বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এই মুহূর্তে ১৬ ডিগ্রি ৫ মিনিট উত্তর অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রি ৬ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার থেকে ৬৩০ কিলোমিটার উত্তরে উত্তর-পশ্চিম, ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ৫২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দিঘা থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে ইয়াস।
মঙ্গলবার রাতের মধ্যে ইয়াস শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। আরও উত্তর উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে স্থানীয় সময় বুধবার সকালের মধ্যে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশার স্থলভাগের কাছে পৌঁছনোর কথা ইয়াস-এর। তার পর বুধবার দুপুরে অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে ইয়াস ওড়িশার পারাদ্বীপ ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরের মধ্যে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে বলেই পূর্বাভাস।
ইয়াস-এর প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকেই রাজ্যের উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝড় বইছে। ঘূর্ণিঝড় যত স্থলভাগের দিকে এগোবে তত তার গতিবেগ বাড়বে।
এদিকে ভয়াবহতার দিক থেকে ঘূর্ণিঝড় আমফানকেও ছাপিয়ে যেতে পারে ইয়াস বা যশ। রাজ্যবাসীকে আগেভাগে সতর্ক করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ঝড় এসে চলেও যাবে। আর তারপর ফের মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে।
গভীর নিম্নচাপে ইয়াস ইতিমধ্যেই শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, তত শক্তি সঞ্চয় করছে ইয়াস। এই অবস্থায় সোমবার মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার বিষয়ে আগাম সতর্ক করে দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঝড়ের সময় টিন উড়ে আসার বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে দিয়েছেন। পাশাপাশি, সমুদ্র উত্তাল থাকতে পারে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৎস্যজীবীদের উদ্দেশে আবেদন জানিয়ে মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলায় রাজ্য সরকার যে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে সে কথা তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ইতোমধ্যেই প্রশাসনের তরফে মাইকিং করা হয়েছে। এসএমএস করেও ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সম্পর্কে আগাম সচেতন করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সেনার সাহায্যও চাওয়া হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি যাতে আমফানের মতো না হয়, সে বিষয়েও কড়া নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ সমস্যা মেটাতে সিইএসসি-কে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ওড়িশাকে ছশো কোটি আর বাংলাকে কেন চারশো কোটি টাকা দেওয়া হবে, প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে বৈঠক করেন। আর ওই বৈঠকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলা এবং ওড়িশার জন্য মোট হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেন। যার মধ্যে ওড়িশা ছ্শো কোটি এবং বাংলা চারশো কোটি টাকা পাবে। এই অবস্থায় বিষয়টি সরব হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ এনেছেন। রাজ্যের টাকাই কার্যত রাজ্যকে দেওয়া হচ্ছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, বার বার এরকম চলতে পারে না। রাজ্য কেন বার বার বঞ্চিত হবে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী টেনে এনেছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের প্রসঙ্গ। সে সময়েও কেন্দ্র সরকার আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেও পর্যাপ্ত সাহায্য মেলে নি বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।