শনিবার রাতে ভারতের উপকূল এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। রবিবার সকালে তা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাণ্ডব চালায়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে ভারতে ও বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। বাংলাদেশে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের নয়টি জেলার রিপোর্ট অনুসারে প্রায় তিন লাখ (৩০০ হাজার) মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে চার থেকে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, “বুলবুল পশ্চিম বাংলায় আঘাত করার পর সুন্দরবনে আঘাত করেছে এবং সুন্দরবন আমাদের প্রটেকশন, সেটা ঝড়টাকে আরও দুর্বল করার পর উপকূলের জেলাগুলোতে গেছে। ১৪০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার প্রকৃত গতিবেগ নিয়ে সরাসরি বাংলাদেশ আঘাত হানলে ভয়াবহতা আরও বেশি হত। বিপদ সংকেত যা দেওয়া হয়েছিল তা সঠিক ছিল।”
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় জেলাগুলোতে উপড়ে গেছে বহু গাছ, বিধ্বস্ত হয়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। ভারী বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের ক্ষেত। অনেক জায়গায় পোল ভেঙে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দমকা হাওয়ায় গাছ ও ঘর চাপা পড়ে এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে বাংলাদেশের দশ জেলায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা, বরগুনা ও গোপালগঞ্জে দু’জন করে এবং পটুয়াখালী, ভোলা, শরীয়তপুর, পিরোজপুর, মাদারীপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটে একজন করে মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা রবিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশের ছয় বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় ভারী বর্ষণের আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।অতি ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তান্ডবে পশ্চিমবঙ্গে মোট ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ১০ জনের মৃত্যুর খবর প্রাথমিকভাবে এসেছে। তবে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে সত্যিই সবক’টি মৃত্যু বুলবুলের কারণে কি না। ন’টি জেলার রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নিজে নবান্নের কন্ট্রোলরুমের উপস্থিত থেকে পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুর্গত এলাকা আকাশপথে পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী। নামখানা ও বকখালি ঘুরে দেখবেন তিনি। তারপর দুর্গত মানুষদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন নিয়ে কাকদ্বীপে একটি প্রশাসনিক বৈঠক করবেন তিনি।
A view of destruction in the aftermath of cyclone Bulbul, at Amarabati village, in Bakkhali, South 24 Parganas, on November 10, 2019 in Bakkhali, India. Source: Hindustan Times
শনিবার রাতভর উপকূল এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। তাতে রাজ্যে কী পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা জানতে রবিবার সকালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অনেকক্ষণ কথা হয়েছে দু’জনের মধ্যে। তার পরেই টুইটারে মোদী লিখেছেন, ঘূর্ণিঝড় এবং ভারী বৃষ্টির পর পূর্ব ভারতের একাধিক এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। সাইক্লোন বুলবুলের তাণ্ডবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি কেমন, তা নিয়ে কথা হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সবরকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।