নিজের অধিকার সম্পর্কে জানার জন্য অস্ট্রেলিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা (রাইটস গ্রুপস)। কারণ, সোশাল ডিস্টেন্সিং বা জন-দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে এবং নতুন নিয়ম ঘোষণা করা হয়েছে যেখানে জরিমানা ও শাস্তির বিধান রেখেছে কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশেষ প্রয়োজন না হলে ঘর ছেড়ে বের না হতে। অর্থাৎ, (ঘর থেকে সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে) কর্মক্ষেত্রে কিংবা স্কুলে যাওয়া, প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পণ্য-দ্রব্য ক্রয় করা, চিকিৎসা কিংবা ব্যায়ামের জন্য ছাড়া অন্য কোনো মামুলি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না।
গত মঙ্গলবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুসারে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ইনডোর এবং আউটডোর গ্যাদারিং বা লোক-সমাগমের ক্ষেত্রে দু’জনের বেশি একসঙ্গে হওয়া বা একত্রিত হওয়া যাবে না।নতুন আইনগুলো কীভাবে প্রয়োগ করা হবে?
রাজ্যের এখতিয়ারের মধ্যে এসব আইন ভঙ্গ করা হলে আর্থিক জরিমানা করবে পুলিশ। এসব আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভয় পাবে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুধুমাত্র নিউ সাউথ ওয়েলসেই “যৌক্তিক কারণ” ছাড়া যারা ঘর থেকে বের হবেন তাদেরকে ছয় মাসের জেল কিংবা অন-দ্য-স্পট (ঘটনাস্থলে) ১১,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।
অন্যান্য রাজ্যগুলো নিম্নলিখিত জরিমানা করবে বলে জানিয়েছে:
- ভিক্টোরিয়া: ১,৬০০ ডলার বা তারও বেশি জরিমানা
- সাউথ অস্ট্রেলিয়া: জাতীয় নির্দেশনা প্রয়োগ করবে না পুলিশ
- এসিটি: প্রথমে সতর্ক করা হবে, পরে ৮,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে
- কুইন্সল্যান্ড: ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১,৩৩০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা
- ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া: ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১,০০০ ডলার পর্যন্ত জরিমানা
- নর্দার্ন টেরিটোরি: জাতীয় নির্দেশনা প্রয়োগ করবে না পুলিশ
- তাসমানিয়া: জরিমানা করতে পারবে
নিউ সাউথ ওয়েলস কাউন্সিল অফ সিভিল লিবার্টিজ-এর মুখপাত্র স্টেফান ব্ল্যাঙ্কস এসবিএস নিউজকে বলেন, যে-সব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, মানুষের স্বাধীনতার উপরে এগুলোর “অত্যন্ত গুরুতর প্রভাব” পড়বে এবং পুলিশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন ঘটবে।
তিনি বলেন,
“যেভাবে তারা এসব প্রয়োগ করছে, কমিউনিটি এসব আইন ক্রমাগতভাবে সমর্থন করবে কিনা তার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।”
“অন্য কোনো উপায়ে মানুষকে এসব অনুসরণ করাতে ব্যর্থ হলে সর্বশেষ উপায় হিসেবে জরিমানা করা যেতে পারে।”
পুলিশ যদি আপনাকে থামায়, তাহলে আপনার কী কী অধিকার রয়েছে?
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসবিএস নিউজকে বলেছে, নিজেদের অধিকারের সীমার মধ্যে থেকে পুলিশ জনগণকে জিজ্ঞাসা করতে পারবে যে, কেন তারা ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়েছে।
মিস্টার ব্ল্যাঙ্কস বলেন, কর্তৃপক্ষ কাউকে থামালে মানুষ এই প্রশ্ন আশা করতে পারবে যে, কোন “যৌক্তিক কারণে” তিনি তার প্রাথমিক আবাসস্থল ছেড়ে বের হয়েছেন।
তিনি বলেন, বড় অঙ্কের জরিমানার কথা মাথায় রেখে পুলিশের উচিত “পরিপক্ক সিদ্ধান্ত” গ্রহণ করা যে, কীভাবে তারা এসব ক্ষমতার প্রয়োগ করবে।
“এটা পরিষ্কার যে, মানুষ যদি পুলিশের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে পুলিশ হয়তো তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।”
“পুলিশের বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে, যা তারা প্রয়োগ করতে পারে। যে-সব লোকেরা সহযোগিতাপূর্ণ নয়, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ এসব ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।”এসিটি-তে চিফ মিনিস্টার অ্যান্ড্রু বার যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তাতে অন-দ্য-স্পট জরিমানা করার আগে সতর্ক করা হবে।
তবে, নিউ সাউথ ওয়েলসে, পুলিশ কমিশনার নিক ফুলার নিশ্চিত করেছেন যে, এসব নির্দেশনা তাচ্ছিল্য ও লঙ্ঘন করায় ইতোমধ্যে ১৩ টি ক্ষেত্রে জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন,
“আমি আশা করি, আমাদেরকে আর এ রকম লিখতে হবে না। তবে, আমি আশঙ্কা করি, এ রকম লোকও থাকবে, যারা এই বার্তা গ্রহণ করবে না। তাই, আমরা কাজ করে যাব।”
ঘর ছেড়ে বাইরে যাওয়ার “যৌক্তিক কারণসমূহ” কী?
ফেডারাল এবং স্টেট নেতৃবৃন্দ একমত হয়েছেন যে, ঘর ছেড়ে বাইরে বের হওয়ার গ্রহণযোগ্য কারণগুলো হচ্ছে: কর্মক্ষেত্রে কিংবা স্কুলে যাওয়া, প্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্য ক্রয় করতে, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে এবং ব্যায়ামের জন্য বাইরে যাওয়া।
কিন্তু, নিউ সাউথ ওয়েলস পাবলিক হেলথ অ্যাক্ট অনুসারে, ঘর ছেড়ে বাইরে যাওয়ার জন্য ১৬ টি “যৌক্তিক কারণের” কথা বলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাদ্যদ্রব্য কিংবা অন্যান্য পণ্যদ্রব্য কিংবা পরিষেবার জন্য (পোষা প্রাণীর জন্য সহ) বাইরে যাওয়া, বাচ্চাদের চাইল্ডকেয়ারে নিয়ে যাওয়া, কেয়ারারের দায়িত্ব পালনের জন্য, বিয়ে-শাদী কিংবা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নিতে এবং বাসা পরিবর্তনের জন্য বাইরে যাওয়া, ইমার্জেন্সি সাহায্য প্রদানের জন্য এবং রক্তদানের জন্য বাইরে যাওয়া।
এছাড়া, আইনী বাধ্য-বাধকতা পূরণের জন্যও বাইরে যাওয়া যাবে। সেন্টারলিঙ্ক কিংবা ডমেস্টিক ভায়োলেন্স সাপোর্টের মতো পাবলিক সার্ভিসের কাজে বাইরে যাওয়া যাবে। যে-সব সন্তান তাদের বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনের সঙ্গে একই স্থানে বাস করে না, তারা তাদের বাবা-মা কিংবা ভাই-বোনের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারবে।
মিনিস্টার অফ রিলিজিয়ন্স বা ধর্মীয় কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিরা তাদের প্রার্থনার স্থানে যেতে পারবেন এবং ধর্মীয় কাজ করতে পারবেন, অবশ্যই যথাবিহিত নিরাপত্তা ও সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করার মাধ্যমে। ইমার্জেন্সি ও কমপ্যাশনেট (শোক প্রকাশ, সান্ত্বনা প্রদান) পরিষেবার কারণেও বাইরে যাওয়া যাবে।টু-পার্সন রুল পরিবারের লোকদের প্রতি প্রযোজ্য নয়। এর মানে হলো, পরিবারের নিকট-সদস্যরা দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন।
এসব আইন কতো দিন চলবে?
মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসবিএস নিউজকে বলেছে, গণ-স্বাস্থ্যের প্রতি হুমকি প্রতিরোধে গৃহীত এসব নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞাগুলো গ্রহণযোগ্য।
তবে তারা সতর্ক করে বলেন, এই ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা প্রদানের বিষয়টি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হতে হবে এবং এগুলো ন্যায়-পরায়ণতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে হবে এবং সমাজের অসহায় ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্যমূলকভাবে এগুলোর প্রয়োগ করা যাবে না।
অন্যান্য দেশগুলোতেও একই রকম লকডাউন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে এর জন্য একটি তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে যেদিন তারা এগুলো তুলে নেবে। আর, অস্ট্রেলিয়া এসব নির্দেশনা অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রয়োগ করছে।
সিভিল লিবার্টিজ অস্ট্রেলিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজন ভেঙ্কটরমন বলেন, এসব নির্দেশনা “পরিপূর্ণভাবে যতো দিন থাকা দরকার, তার চেয়ে একটুও বেশি নয়”। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেছেন, এই বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাব প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, এসব নির্দেশনা কতো দিন মেনে চলতে হবে তা মূলত নির্ভর করবে কতোটা সফলভাবে তারা সংক্রমণের বিস্তার কমাতে পারেন তার উপর।
মিস্টার ভেঙ্কটরমন বলেন, জনগণের নিরাপত্তা-বিধানের জন্য হলেও, নির্দেশনা বাড়ানো হলে জনমনে উদ্বেগ দেখা দিবে।
তিনি বলেন,
“সবসময়েই এই ঝুঁকি রয়েছে এবং নতুন বিশেষ ক্ষমতার কারণে মানুষ পুলিশের উপস্থিতিতে কিংবা তাদের প্রশ্নের মুখে ভীত-সন্ত্রস্ত হতে পারে।”
ভিক্টোরিয়ান লিবার্টিজ-এর মুখপাত্র গামা ক্যাফেরাল্লা এসবিএস নিউজকে বলেন, অসহায় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি যেন অন্যায়ভাবে এসব বড় অঙ্কের জরিমানা আরোপ করা না হয়। বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন,
“আমরা জানি যে, গরীব লোকদের উপরে জরিমানার অসামঞ্জস্যপূর্ণ প্রভাব পড়ে।”
“এটা নিশ্চিত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এসব আইন যেন অসহায় ব্যক্তিদেরকে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত না করে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় লকডাউন করা হয় নি
শুধুমাত্র নিউ সাউথ ওয়েলস, এসিটি এবং ভিক্টোরিয়াতে অন্য স্টেট বা টেরিটোরি থেকে ভ্রমণে গেলে পৌঁছানোর পর ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন করতে হয় না।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া তাদের রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করেছে এবং মঙ্গলবার মাঝরাত থেকে আন্তঃরাজ্য ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মানে হলো, মানুষ তাদের নির্ধারিত অঞ্চলের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবে না।
নর্দার্ন টেরিটোরি এবং সাউথ অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বসবাসরত ইনডিজেনাস (স্থানীয়) কমিউনিটিগুলোতেও ভ্রমণ করা যাবে না।
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে যুক্তরাজ্য, নিউ জিল্যান্ড, ভারত, ইতালি এবং পেরুসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন করা হয়েছে।
কিন্তু, মিস্টার মরিসন ‘লকডাউন’ কথাটি ব্যবহার করার পক্ষপাতি নন। তিনি বলেন, তিনি ‘অহেতুক উদ্বেগ’ তৈরি করতে চান না।
অস্ট্রেলিয়ানদেরকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্যদের সঙ্গে হলে দু’জনের বেশি একত্রিত হওয়া যাবে না।
আপনি যদি মনে করেন যে, আপনি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে আপনার ডাক্তারকে কল করুন। ডাক্তারের কাছে যাবেন না। আপনি ন্যাশনাল করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইনেও কল করতে পারেন এই নম্বরে: 1800 020 080
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
আপনার ভাষায় কোভিড-১৯ এর সর্বশেষ আপডেট জানাতে এসবিএস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পাবেন। ভিজিট করুন: .
বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন: