ট্রেজারার যশ ফ্রিইডেনবার্গ গতকাল মঙ্গলবার ১১ মে ফেডারেল বাজেট ঘোষণা করেছেন, এই প্রতিবেদনে অভিবাসন সম্পর্কে এবারের বাজেটে কি আছে তা তুলে ধরা হলো।
মূল বিষয়গুলো
- ২০২২ সালের মধ্যভাগ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার বন্ধ থাকতে পারে।
- অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন পরিকল্পনায় কোন পরিবর্তন নেই।
- অস্ট্রেলিয়ার নেট ওভারসিস মাইগ্রেশন ২০২০-২১ অর্থবছরেও ঋণাত্মক থাকবে।
এবারের বাজেটে দেখা যাচ্ছে ২০২২ সালে ইন্টারন্যাশনাল বর্ডার খুললেও অভিবাসনের সংখ্যা বাড়বে না। যদিও জনমিতির পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে নেট ওভারসিস মাইগ্রেশন দ্বিতীয় বছরের মত ঋণাত্মক থাকবে।
২০২১-২২ অর্থবছরেও অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন ক্যাপ বা ধার্য্যকৃত সংখ্যা ১৬০,০০০-এ সীমিত থাকবে। কারণ সরকার অন-শোর বা দেশের ভেতর থেকে আবেদন এবং পার্টনার ভিসার ব্যাকলগ বা জমে থাকা আবেদনগুলো নিস্পত্তি করতে চায়, এজন্য তারা আগামী চার বছরে খরচ করবে ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
ফ্যামিলি এবং স্কীলড ভিসার সংখ্যা ২০২০-২১ বছরের পর্যায়ে থাকবে, একই সাথে পরিবর্তন হচ্ছে না হিউম্যানিটেরিয়ান প্রোগ্রামের ক্যাপ যা এ বছরেও ১৩,৭৫০টিই থাকবে।
গত বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমবারের মত নেট ওভারসিস মাইগ্রেশন ঋণাত্মক স্তরে নেমে গিয়েছিলো, কারণ মূলত ব্যাপক পর্যায়ে কোভিড ১৯ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং বর্ডার বন্ধ থাকা। হিসেবে দেখা যায় মহামারী-পূর্ব স্তরে আসতে অন্তত আরো দুই বছর লাগবে।
ট্রেজারার হিসেবে যশ ফ্রিইডেনবার্গ তৃতীয়বারের মত বাজেট উপস্থাপন করলেন। তিনি এতে প্রকাশ করেছেন যে ২০২২ সালের মধ্যভাগ থেকে পার্মানেন্ট এবং টেম্পোরারি রেসিডেন্টরা ধীরে ধীরে ফিরবে। তবে এই সময়সীমা তা আগের বছরের বাজেটের অনুমানের চেয়ে ছয় মাস পর হচ্ছে।
মি: ফ্রিইডেনবার্গ এর আগে এসবিএস নিউজকে বলেছিলেন এই বছরের শেষ হবার আগে ট্রাভেল ব্যান উঠবে না, তখন তিনি ২০২২ সালের কোন সময়ে বর্ডার খুলবে তার কোন সময় বলেননি।
মিঃ ফ্রিইডেনবার্গ ক্যানবেরাতে সাংবাদিকদের বলেন, "মহামারীর এই সময়ে আগে থেকেই অনুমান করা কঠিন কাজ, এখানে সুনির্দিষ্টি করে কিছু বলা যায় না।"তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাজেটের একটা টাইমলাইন থাকে, তার মানে সরকার কাদের জন্য বর্ডার খুলতে সিদ্ধান্ত নেবে সেটি তা বোঝায় না।
Australian government expects international border will open in mid-2022 (File image) Source: AAP
২০২১ সালের শেষ দিকে সরকার বাজেটে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় ফিরিয়ে আনার জন্য কিছু ধাপের পরিকল্পনা করছে।
ফাইন্যান্স মিনিস্টার সাইমন বার্মিংহাম বলেন, "সরকার যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক বর্ডার খুলতে চায়, কিন্তু তার আগে এটি করা নিরাপদ কিনা দেখতে হবে।"
আন্তর্জাতিক বর্ডার খোলায় বিলম্ব হলে নেট ওভারসিস মাইগ্রেশন আগে যেমন প্রত্যাশা করা হয়েছিল তার চেয়ে কম হবে। সেই বিবেচনায় ধারণা করা হচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরে অভিবাসন সংখ্যা প্রায় ৭৭,০০০ কম হবে।
নেট ওভারসিস মাইগ্রেশন পরিমাপ করা হয় কতজন মানুষ অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করে এবং ১২ মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করে, এবং একই সময়ে কতজন মানুষ দেশ ত্যাগ করে।
অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা বৃদ্ধির দুই-তৃতীয়াংশ ওভারসিস মাইগ্রেশনের মাধ্যমে ঘটে। কিন্তু বাজেটে দেখা যাচ্ছে ২০২২-২৩ সালের আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ধনাত্মক হার বাড়বে না।
ওভারসিস মাইগ্রেশন মহামারী-পূর্ব স্তরে ছিল বছরে প্রায় ২০০,০০০ এবং এই পর্যায়ে পৌঁছতে আরো এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।
মহামারীর শুরুতে শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়ান সিটিজেন এবং পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট ও তাদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের ছাড়া বাকিদের জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় সমালোচনার প্রেক্ষিতে সরকার এর আগে প্রত্যাশা করেছিল ২০২১ সালের শেষ দিকে তারা বর্ডার খুলতে পারবে।
বিশেষজ্ঞরা এর আগে বলেছিলেন অধিকাংশ অস্ট্রেলিয়ান কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন না পাওয়া পর্যন্ত বর্ডার খুলতে পারবে না।
বাজেট থেকে একটি বড় ধারণা পাওয়া গেছে যে সমগ্র জনগণের জন্য ভ্যাকসিন কর্মসূচী ২০২১ সালের শেষে গিয়ে গড়াবে।
সি-ই-ডি-এ অর্থনীতিবিদ গাব্রিয়েলা ডি সুজা গত সপ্তাহে এসবিএস নিউজকে বলেছিলেন, "বাস্তবে পূর্ণ ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচী এবং নিরাপদ কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা না থাকলে আমরা হয়তো পর্যাপ্ত মাইগ্রেশন লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো না।"
তিনি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে অভিবাসীদের গুরুত্বের কথাও উল্লেখ করে বলেছিলেন,"অভিবাসীরা সাধারণত তরুণ হয়ে থাকে, তারা দীর্ঘ সময় কর্মক্ষম থাকে, তাই তারা রাজস্ব আয়ে অবদান রাখে, এবং তারা যা পেমেন্ট হিসেবে পায়, সেটা অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।"
মঙ্গলবার ঘোষিত বাজেটে দেখা যায় এই অর্থবছরে ঘাটতি হবে ১৬১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের পূর্বাভাসের চেয়ে ৫২.৭ বিলিয়ন ডলার কম।
শুনুন প্রতি সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় এবং আরও খবরের জন্য আমাদের ভিজিট করুন।
আরো দেখুন: