ভিক্টোরিয়ায় চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউনের মাঝে কেমন আছেন গৃহহীনরা?

A homeless man sleeps in a laneway in Melbourne on March 23, 2020.

A homeless man sleeps in a laneway in Melbourne on March 23, 2020. Source: AFP

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীতে ভিক্টোরিয়ায় স্টেজ ফোর বা চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউন চলছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজ্যটিতে গৃহহীন ব্যক্তিদের হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা করা হয়েছে। দেশ জুড়ে গৃহহীনদের সহায়তা করতে সোশাল হাউজিংয়ের ব্যবস্থার দাবি তুলেছিল সমর্থকগোষ্ঠীগুলো। ভিক্টোরিয়ায় চতুর্থ পর্যায়ের লকডাউনে গৃহহীনদের অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারের লিংকটিতে ক্লিক করুন।


ভিক্টোরিয়ায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হেনেছে। সেখানে ২০০০ গৃহহীন অন্তত ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত হোটেলে থাকতে পারবেন। করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার পর এসব রাফ স্লিপার বা গৃহহীনদেরকে আইসোলেট করার জন্য খালি হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা করে ভিক্টোরিয়া সরকার। তখন থেকে, এ রকম লোকদের জন্য হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা বিস্তৃত করার জন্য ১৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। তাদের জন্য সুস্থিত ও দীর্ঘমেয়াদী আবাসনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।

আরএমআইটি ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ক্যামেরন ডাফ বলেন, কোভিড-১৯ থেকে বাঁচাতে রাস্তা থেকে লোকদেরকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগটি এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে নেওয়া অন্যতম একটি উদ্যোগ।

গত ২ থেকে ৮ আগস্ট ছিল হোমলেস উইক। অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ১১৬,০০০ লোক গৃহহীন। গৃহহীনতার পেছনে অন্যতম তিনটি কারণ হলো: আবাসনের ব্যবস্থা করার সক্ষমতা না থাকা, পারিবারিক সহিংসতা এবং আর্থিক চাপ। ২০১৬ সালের সর্বশেষ সেনসাস রিপোর্ট অনুসারে, গৃহহীনদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হলো সম্প্রতি আসা অভিবাসীরা। এদের মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ অত্যন্ত গাদাগাদি অবস্থায় বাস করে।

এদের বেশিরভাগই এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর-পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলো থেকে। যেমন, ভারত, চীন এবং আফগানিস্তান থেকে।ভিক্টোরিয়ায় কাউন্সিল টু হোমলেস পারসন্স এর সিইও জেনি স্মিথ বলেন, কোভিড-১৯ এর সময়ে জবসিকার এবং জবকিপারের বড় প্রভাব পড়েছে গৃহহীনদের উপরে।

এই সমস্যার একটি ছোট অংশ হলো রাফ স্লিপাররা। বহু লোক গাড়িতে ঘুমাতে বাধ্য হয়। অস্ট্রেলিয়ায় গৃহহীনদের তিন ভাগের দু’ভাগই দেশটির বড় বড় শহরগুলোতে বাস করে।গৃহহীনদের শতকরা ৪০ ভাগের বয়স ২৫ বছরের নিচে বলে জানিয়েছে হোমলেসনেস অস্ট্রেলিয়া। এছাড়া, ৫৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যাও এক্ষেত্রে দ্রুত বাড়ছে।

গৃহহীনতা কমাতে আবাসন, শিক্ষা, সোশাল কেয়ার, মানসিক স্বাস্থ্য ইত্যাদি পরিষেবাগুলো কীভাবে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাফ। তিনি বলেন, মানুষের ইমার্জেন্সি হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করা প্রাথমিকভাবে ব্যয়বহুল। তবে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থের সাশ্রয় হয়।

তবে, ইমার্জেন্সি হাউজিং হলো এর শুরু মাত্র। ইমার্জেন্সি অ্যাকোমোডেশন থেকে বের হওয়ার পর দীর্ঘ-মেয়াদী সোশাল হাউজিংয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডাফ বলেন, এটা শুধুমাত্র সরকারেরই কাজ নয়। সোশাল হাউজিংয়ের ক্ষেত্রে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপের মাধ্যমে সরকারি আর্থিক সহায়তা নিয়ে ডেভেলপাররাও এতে ভূমিকা রাখতে পারেন, মনে করেন তিনি।

হোমলেসনেস নিউ সাউথ ওয়েলসের সিনিয়র পলিসি অ্যান্ড রিসার্চ অফিসার ডিগবি হিউজস (Digby Hughes) বলেন, গৃহহীনতা সমস্যা নিরসনে ফিনল্যান্ডের একটি চমৎকার মডেল রয়েছে। এর মাধ্যমে তারা রাফ স্লিপিং সমস্যা দূর করতে পেরেছে।

ভিক্টোরিয়া সরকার বলছে, প্রাইভেট রেন্টাল মার্কেট থেকে অচিরেই তারা ১১০০ প্রোপার্টি লিজ নিবে এবং ১০০০ নতুন সোশাল হাউজিং ইউনিট অবমুক্ত করবে, যার প্রতিশ্রুতি তারা রাজ্য-নির্বাচনের সময়ে দিয়েছিল। ফেডারাল লেবার দল মরিসন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, আরও বেশি সংখ্যক সোশাল হাউজিংয়ের ব্যবস্থা করতে। তারা বলছে, এই অর্থনৈতিক সঙ্কট থেকে উদ্ধার পাওয়ার ক্ষেত্রে হাউজিং কন্সট্রাকশন বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

আপনার ভাষায় করোনাভাইরাসের হালনাগাদ তথ্য পেতে sbs.com.au/coronavirus দেখুন।


Share