অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ী বাসিন্দা হতে চাওয়ার অনেক যৌক্তিক কারণ আছে, কিন্তু কতটা সহজ অভিবাসন প্রক্রিয়া?

গড়ে প্রতি তিন মিনিটে একজন করে অস্ট্রেলিয়ায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাচ্ছেন। অপরদিকে বছরে ৪০,০০০ আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে, এর কারণ অস্ট্রেলিয়ার কঠোর অভিবাসন প্রক্রিয়া।

The latest ACT Skilled Visa Invitation round was released

Source: AAP

ভালোবাসা, নিরাপত্তা, দক্ষতা এবং অর্থ: এই চারটি মূল কারণে অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন পেতে সবার আগ্রহ। কিন্তু সুখী দাম্পত্য জীবন, নিজ দেশে হয়রানি থেকে বাঁচা, ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি অথবা পূর্ণ কালীন কাজই অস্ট্রেলিয়ায় ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে যথেষ্ট নয়।

বাস্তবতা হলো অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াটি বেশ কঠিন, যার সাথে যুক্ত ভিসা পাওয়া এবং তারপর রেসিডেন্সি পেতে অনেক ধরণের চেক এবং ক্রাইটেরিয়ার মধ্যে দিয়ে যাওয়া।

তারপরে আছে প্রতিযোগিতা: গড়ে প্রতি তিন মিনিটে একজন করে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাচ্ছেন (২০১৯-২০ অর্থবছরে স্কীলড এবং ফ্যামিলি স্ট্রিমসহ সর্বমোট ১,৬০,০০০ ভিসা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে; সূত্রঃ )।  কিন্তু বছরে আবেদন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে ৪০,০০০।  

এসবিএসের নতুন সিরিজ 'হু গেটস টু স্টে ইন অস্ট্রেলিয়া?' আগামী ১লা জুলাই থেকে প্রচারিত হবে, সেখানে তুলে ধরা হবে যেসব ব্যক্তি বা পরিবার অস্ট্রেলিয়ান সরকারের জীবন পরিবর্তনকারী রায়ের আশায় আছেন, তাদের কথা। 

এখানে থাকবে বিবাহিত দম্পতিদের কথা যারা বিচ্ছিন্ন আছেন দুটি ভিন্ন মহাদেশে, থাকবে শ্রবণ প্রতিবন্ধী সন্তানের কারণে ডিপোর্টেশনের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের কথা।  এই প্রোগ্রামে থাকবে ১৫-উর্দ্ধ কিছু তরুণদের কথা যারা অস্ট্রেলিয়ার বাইরে জন্মেছে; অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার ৩৪ ভাগই হচ্ছে এই গ্রূপটি, প্রায় ৬.৯ মিলিয়ন। এখানে তারা বলেছে তাদের উৎকণ্ঠা, আনন্দ কিংবা হৃদয়বিদারক কিছু ঘটনার কথা।  

ওই প্রোগ্রামে একজন অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক বললেন, 'এটা ঠিক নয়' - তিনি তার ইন্দোনেশিয়ান স্ত্রীকে এবং তাদের এক এবং দুই বছরের পুত্রদের পাশে চান যাদের অভিবাসন আটকে আছে।  ওই চার পর্বের সিরিজে তার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেলো অন্যদের মধ্যেও। 

সিরিজটি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগেই শুট করা হয়েছিল, তবে এই করোনা পরিস্থিতিতে অভিবাসন প্রত্যাশীদের সমস্যা আরো বেড়েছে। 

মাইগ্রেশন ইনস্টিটিউট অফ অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং মাইগ্রেশন কনসালটেন্ট লেয়ান স্টিভেন্স বলেন, ভাইরাসের কারণে অনেকের অবস্থা বেশ অনিশ্চিত এবং সঙ্গীন, এ সত্ত্বেও ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্স পরিস্থিতি যাদের নিজের হাতে নেই তাদের বেলায় অনেক ক্ষেত্রেই 'খুবই কনসেশনাল' নীতি নিয়েছে - যেমন পাসপোর্ট অফিস বন্ধ করে দেয়া, মেডিকেল বা ল্যাংগুয়েজ টেস্ট বিলম্বিত করা ইত্যাদি। 

তিনি এসবিএসকে বলেন, "মানুষ আমাদের কাছে আসে নিশ্চয়তা পেতে, কিন্তু আমরা তো আর তা দিতে পারি না।  আমরা জানিনা কবে ট্রাভেল ব্যান উঠবে, সামনে কবে পরিবর্তন আসবে।" 

"অনেকেই ভিসার জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন, কিন্তু এইসব অনিশ্চয়তার কারণে দ্বিধাতে আছেন যে কি করবেন।"

যদিও তিনি ও তার সহকর্মীরা ভিসা মার্কেটের উত্তাপ কিছুটা কম দেখতে পাচ্ছেন, সেইসাথে লক্ষ্য করছেন যে পার্টনার ভিসার আবেদন বেড়ে গেছে, কারণ তারা নিজ দেশে যেতে পারছেন না, সেই সাথে অনশোর ভিজিটর ভিসার আবেদনও বাড়ছে।  আপৎকালীন হিসেবে 'COVID ভিসা' বা ৪০৮ ভিসার ফী'ও তুলে নেয়া হয়েছে।  

এমপ্লয়ী স্পন্সরড ভিসা আবেদন কমে যাওয়ায় স্টিভেন্সের ধারণা সাম্প্রতিক বেকারত্বের হার যেভাবে বেড়েছে তাতে সম্ভবত স্কীলড অকুপেশন লিস্টে পরিবর্তন আসবে।  এছাড়া তিনি ভিসা প্রত্যাশীদের কোন ভালো খবর দিতে পারছেন না।  

তিনি বলেন, "সরকার সম্ভবত কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে, তারপরে যদি স্কীলড অকুপেশন লিস্টে পরিবর্তন প্রয়োজন হয় তাহলে তারা তা করবে।" 

ডিপার্টমেন্ট অফ হোম এফেয়ার্সের একজন মুখপাত্র এসবিএস কে বলেন, " করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে, তবে কিছু আবেদনের ফলাফল পেতে সময় লাগবে, কারণ এই পরিস্থিতিতে অনেক কিছুই আন্তর্জাতিকভাবে বন্ধ, স্বাস্থ্য এবং ক্যারেক্টার চেকের মতো সেসব তথ্য পেতে বেশ বেগ হতে হচ্ছে। " 

যারা হিউম্যানিটেরিয়ান ভিসা চাচ্ছেন তাদের অবস্থা আরো অনিশ্চিত। অস্ট্রেলিয়া বছরে ১৮,৭৫০ জন ব্যক্তিকে শরণার্থী বা আশ্রয়প্রার্থী ভিসা দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, কিন্তু এই সংকটের কারণে মার্চ থেকে তা ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে গেছে। এই অর্থবছরে মাত্র ৬৭ ভাগ অফশোর ভিসা দেয়া হয়েছে, কিন্তু বাকি ঘাটতি এ  বছর আদৌ পূরণ হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই।  

এদিকে রিফিউজি কাউন্সিল অফ অস্ট্রেলিয়ার সিইও পল পাওয়ার বলেন, প্রায় ২,০০০ প্রটেকশন ভিসা গ্র্যান্ট হয়েছে, কিন্তু ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা আসতে পারছে না।  

তিনি বলেন, "ব্যাপারটা লটারী জেতার মতো হয়ে গেছে, এবং তাদেরকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে যা খুবই হতাশাব্যঞ্জক। " 

সারাবিশ্বে করোনা সংকট আরো নতুন নতুন শরণার্থী সমস্যা সৃষ্টি করছে। 

আরো পড়ুন: 

Share
Published 26 June 2020 3:17pm
Updated 27 June 2020 9:53pm
By Daisy Dumas
Presented by Shahan Alam
Source: SBS Voices

Share this with family and friends