হাইলাইটস
- যিশুর জন্মদিন তাই শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য নয়, সারা মানবজাতির জন্যই একটি উলেখযোগ্য ঘটনা।
- শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে মহিমান্বিত হোক শুভ বড়দিন।
- বড়দিন শুধু একটি উৎসবই নয়, সৌহার্দ্যের উদাহরণ সৃষ্টি করার দিন।
যিশুখ্রিস্ট সারা জীবন আর্তমানবতার সেবা, ত্যাগ ও শান্তির আদর্শ প্রচার করে গেছেন। হিংসা-দ্বেষ ভুলে তিনি সবাইকে শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। খ্রিস্টীয় মতে, যিশু ঈশ্বরের পুত্র এবং জগতের সব মানুষের ত্রাণকর্তা। প্রতি বছর সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ সাড়ম্বরে ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়ে থাকে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসবটি।
বড়দিনের কর্মসূচি শুধু আনন্দ-উৎসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি কখনো। কিন্তু এবারের বাস্তবতা ভিন্ন। এবার সারা বিশ্বেই কভিড বাস্তবতায় উদযাপিত হচ্ছে বড়দিন। বিশ্বমারি কভিড-১৯ পৃথিবীকে এক বড় ধরণের ধাক্কা দিয়েছে। আজ তাই উৎসবের আমেজের মধ্যেও থাকছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা।
যিশুখ্রিস্ট পথভ্রষ্ট ব্যক্তিদের দেখিয়েছেন আলোকিত পথ। তিনি বঞ্চিত-লাঞ্ছিত মানুষকে দিয়েছেন বাঁচার অনুপ্রেরণা। মানবজাতিকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তিনি ফেরাতে চেয়েছিলেন মমতা, ভালোবাসা ও ক্ষমাশীলতার পথে। মানবসেবার অন্যতম আদর্শ তিনি। যিশুর পথ ছিল সংযম, সহিষ্ণুতা ও ভালোবাসার। মানুষের নৈতিক দৈন্যের কারণে সারা বিশ্বে আজ হিংসা, হানাহানি ও অশান্তি বেড়েই চলেছে।
বড়দিনের বাণী এই দৈন্য ও সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠার জন্য। প্রতিটি ধর্মেরই মূল বাণী হলো মানবতাবোধ। বড়দিন উপলক্ষে যে প্রেম ও আশার বাণী প্রচার করা হয়, তারও মূলে রয়েছে মানবতা। বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এক সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে বলেই সব স্রোত এক ধারায় এসে মিলিত হয়ে বাঙালি সংস্কৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী অত্যাচারী শাসক হেরোদ রাজার শাসনাধীন জেরুজালেমের বেথেলহেমে মাতা মেরির গর্ভে যিশুর জন্ম হয়। মুক্তিদাতা হিসেবে যিশুর জš§লাভের কথা বাইবেলের পুরনো নিয়মে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে বর্ণিত ছিল। আর যিশুর জীবন ও কর্মের মাধ্যমে সেই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে রূপলাভ করে।
তাই যিশুর জন্মের অনেক আগে থেকেই ইসরায়েল জাতি এমন এক ভাববাদীর আগমনের জন্য অপেক্ষা করত, যিনি তাদের রাজনৈতিকভাবে মুক্ত করবেন। তারা ভেবেছিল যিশু হয়তো বা কোনো রাজপরিবার কিংবা সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করবেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন এক দরিদ্র পরিবারে এবং একটি গোশালায়। অন্যদিকে ঈশ্বরপুত্র হিসেবে যিশুকে প্রথম চিনতে পেরেছিল প্রান্তিক শ্রেণির দরিদ্র মানুষই। কোনো জ্ঞানী শিক্ষিত মানুষ নয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা দুটি বিষয়ে শিক্ষালাভ করতে পারি প্রথমত, সৃষ্টিকর্তার কাছে ধনী-দরিদ্র সবাই সমান। তিনি নির্যাতিত, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের পক্ষ নিয়ে থাকেন।
বড়দিন শুধু একটি উৎসবই নয়, সৌহার্দ্যের উদাহরণ সৃষ্টি করার দিন। বড়দিন প্রত্যেক মানুষকে শান্তি, প্রেম ও সম্প্রীতির শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করুক, এটাই সবার কাম্য। পৃথিবী থেকে বিদায় নিক হিংসা, সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদের মতো নিকৃষ্ট সব চিন্তাধারা। আজ এ পবিত্র উৎসবের দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ উৎসব সবার জন্য আনন্দময় হয়ে উঠুক। ভালোবাসার বিস্তার ঘটাক সবার মনে। মারিমুক্ত বিশ্বের প্রার্থনা করি আমরা। শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে মহিমান্বিত হোক শুভ বড়দিন।
আরও দেখুনঃ