বিশ্ব জুড়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা প্রতিবছর জিলহজ্ব মাসের ১০, ১১ এবং ১২ তারিখে উদযাপন করেন পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। একে কোরবানির ঈদও বলা হয়। ঈদ অর্থ আনন্দ আর কোরবানি অর্থ হলো নৈকট্য, আত্মত্যাগ। তাই, কোরবানির ঈদের মানে হলো ত্যাগের উৎসব। আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এই ঈদে ভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট কোরবানি করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় এ বছর ৩১ জুলাই, শুক্রবার ঈদ-উল-আযহা উদযাপিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার গ্রান্ড মুফতি ও ফতোয়া কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. ইব্রাহিম আবু মোহাম্মদ।আর, মুনসাইটিং অস্ট্রেলিয়ার সিদ্ধান্ত অনুসারে ঈদ উদযাপিত হবে ১ আগস্ট, শনিবার। অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম ওয়েলফেয়ার সেন্টারের প্রেসিডেন্ট, ইসলামী চিন্তাবিদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, বাংলাভাষী কমিউনিটির অনেকেই ঈদ উদযাপন করবেন শনিবার।নিউ সাউথ ওয়েলসের ডাবো থেকে ডাক্তার চৌধুরী বেগ এবং সমাজকর্মী শিবলি চৌধুরী জানান, সেখানে বাংলাদেশী মুসলমান কমিউনিটি ৩১ জুলাই শুক্রবার ঈদ করবেন।
Source: Facebook/Australian National Imams Council
Source: Facebook/Moonsighting Australia
শিবলি চৌধুরী বলেন, “নামাজ হবে। দু’জায়গায় নামাজ হবে। কারণ, ১০০ জনের বেশি উপস্থিতির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফার্ম হাউসের মাধ্যমে এবং ফ্লেচার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে তাদের কেউ কেউ অস্ট্রেলিয়াতেই কুরবানি করছেন।”
শিবলি চৌধুরী আরও বলেন, কমিউনিটির সবাইকে জোরালোভাবে বলা হয়েছে যে, তারা যেন অবশ্যই ২০ জনের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি অনুসরণ করেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন। অর্থাৎ, সেখানে আর আগের মতো বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে গিয়ে বড় জমায়েত করা হবে না।
দ্য বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়া হাব-এর প্রেসিডেন্ট, ইউনিভার্সিটি অফ অ্যাডিলেইডের অ্যাজাঙ্কট ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, অ্যাডিলেইডে বাংলাভাষীদের একটি বড় অংশ ঈদ করছেন ৩১ জুলাই, শুক্রবার।মেলবোর্ন থেকে জুবায়দুল জেকব বলেন, সেখানে বাংলাদেশী কমিউনিটির মুসলমানরা ৩১ জুলাই, শুক্রবার ঈদ করছেন। তবে, কমিউনিটির কিছু সদস্য ১ আগস্ট ঈদ উদযাপন করবেন।
Dr MD Younus, Adjunct Fellow, The University of Adelaide. Source: Dr MD Younus
মেলবোর্ন থেকে সমাজকর্মী মামুন বদরুদ্দোজা পলাশ বলেন, বোর্ড অফ ইমাম ভিক্টোরিয়া-র সাথে মিল করে শুক্রবার ঈদ করবেন। তিনি বলেন,
“আমরা মেলবোর্নবাসীরা ঈদ করবো লকডাউনের মাঝে। সঙ্গত কারণেই ভয়ে ভয়ে আছি কোভিড-১৯ নিয়ে। বাকি আল্লাহর ইচ্ছা।”
ঈদের আপ্যায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন,
“নিজেদের বাসাতেই কাটাতে হবে ঈদ, যেহেতু কারও বাসায় যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ। অতিথি আপ্যায়নও করা যাবে না এবার।”
পলাশ আরও বলেন,
“ইনশা’আল্লাহ্ বাসাতেই (ঈদের) নামাজ আদায় করবো পরিবার-পরিজন নিয়ে।”
ফোন করে সবাইকে ঈদ মোবারক জানাবেন তিনি। ঈদ উপলক্ষে মেলবোর্নের বাংলাদেশী কমিউনিটি সংগঠনগুলো বেশ কিছু অনলাইন প্রোগ্রামের আয়োজন করেছে। এগুলো ঈদের দিন, পরদিন-সহ বেশ কয়েকদিন চলবে। “এভাবে হয়তো কিছুটা একঘেয়েমি দূর হবে মানুষের মাঝে”, বলেন পলাশ।পলাশ আরও জানান,
Mamun Al Badruddoza Polash Source: Mamun Al Badruddoza Polash
“ঈদ উপলক্ষে ‘মেলবোর্ন বিডি কমিউনিটি-কানেক্টেডনেস ইন ক্রাইসিস সিচুয়েশন’ কোভিড-১৯ কবলিত মানুষদের জন্য ঈদ গ্রোসারিজ প্যাক অফার করছেন, যেন সবাই মিলে ঈদ উদযাপন করতে পারেন।”
লকডাউনের কারণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস বিলানো সম্ভব নয় এবার। মামুন বদরুদ্দোজা পলাশ বলেন,
“বেশ কিছু হালাল গ্রোসারিজ শপ-এর সাথে কথা হয়েছে। যারা মাংস বিতরণ করতে চান তারা যে শপে কোরবানি করেছেন, সেখানে রেখে দিবেন, যাতে অন্য যারা কোরবানি দিচ্ছেন না, তারা সেই মাংসা মিট শপ থেকে নিতে পারেন।”
মেলবোর্নে নার্সিং পেশায় আছেন সোনিয়া সাত্তার। তিনি বলেন, তিনি সপ্তাহে পাঁচ দিনই কাজ করছেন।
“এবারের ঈদ পুরোপুরিই ভিন্ন রকম হবে। আমাকে হয়তো কাজ করতে হবে।”ব্রিসবেন থেকে লাইলাক শহীদ বলেন,
লাইলাক শহীদ। Source: Lilac Shahid
“বাংলাভাষী বাঙালি মুসলমানরা এখানে কেউ কেউ শুক্রবার ঈদ করবেন। তবে, অধিকাংশই শনিবার ঈদ করবেন।”
“এখানে বিভিন্ন স্লটারিং হাউজে এবং হালাল বুচার শপে কোরবানি করা যায়। এ বছরও কেউ কেউ করছেন। তবে, অধিকাংশই এবার বাংলাদেশে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যেমন, আমি সাধারণত অস্ট্রেলিয়াতেই কোরবানি করি, তবে এবার বাংলাদেশে করছি।”
“ঈদে আমরা সাধারণত ব্রিসবেনে কোনো হল ভাড়া করে সবাই একত্রিত হই এবং সারা দিন ধরে ঈদ উদযাপন করে থাকি। তবে, কোভিড-১৯ এর কারণে এ বছর আমরা রোজার ঈদও সেভাবে পালন করতে পারি নি এবং কোরবানির ঈদও সেভাবে পালিত হচ্ছে না। তবে, কারও কারও বাসায় আমরা কোভিড-১৯ নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনেই ঈদ পালন করবো।”ব্রিসবেন থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সন্তান শাহেদ সদরুদ্দিন বলেন,
Source: Council of Imams Queensland/Islamic Medical Association of Queensland/Islamic Council of Queensland
“এবারের ঈদটা একটু ভিন্ন। তারপরও উৎসব তো কোনো না কোনোভাবে হবে। করোনাভাইরাসের নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনেই যতোটা সম্ভব আমরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করবো।কুইন্সল্যান্ড থেকে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ, রোটারিয়ান এবং প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ফরহাদ কামাল জানান প্রবাসে ধর্মীয় উৎসব উদযাপন এমনিতেই একটু অন্যরকম। এবার করোনা পরিস্থিতিতে আরও ভিন্ন ধরণের অনুভূতি এবং আবেগ-ঘন পরিবেশে পালিত হতে চলেছে। একই দিনে সকলে পবিত্র ধর্মীয় উৎসবটি পালন করছেন না। যথাক্রমে শুক্র ও শনিবার পালন করছেন অস্ট্রেলিয়া অভিবাসীগণ এই পবিত্র ইদ-উল-আযহা উৎসব।
Farhad Kamal, Systems and Network Administrator, Queensland Department of Education. Source: Farhad Kamal
বরাবরের মত অনেকেই হালাল বুচার শপে কোরবানি দেয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলেছেন। অনেকেই বাংলাদেশে অর্থ প্রেরণ করেছেন পরিবার পরিজনের সংগে কোরবানি করার জন্য। কুইন্সল্যান্ড সরকারের সামাজিক দূরত্ব এবং নিষেধাজ্ঞা মেনেই সকল কার্যক্রম সম্পাদন করবেন নামাজ আদায় সহ। এদিকে গোল্ডকোষ্টে নামাজের জন্য শুধুমাত্র প্রতি পরিবারের একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে মসজিদে ইদের নামাজের জন্য আসতে অনুরোধ করা হয়েছে এই করোনা সংকটকালে। তবে সেখানে দুটি জামাতের আয়োজন করা হবে বলে জানান হয়েছে।
কুশল বিনিময়, সৌজন্য সাক্ষাত, মাংস বিতরণ এবং কোরবানি ইদের আনন্দ সকলের সংগে বিধিবিধান মেনেই ভাগাভাগি করে নেবেন সে বিষয়ে সকলেই বিশেষভাবে সচেতন রয়েছেন। পবিত্র ইদের দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভিডিও কল এবং ফোনের মাধ্যমেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত ঘনিষ্ঠ আত্মীয়পরিজনদের সংগে কুশল বিনিময় করবেন বলে জানিয়েছেন।
পার্থ থেকে আবুল হোসেন জিয়া বলেন, তারা শনিবার, ১ আগস্ট ঈদ করবেন।
“এবার বাংলাদেশী কমিউনিটি থেকে হল ভাড়া করে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হচ্ছে”, বলেন তিনি।
আবুল হোসেন জিয়া আরও বলেন,
“ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়াতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার কারণে গত ঈদের তুলনায় এবারের ঈদে প্রাণ-চাঞ্চল্য ফিরে আসবে। শুধুমাত্র চতুর্থ পর্যায়ের নিয়ম অনুযায়ী ২ বর্গমিটারে এক জন থাকার নিয়ম মেনে যে কোনো সংখ্যক লোক একসঙ্গে ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন।”
“সামান্য সংখ্যক বাঙালি ছাড়া অধিকাংশ লোকজন বড় জামা’তে আগামী শনিবার ঈদ উদযাপন করবেন। শিথিল লকডাউনে ফার্মে কোরবানি করার ব্যবস্থাও বাড়তি আনন্দ যোগাবে। সর্বোপরি পার্থের লোকজনের এবারের ঈদ ভাল কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
ইসলামিক কাউন্সিল অফ কুইন্সল্যান্ড, কাউন্সিল অফ ইমামস কুইন্সল্যান্ড এবং ইসলামিক মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অফ কুইন্সল্যান্ডের পক্ষ থেকে ২৯ জুলাই ২০২০ যৌথভাবে আহ্বান করা হয়েছে, সাউথ ইস্ট কুইন্সল্যান্ডে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে ঈদের নামাজ ঘরেই আদায় করতে।
ক্যানবেরা থেকে পরিবেশবাদী এবং সমাজকর্মী কামরুল আহসান খান এবং নাসিম সামাদ জানান, সেখানে তারা শুক্রবার, ৩১ জুলাই ২০২০ তারিখে ঈদ উদযাপন করবেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন। এই সঙ্কটময় সময়ে সবাই মিলে এক জাতি হিসেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করায় তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।