি তবে আমাকে সবকিছু বিক্রি করতে হবে, আমি আমার চাকরি হারাব," তিনি বলেছিলেন।
পারিবারিক আবেদন খারিজ করা হয়েছে
অনেক পরিবারই মিজ প্যাটেলের মত একই পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং তাদের 'নিকটতম পরিবার সদস্য' বিধি পরিবর্তন করার একটি সংসদীয় আবেদনে ১১,০০০ এর বেশি লোক স্বাক্ষর করেছিল। এটি নভেম্বরে লিবারেল সাংসদ সিলিয়া হ্যামন্ড ফেডারেল পার্লামেন্টে উপস্থাপন করেছিলেন।
মঙ্গলবার আবেদনটি বন্ধ হওয়ার ৯০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। সেদিন এ বিষয়ে হোম মিনিস্টার পিটার ডাটনকে প্রতিক্রিয়া জানাতে বলা হয়েছিল, কিন্তু যদিও তা বাধ্য করা হয়নি।এসবিএস নিউজের সাথে যোগাযোগ করা হলে হোম অ্যাফেয়ার্স -এর একজন মুখপাত্র এসবিএস নিউজকে বলেন, এই বিধির বিষয়ে সরকার তাদের ভূমিকায় দৃঢ় অবস্থানে।
A parliamentary petition to change the rules attracted more than 11,000 signatures. Source: Parents are Immediate Family campaign
"সরকার পুনরায় একত্রিত হতে চাওয়া পরিবারগুলোর অসুবিধা স্বীকার করে, তবে বর্তমানে ভ্রমণের ছাড়ের লক্ষ্যে বাবামায়েদের নিকটতম পরিবার সদস্য সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করার কোনও পরিকল্পনা নেই," মুখপাত্র বলেন।
হোম অ্যাফেয়ার্স গত সপ্তাহে পিটিশনস কমিটির কাছে মিঃ ডাটনের উত্তর জানিয়েছিল, মুখপাত্র জানান।
এসবিএস নিউজ ধারণা করছে যে প্রতিক্রিয়াটি ২২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অফ রেপ্রেজেন্টেটিভে উপস্থাপিত হবে।
'অভিবাসী সম্প্রদায়ের কথা শোনা দরকার'
পরিবর্তনের জন্য প্রচার চালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে অন্যতম হলেন ৪২ বছরের রোয়া সালামতি। গত বছর ইরানে কোভিড -১৯-এ তাঁর বাবা মারা গেছেন।
এই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকের ৬৭ বছর বয়সী মা যিনি এখন নিজে ইরানে একা রয়েছেন, তিনি তাকে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে আসার জন্য ভ্রমণ ছাড়ের আবেদন করেছিলেন, তবে তার আবেদন দুবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।"অভিবাসী সম্প্রদায়ের বক্তব্য শোনা খুব গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা এই বিচ্ছেদের কারণে অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন," মিজ সালামতি বলেন।
Roya Salamati wants to bring her widowed mum to Australia. Source: Supplied/Roya Salamati
ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স ওয়েবসাইট থেকে বলা হয়েছে "অস্ট্রেলিয়ান জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়ার কঠোর সীমান্ত ব্যবস্থা রয়েছে।"
তবে লেবার এমপি জুলিয়ান হিল বলেছেন পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল নয়।তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী যদি গত বছর তার নেতৃত্বে উদ্যোগ নিতেন এবং তার কাজটি যথাযথভাবে সম্পাদন করতেন এবং কোয়ারেন্টিনের দায়িত্ব নিতেন তবে আমরা এই গোলযোগের মধ্যে থাকতাম না, এবং আমরা এত দিন এত নিষ্ঠুরভাবে এই পরিবারগুলিকে আলাদা হতে দেখতাম না" তিনি বলেন।
Nevaan remains in India. Source: Supplied/Rajshree Patel
মিজ প্যাটেল, মিজ সালামতি এবং আরও অনেকে পরিবর্তনের পক্ষে তদবির করছেন এবং তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।
আরো দেখুন: