৮ ডিসেম্বর, ২০২১ স্থানীয় সময় বেলা ১ টার দিকে ভারতের তামিলনাড়ুর কুন্নুরে নীলগিরির একটি চা বাগানের ওপর ভেঙে পড়ে সেনাবাহিনীর এমআই ১৭ ভি ৫ কপ্টারটি। ভারতীয় সেনার এলিট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিফেন্স স্টাফ কলেজের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন সিডিএস বিপিন রাওয়াত। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পাঁচ মিনিট আগেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
কপ্টারটিতে সওয়ার ছিলেন বিপিন রাওয়াতের স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত। ব্রিগেডিয়ার এলএস লিড্ডর, লেফটেন্যান্ট কর্ণেল হরজিন্দর সিং, নায়েক গুরসেবক সিং, নায়েক জিতেন্দ্র কুমার, ল্যান্সনায়েক বিবেক কুমার, ল্যান্সনায়েক বি সাই তেজা, হাবিলদার সতপাল-সহ আরও কয়েকজন। নীলগিরির দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় দুর্ঘটনার পরেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সিডিএস বিপিন রাওয়াতকে। তাঁর শরীরের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশই পুড়ে গিয়েছিল।
দিল্লি থেকে সুলুর হয়ে ওয়েলিংটন যাওয়ার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন ভেঙে পড়ার পর বিমান-বাহিনীর হেলিকপ্টারে আগুন লেগে যায়। নিহতদের শনাক্ত করতে ডিএনএ টেস্ট করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
বুধবার সুলুরের সেনা ছাউনি থেকে এমআই সিরিজের চপারটি ওয়েলিংটনের সেনাঘাঁটির দিকে যাচ্ছিল বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু ওড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটি ভেঙে পড়ে। ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায় কপ্টারে। চপারে থাকা ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে দুর্ঘটনায়। জীবিত রয়েছেন একমাত্র বরুণ সিংহ। সেনাবাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণের সুস্থতা কামনা করে টুইট করেছেন দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
READ MORE
নতুন এসবিএস রেডিও অ্যাপ ডাউনলোড করুন
এ বারই প্রথম নয়, এর আগেও হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় পড়েছেন জেনারেল বিপিন রাওয়ত। সে-বার প্রাণে বেঁচে যান তিনি। ২০১৫ সালে নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সেনার চিতা হেলিকপ্টার। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল বিপিন রাওয়াত। সেই ঘটনার ৬ বছর বাদে ফের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বর্তমান চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বা সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াতের।
১৬ মার্চ ১৯৫৮, উত্তরাখণ্ডের পাউরিতে যোদ্ধা পরিবারে জন্ম হয় বিপিন রাওয়াতের। তাঁর পরিবারে সেনাবাহিনীতে যোগদানের ইতিহাস পুরুষানুক্রমিক। বাবা লক্ষ্মণ সিংহ রাওয়াত ছিলেন ভারতীয় সেনার লেফটেন্যান্ট জেনারেল। দেরাদুন ও শিমলায় স্কুলশিক্ষা শেষে যোগ দিয়েছিলেন ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমিতে। ১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর গোর্খা রেজিমেন্ট থেকে সেনায় শুরু হয় তাঁর কেরিয়ার। তারপর সময়ের সঙ্গে কাশ্মীর-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে ফৌজি ইউনিটের দায়িত্ব সামলেছেন। শুধু তাই নয়, জাতিসঙ্ঘের হয়ে কঙ্গোতে শান্তিরক্ষা অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন বিপিন রাওয়াত।১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাপ্রধান পদে বসেন কাউন্টার ইনসার্জেন্সি বিশেষজ্ঞ রাওয়াত। ২০১৯ সালে অবসরের পর দেশের প্রথম সেনা সর্বাধিনায়ক পদে নিয়োগ করা হয় তাঁকে।
According to Indian Air Force on 08 December 2021, General Bipin Rawat was onboard a helicopter that crashed in Southern India earlier the same day. Source: EPA/JAIPAL SINGH
এর আগেও ভারতে একাধিকবার কপ্টার অথবা বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে একাধিক সেনা আধিকারিক থেকে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের। দুর্ঘটনাস্থল কখনও অরুণাচলের জঙ্গল, কখনও দিল্লির ফ্লাইং ক্লাব সংলগ্ন এলাকা, কখনও বা উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম। ২০১১ সালে কপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অরুণাচল প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডোরজি খান্ডুর। কপ্টারটি ছিল ইউরোকপ্টার বি-৮। তাওয়াং থেকে ইটানগর যাওয়ার পথে অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম কামেং জেলায় আকাশপথে দুর্ঘটনা ঘটে।
২০০৯ সালে কপ্টার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির। কপ্টারটি ছিল বেল ৪৩০ সিরিজের। দুর্ঘটনা ঘটে অন্ধ্রপ্রদেশ-রায়ালসীমার কাছে নাল্লামালা জঙ্গলে। হাজার অনুসন্ধানের পরেও আজও দেহ মেলে নি অন্ধ্রপ্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির বাবা তথা ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডির। ২০০১ সালে উড়ান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় কংগ্রেস সাংসদ তথা তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাধবরাও সিন্ধিয়ার। তবে কপ্টারে নয়, কংগ্রেস নেতার ব্যক্তিগত বিমান কিং এয়ার সি-৯০ দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল। দুর্ঘটনা ঘটে উত্তরপ্রদেশের মঈনপুরি জেলার কাছে মোট্টা গ্রামে।
১৯৮০ সালে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পুত্র কংগ্রেস সাংসদ সঞ্জয় গান্ধীর। বিমানটি ছিল পিটস স্পেশাল-২এ এয়ারক্রাফট। দিল্লি ফ্লাইং ক্লাবের কাছে তৎকালীন তরুণ কংগ্রেস নেতার বিমানটি ভেঙে পড়ে। এছাড়াও ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বরে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের সুকনায় সামরিক ঘাঁটির কাছে ভেঙে পড়ে সেনার একটি কপ্টার। ওই দুর্ঘটনায় তিনজন উচ্চপদস্থ সেনা অধিকারিকের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁরা হলেন মেজর সঞ্জীব লাথার, মেজর অরবিন্দ বাজার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল রজনীশ কুমার।
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত।
আরও দেখুন:
ভারতীয় সংবাদ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২১