করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যে দ্রুত গতিতে তৈরি করা হচ্ছে তা দেখে বিশ্বের অনেকেই বিস্মিত।
ফাইজার/বায়ো এন টেক ভ্যাকসিনের জরুরি অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র। আর ব্যবহার করা হচ্ছে অসহায় কমিউনিটিগুলোতে।
এদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ-সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানে ভ্যাকসিন ব্যবহার শুরু হওয়ার অপেক্ষায় মানুষ অধীরভাবে প্রতীক্ষা করছে।
ফেডারাল সরকার জনগণকে পুনরায় আশ্বস্ত করেছে যে, একটি ভ্যাকসিন আসছে এবং তারা একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা শুরু করেছে, ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক পর্বে (কোয়ার্টারে) এটি বিতরণ করার জন্য। তবে কোনো কিছুই অপরিবর্তনীয় নয়। এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি তা এখানে বর্ণিত হলো:
অস্ট্রেলিয়া কেন এখন পর্যন্ত একটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় নি?
ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এপিডেমিওলজিস্ট প্রফেসর অ্যাড্রিয়ান এস্টারম্যান বলেন, এর উত্তর খুবই সহজ: এখানে তাড়াহুড়োর কোনো প্রয়োজন নেই।তিনি বলেন, এটি মনে রাখা জরুরি যে, যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রে ফায়জার/বায়োএনটেক ভ্যাকসিন শুধুমাত্র “ইমার্জেন্সি অ্যাপ্রুভাল” লাভ করেছে। এর মানে হলো, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালগুলো এখন পর্যন্ত শেষ হয় নি; তবে চাহিদা এত বেশি যে, তারা আর অপেক্ষা করতে পারছিল না।
Allergic reactions to the Pfizer/BioNtech vaccine are said to be incredibly rare. Source: Photonews
তিনি বলেন,
“এই জরুরি ব্যবহার অস্বাভাবিক। তবে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো কোভিড-১৯ নিয়ে এ রকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছে যে, তারা আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে পারছিল না ... আর এটি অনেক ন্যায্য।”
অস্ট্রেলিয়া কবে ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু করবে?
সিডনিতে সম্প্রতি স্থানীয়ভাবে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনার আগে প্রফেসর এস্টারম্যান বলেন,
“আমাদের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (থেরাপিটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) অপেক্ষা করবে সম্পূর্ণ ট্রায়াল রেজাল্টের জন্য, সেগুলো সতর্কতার সঙ্গে দেখবে, সেগুলোতে বড় করে টিক দিবে এবং এরপর আমরা টিকা প্রদান করা শুরু করতে পারবো।”
তিনি আশা করেন, ফাইজার/বায়ো এন টেক ভ্যাকসিন ২০২১ সালের “মার্চের দিকে” প্রদান করা হতে পারে।
প্রথমে কাদেরকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে?
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাক্টিং চিফ মেডিকেল অফিসার পল কেলি নিশ্চিত করেন যে, ভ্যাকসিন প্রদানের ক্ষেত্রে প্রায়োরিটি গ্রুপগুলোকে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। প্রথম অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্ক ব্যক্তিরা এবং যাদের স্বাস্থ্য-সমস্যা আছে তারা।
তিনি বলেন, যাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি সম্ভাবনা আছে, যেমন, স্বাস্থ্যকর্মী এবং বয়স্ক-সেবা কর্মীরা, তাদেরকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। এর পরে আসবে ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস এবং অপরিহার্য কর্মীরা।
কোন ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটগুলোতে অস্ট্রেলিয়া বিনিয়োগ করেছে?
ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্তের আলোকে, অস্ট্রেলিয়ান সরকারের এখন তিনিটি অপশন বা বিকল্প-পথ রয়েছে। প্রত্যেকের জন্য দুই ডোজ করে ভ্যাকসিন লাগবে এবং ২৫ মিলিয়ন জনসংখ্যা ছাড়াও আরও বেশি লোকের জন্য ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- অ্যাস্ট্রাজেনেকা
Source: SBS News
প্রফেসর এস্টারম্যান বলেন,
“এই ভ্যাকসিনটি হলো আমরা যেটাকে বলি একটি ভাইরাল ভেক্টর। আমাদেরকে সংক্রমিত করার উদ্দেশ্যে একটি শিম্পাঞ্জির ভাইরাস ব্যবহার করা হয়, যেটি কোনো ক্ষতি করে না, এমন নিরীহ। এর পর এই ভ্যাকসিনটি পাওয়া যায়।”
মেলবোর্নে অনশোরে অস্ট্রেলিয়ার বায়োটেকনোলজি কোম্পানি সি-এস-এল এই অপশনটির ৫০ মিলিয়ন ডোজ বানাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা ইতোমধ্যে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। তবে প্রয়োগ করার আগে তাদেরকে অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবে যতদিন পর্যন্ত না অ্যাস্ট্রাজেনেকা নিয়ন্ত্রকদের অনুমোদন লাভ করে।
- নোভাভ্যাক্স
Source: SBS News
প্রফেসর এস্টারম্যান বলেছেন, এটাকে বলা হয় “প্রোটিন ভ্যাকসিন”: একটি পরীক্ষাকৃত পদ্ধতি, যা তিনি আশা করেন, আগামী বছরের কোনো সময়ে অনুমোদিত হবে।
তিনি বলেন,
“সেপ্টেম্বরে তারা মাত্র ফেজ থ্রির ট্রায়ালগুলো শুরু করেছে।”
“তাই আবারও, এটি সম্ভবত আগামী বছরের অন্তত মে কিংবা জুনের আগে পাওয়া যাবে না।”
- ফাইজার/বায়ো এন টেক
Source: SBS News
তবে এই ভ্যাকসিনটি যদি প্রথমে কার্যকর বলেও প্রমাণিত হয়, তারপরও জনপ্রতি দুই ডোজ করে ১০ মিলিয়ন ডোজ ব্যবহার করতে পারবে মাত্র পাঁচ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান।
অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ক্রিস ময় বলেন, ফেডারাল সরকারের একাধিক চুক্তিতে উপনীত হওয়ার বিষয়টি অপরিহার্য।
তিনি বলেন,
“খোলাখুলি, এই ইস্যুটি জাতি হিসেবে আমাদের লোকসান বাঁচানোর চেষ্টা করছে এবং ভ্যাকসিন সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা প্রায় সফল হওয়ার পথে।”
“সর্বশক্তি প্রয়োগ করার কৌশল করাটা সম্ভবপর ছিল না।”
তবে, লেবার দল বলেছে, সম্ভাব্য মাত্র তিনটি ভ্যাকসিনের চুক্তি থাকাটা যথেষ্ট নয় এবং আন্তর্জাতিক সর্বোত্তম রীতি হলো, পাঁচটি থেকে ছয়টি (চুক্তি) থাকা।
ফাইজার ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করাটা কঠিন নয় কি?
হ্যাঁ। এটি সর্বদা প্রায় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেজন্য এটি প্রয়োগ করাটা কিছুটা জটিলতর প্রক্রিয়া। প্রফেসর এস্টারম্যান বলেন,
“বিশেষ ধরনের কন্টেইনারে এগুলো সংরক্ষণ করতে হয়। কিছুটা এস্কির মতো। তবে, এর মধ্যকার তরল নাইট্রোজেন এটাকে অত্যন্ত শীতল রাখে।”বিতরণ ও সরবরাহের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত এই চ্যালেঞ্জ কি সামলাতে পারবে অস্ট্রেলিয়া? এ সম্পর্কে তিনি বলেন,
The Pfizer/BioNTech vaccine must be kept at very cold temperatures. Source: Getty
“এটা করা সম্ভবপর।”
“এসব বিশেষ ধরনের এস্কিতে করে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে এগুলো সরবরাহ করবে ফাইজার। এর জন্য প্রয়োজনীয় কোল্ড চেইনের কারণে এটি যদিও অনেক কঠিন, তারপরও অস্ট্রেলিয়ায় সহজেই এর ব্যবস্থা করতে পারা উচিত।”
এম-আরএনএ ভ্যাকসিনগুলো ফাইজার/বায়ো এন টেক ভ্যাকসিনের মতোই অস্ট্রেলিয়ায় উৎপাদন করা যাবে না। কারণ, এগুলোর জন্য নতুন ধরনের প্রযুক্তির প্রয়োজন।
প্রফেসর এস্টারম্যান বলেন,
“আমাদের নিজেদের এম-আরএনএ ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা গড়ে তোলার বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা আছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যতের বৈশ্বিক মহামারীর কথা চিন্তা করে, এটা ভাল আইডিয়া।”
ইউকিউ/সিএসএল ভ্যাকসিনের কী হলো?
ট্রায়ালে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদেরকে ডোজ প্রদান করা হয়। এদের সবার টেস্ট রেজাল্ট আসে ফলস-পজেটিভ এইচআইভি। এরপর, ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগের প্রতি আঘাত হিসেবে, ।
ইউনিভার্সিটি অফ সিডনির সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর রবার্ট বোই বলেন,
“এইচআইভি থেকে সংক্রমিত হওয়ার কোনো ঝুঁকি এতে ছিল না।”
“আসলে যা ব্যবহার করা হয়েছিল, তা হলো সামান্য পরিমাণ প্রোটিন। সত্যিকারের সংক্রামক ভাইরাসটির সঙ্গে এর কোনো কিছু ছিল না।”
কিন্তু, বিজ্ঞানিরা উদ্বিগ্ন ছিলেন যে, এই ভ্যাকসিনটি পরিপূর্ণভাবে নিরাপদ ছিল কিনা তা নিয়ে। এইচআইভি-র ফলস-পজেটিভ রেজাল্ট অস্ট্রেলিয়ার এইচআইভি টেস্টিং প্রোগ্রাম এবং ব্লাড ডোনেশন ড্রাইভকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, জনগণের মাঝে এ বিষয়ক ধারণা গড়ে উঠা ও তাদের আত্মবিশ্বাস নিয়েও উদ্বেগ ছিল।
ভ্যাকসিন গ্রহণ করা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ানরা কী ভাবছেন?
যে কোনো টিকা প্রদান কর্মসূচী সফল করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সংখ্যক জনগণকে ভালভাবে অবহিত করতে হয় এবং জনগণের সদিচ্ছার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
মেলবোর্নের জিপি ডাক্তার অভিষেক বর্মা বলেন, বছরের একটি উল্লেখযোগ্য সময় কোভিড-১৯ নিয়ে রোগীদের বিভিন্ন উদ্বেগ হ্রাস করার কাজে ব্যয় করার পর এখন তিনি সম্ভাব্য ভ্যাকসিন নিয়ে তাদের বিভিন্ন মিথ বা অতিকথা দূর করছেন।
তিনি বলেন,
“ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের কাছে অনেক প্রশ্ন আছে; এটা কি নিরাপদ হবে? এটা কি বাধ্যতামূলক হবে? এটা কি বিপদজনক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে?”
তার বহু রোগীর উদ্বেগ রয়েছে যে, ভ্যাকসিন তৈরির এই প্রতিযোগিতার সময়টিতে হয়তো বা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কমানো হবে এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ছাড় দেওয়া হবে।
তিনি বলেন,
“আমরা যা করছি, তা হলো রোগীদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করছি এবং তাদের বিভিন্ন উদ্বেগ নিয়ে কথা বলছি।”
“এই সুযোগে আমরা হেলথ ডিপার্টমেন্ট এবং ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্যসমূহ ব্যবহার করছি। কার্যকর টিকার ব্যবহার ও আমরা যা নিরাপদ মনে করছি তা তুলে ধরার জন্য আমরা প্রমাণ-ভিত্তিক প্র্যাকটিস করছি।”
নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একটি জরিপে ৩,০৬১ জন অস্ট্রেলিয়ান অংশ নেন। এতে দেখা যায় যে, ৫৮.৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন। আর, ছয় শতাংশ বলেছেন, তারা অবশ্যই ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন না।
এতে কি অস্ট্রেলিয়ার সকল কমিউনিটি অংশ নিবে?
ডাক্তার বর্মা বলেন, অভিবাসী গোষ্ঠীগুলোর জন্য নিশ্চিতভাবে ভাষাগত ব্যবধান এবং সাংষ্কৃতিকভাবে যথোপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবার সুযোগের অভাব রয়েছে। সেজন্য তারা প্রায়েই এই আলোচনা থেকে বাদ পড়ছে।
ডাক্তার বর্মা বলেন,
“ঐতিহ্যগতভাবে সর্বদাই তারা কোনোভাবে তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং তাদেরকে সাধারণ প্র্যাকটিসে ও প্রাথমিক পরিচর্যায় নিয়োজিত করা কঠিন।”
“তাই, আমি মনে করি ঐ লোকদের সুনির্দিষ্ট বাধার সম্মুখীন হতে হবে; কারণ, তাদের ভুল তথ্য পাওয়ার অনেক বেশি প্রবণতা রয়েছে, যদি তারা যথার্থ উৎসগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ না করে।”
এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে অস্ট্রেলিয়ায় ভাষা ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বৈচিত্রপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে সমালোচিত হয়েছে স্টেট ও ফেডারাল সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট। বিভিন্ন তথ্য অনুবাদের ক্ষেত্রে নিম্নমান লক্ষ করা গেছে এবং সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয় নি। এসব কারণে কেউ কেউ এই ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন আন-অফিসিয়াল উৎস ব্যবহারে উৎসাহী হয়েছে।
ইসলামিক কাউন্সিল অফ ভিক্টোরিয়ার একজন মুখপাত্র আদেল সালমান বলেন,
“(ভ্যাকসিন নিয়ে) অনলাইনে প্রচুর ভুল তথ্য রয়েছে” এবং এটি শুধু অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রদায়গুলোর জন্যই চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি সবার জন্যই চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন,
“আমি মনে করি সঠিক বার্তা পৌঁছানোর বিষয়টি কার্যকরভাবে তুলে ধরার বিষয়টি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এ নিয়ে অনেক ভয়-ভীতির সৃষ্টি হবে এবং বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়বে।”
“আমাদেরকে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, তাদের সবার কাছে যেন বার্তা পৌঁছে যায় এবং বিশ্বাসযোগ্য উৎসগুলো থেকে যেন বার্তাগুলো যথাযথভাবে পৌঁছে যায়।”
ফেডারাল সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান, ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু করার আগেই একটি ইনফরমেশন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার জন্য।
হেলথ মিনিস্টার গ্রেগ হান্টের একজন মুখপাত্র এসবিএস নিউজ-কে বলেন, সরকার “ভ্যাকসিন তৈরি ও এর বিতরণ এবং এ বিষয়ক যোগাযোগ-কৌশল-সহ কোভিড-১৯ এ কীভাবে সাড়া দিতে হবে সে বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় বহু-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এবং স্টেক-হোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা চালিয়ে যাবে এবং তাদের কাছে পরামর্শ ও সুপারিশ চাইতে থাকবে।”
সরকারও তাদের কালচারালি অ্যান্ড লিঙ্গুইস্টিক্যালি ডাইভার্স কমিউনিটিজ কোভিড-১৯ হেলথ অ্যাডভাইজোরি গ্রুপ মাত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এ মাসে এটি প্রথমবারের মতো বৈঠকে মিলিত হয়েছে।
কোন ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে?
ইউনিভার্সিটি অফ কুইন্সল্যান্ডের সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর পল গ্রিফিন বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় ভ্যাকসিনের ব্যবহার শুরু করা জটিল হতে পারে।
তিনি বলেন,
“আমি মনে করি, সরবরাহ ও এর পাশাপাশি ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা হলো দু’টি প্রধান বিষয়, সামনে আমরা যেগুলোর সম্মুখীন হতে যাচ্ছি। এগুলোর কোনো একটি নিয়ে এখন পর্যন্ত আমরা পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি বলে আমি নিশ্চিত নই।”
তিনি বলেন,
“সরবরাহ করার বিষয়টি খুবই জটিল হবে। মূলত, আমরা ইতোপূর্বে কখনই এ জাতীয় কাজ করি নি।”
“আমাদের একটি যৌক্তিক ফ্লু-রোলআউট আছে; তবে, সেই ভ্যাকসিন মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ভিন্ন ধরনের বহু পদ্ধতি সংশ্লিষ্ট রয়েছে। আর, আজ পর্যন্ত আমরা কখনই সেই হার অর্জন করতে পারি নি, যে হার আমরা কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অর্জন করতে চাই।”
“রেকর্ড-সংরক্ষণ এবং মানুষের ভ্যাকসিন গ্রহণ করার প্রমাণও (গুরুত্বপূর্ণ)। আমরা যে ভ্যাকসিনটি গ্রহণ করা শুরু করতে যাচ্ছি, সেটার জন্য অন্তত দুটি ডোজ গ্রহণ করতে হবে। মানুষ যদি তাদের দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করতে না আসে, তাহলে সুরক্ষার মাত্রা খুবই নেমে যাবে।”
ভ্যাকসিনটি কি কাজ করবে?
ড. ময় বলেন, ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রামের স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘ-মেয়াদী লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আরও বেশি স্পষ্টতা থাকা প্রয়োজন।
তিনি বলেন,
“আপনাকে অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সেগুলো কার্যকর। তবে, এই মুহূর্তে আমরা নিশ্চিত নই যে, সত্যিকারভাবে এগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে ও তা ছড়ানো বন্ধ করতে কতোটা ভাল। তাই, এগুলো হয়তো কোনো এক ক্ষেত্রে ভাল এবং হয়তো অন্য ক্ষেত্রে ভাল নয়।”
“আমরা শুধু ব্যক্তিদেরকে রক্ষা করারই চেষ্টা করছি না, এর পাশাপাশি আমরা কমিউনিটিতে এর সংক্রমণও বন্ধ করার চেষ্টা করছি। সামগ্রিকভাবে এসব ভ্যাকসিনের ভাল-মন্দ উভয় দিকই রয়েছে। আর, কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোর সম্পর্কে এখনও জানা যায় নি। যেমন, এগুলোর স্থায়ীত্ব কতো দিন।”
কবে নাগাদ আমরা আরও জানতে পারবো?
প্রফেসর কেলি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ভ্যাকসিনেশন রোলআউটের পরিপূর্ণ তথ্যাবলী ২০২১ সালের জানুয়ারিতে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জন-সমাগমের সীমা সম্পর্কে জানতে আপনার রাজ্যের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখুন।
আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ঘরে অবস্থান করুন এবং আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।
Please check the relevant guidelines for your state or territory: , , , , , , , .