ভারত থেকে আসা সমস্ত যাত্রীবাহী বিমান পরিবহন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। সেখানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী ১৫ মে পর্যন্ত ফ্লাইটগুলো আসা বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার ন্যাশনাল সিকিউরিটি কমিটির এক সভায় সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন।
এদিকে, ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্যাকেজের আওতায় ভারতে অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
তবে, ভারত থেকে সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইট আসা করার সিদ্ধান্তের কারণে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে সে দেশটিতে আটকে পড়া প্রায় ৯,০০০ অস্ট্রেলিয়ান। তারা সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার কোনো উপায় দেখছে না।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলেন, ভারতে আটকে পড়া অসহায় অস্ট্রেলিয়ানদেরকে পরিত্যাগ করা হয় নি। রিপোর্টারদেরকে তিনি বলেন,
“ভারতে থাকা অস্ট্রেলিয়ানদেরকে পরিত্যাগ করাটা এর সমাধান নয়।”
“তারা সকলেই অস্ট্রেলিয়ান এবং অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা, যাদের আমাদের কাছ থেকে সাহায্য দরকার আছে। আমরা এটা সুনিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা রিপ্যাট্রিয়েশন ফ্লাইটগুলো পুনরায় চালু করতে সক্ষম।”
ভারত থেকে দোহা, দুবাই, সিঙ্গাপুর এবং কুয়ালা লামপুর হয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসা ফ্লাইটগুলোও ১৫ মে পর্যন্ত বন্ধ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভারতে ৩২৩,১৪৪ টি নতুন কেস সনাক্ত করা হয়েছে এবং ২,৭৭১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগে প্রবল চাপ পড়েছে এবং দেশটি গুরুতর অক্সিজেন সঙ্কটে ভুগছে। কোনো কোনো হাসপাতাল রোগীদেরকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে।
৫০০ নন-ইনভ্যাসিভ ভেন্টিলেটর, সার্জিকাল মাস্ক, গাউন, গগলস, গ্লাভস এবং ফেস শিল্ড দিতে সম্মত হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া, ফেডারাল সরকার ভারতে ১০০টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর এবং ট্যাংক পাঠাতেও সম্মত হয়েছে।
এর আগে, যুক্তরাজ্য, জার্মেনি, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইওরোপীয় ইউনিয়নও ভারতকে জরুরি ভিত্তিতে মেডিকেল সহায়তা প্রেরণের প্রতিশ্রুতি দেয়।
মিস্টার মরিসন বলেন, অস্ট্রেলিয়া সরকার ভারতের অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসকারী ভারতীয়-অস্ট্রেলিয়ানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, “আমরা ভারতের যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছি, তা হৃদয়বিদারক।”
মিস্টার মরিসন বলেন, ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য। কারণ, কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের মাঝে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধ করা দরকার, যেগুলোর উৎস ভারত।
কোয়ারেন্টিনে থাকা পজেটিভ কেস সংখ্যা এ সপ্তাহের আগ পর্যন্ত সপ্তাহে কমবেশি ৯০ এর আশেপাশে থাকতো। কিন্তু, এখন তা বেড়ে ১৪৩ এ দাঁড়িয়েছে।ভারত থেকে ফেরত আসা ব্যক্তিদের মাঝেও আনুপাতিকভাবে বেশি সংখ্যক কেস দেখা গেছে। যেমন, নর্দার্ন টেরিটোরির হাওয়ার্ড স্প্রিংস ফ্যাসিলিটিতে কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিদের মাঝে যতগুলো কোভিড-১৯ কেস দেখা গেছে, সেগুলোর ৯৫ শতাংশই ভারত থেকে ফেরত আসা ব্যক্তি।
Family members embrace amid burning pyres of victims who lost their lives due to COVID-19 at a cremation ground in New Delhi on 26 April, 2021. Source: Getty
গত সপ্তাহে ন্যাশনাল কেবিনেট ভারতীয় ফ্লাইট ৩০ শতাংশ কমাতে সম্মত হয়েছিল। তবে, মিস্টার মরিসন বলেন, ভারতের অবস্থা আরও খারাপ আকার ধারণ করায় সে অনুসারে কাজ করার প্রয়োজন হয়েছে।
তিনি বলেন,
“এটা একটি মানবিক সঙ্কট এবং এটি বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করেছে। গত বছর জুড়ে পুরো বিশ্বে এটি চলছে।”
“প্রয়োজন এবং ঝুঁকি ক্রমাগতভাবে বাড়ছে ... এবং এটি ভারতীয় জনগণের জন্য দুঃখজনক।”
অস্ট্রেলিয়ায় ফেরার ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারতে আটকে পড়া অস্ট্রেলিয়ানদেরকে কনসুলার সেবা প্রদান করা চালিয়ে যাওয়া হবে। ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড-এর কাছ থেকে তারা হার্ডশিপ পেমেন্ট লাভের জন্যও উপযুক্ততা লাভ করবেন।
ফরেইন অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার ম্যারিস পেইন বলেন,
“এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটি অনেকের জন্যই একটি কঠিন সময়।”
“ভারতীয়-অস্ট্রেলিয়ানদের মাঝে যারা অস্ট্রেলিয়ায় আছেন, তারা অনেকেই তাদের পরিবার নিয়ে উৎকণ্ঠিত হবেন।”
ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্তটি আগামীতে পর্যালোচনা করতে চায় ফেডারাল সরকার।
মিস্টার মরিসন প্রতিশ্রুতি দেন, ফ্লাইটগুলোর পরবর্তী পর্যায়ে নজর দেওয়া হবে ‘অসহায় অস্ট্রেলিয়ানদেরকে’ ঘরে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে। আইপিএল-এ অংশ নেওয়া অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের জন্য কোনো অগ্রাধিকারমূলক ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হবে না, বলেন তিনি।
ভারতে বর্তমানে দেখা দেওয়া কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাবের আগে, ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেইন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড সেখান থেকে আটটি ফ্লাইটের পরিকল্পনা করেছিল, যেগুলো মে মাসে পরিচালিত হওয়ার কথা ছিল।ভারতে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৭ মিলিয়নেরও বেশি লোক কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৯৭,৮৯৪ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
A patient breathes with the help of oxygen provided by a Gurdwara, Sikh place of worship, inside a car in New Delhi, India, Saturday, 24 April, 2021. Source: AP via AAP
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সকল নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কোভিড-টিকা গ্রহণের জন্য এবং সাবধানতা অবলম্বনের জন্য।