গফ হুইটলামের লেবার সরকারের শেষ মাসগুলোতে রেডিও এথনিক অস্ট্রেলিয়া নামে একটি অনুপম প্রকল্প চালু করেন কমিশনার ফর কমিউনিটি রিলেশন্স আল গ্রাসবি।
১৯৭৫ সালের ৯ জুন তার ঐতিহাসিক ঘোষণায় এ সম্পর্কে তিনি বলেন।
অনুষ্ঠানটি মাত্র তিন মাস চালানোর পরিকল্পনা ছিল এবং তখন এর বাজেট ছিল মাত্র ৩৮ হাজার ডলার।
সিডনিতে 2-E-A স্টেশন এবং মেলবোর্নে 3-E-A স্টেশনের মাধ্যমে ১৫টি কমিউনিটির ভাষায় অভিবাসীদের জন্য নিউ মেডিব্যাংক স্কিমের ব্যাখ্যা করা হয় এসব অনুষ্ঠানে।
অভিবাসী কমিউনিটিতে অচিরেই এর জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
সার্ভিস বিস্তৃত করা হলে সাংবাদিক টনি চার্লটন নতুন মাইল ফলকের ঘোষণা দেন।
সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে স্বেচ্ছাসেবী ব্রডকাস্টাররা আসেন। স্কুল-টিচার, সমাজকর্মী, চিকিৎসক এবং সাংবাদিক। তারা সবাই এসব রেডিও অনুষ্ঠানের প্রারম্ভিক কালে সময় দেন।তাদের মধ্যে একজন ছিলেন সাবেক আরবী ব্রডকাস্টার মাজিদা আবদুদ।
এগুলো স্পেশাল ব্রডকাস্টিং সার্ভিস গড়ে ওঠার পেছনে বীজ হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে ৬০টিরও বেশি ভাষায় এসবিএস রেডিও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে থাকে।এর তিন বছর পর অভিবাসীদের জন্য ভলান্টিয়ার রেডিও সার্ভিস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে এসবিএস প্রতিষ্ঠিত করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম ফ্রেজার।
ইংরেজি ভাষায় জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও অভিবাসী কমিউনিটিগুলো তাদের নিজেদের ভাষায় সংবাদ শোনার বিষয়টি উপভোগ করেন।
মিস্টার চার্লটন বলেন, নিজের জন্মভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও এর মাধ্যমে হোমল্যান্ডের সঙ্গে নৈকট্য অনুভব করেন তারা।
সেটি ছিল একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের সময়।
হোয়াইট অস্ট্রেলিয়া পলিসি তখন থেকে মাত্র দু’বছর আগে পরিত্যক্ত হয়েছে। তাই, সামাজিক একাত্মতার ক্রমবর্ধমান চাহিদা ছিল তখন।
তবে, সবাই ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন নি।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত রেডিও স্টেশনগুলোর কমেন্টেটররা নতুন এই স্টেশনটিকে স্বাগত জানালেও এর পাশাপাশি তারা সন্দেহ ও পরিহাস করে।
ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনির প্রফেসর এন আং এসবিএস-এর ৪০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বলেছিলেন, এ রকম সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও রেডিও এথনিক অস্ট্রেলিয়া চালু করার সরকারি সিদ্ধান্তটি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ছিল।
অভিজ্ঞ ব্রডকাস্টার পিটার কোরোপেহ এসবিএস এর সঙ্গে ১৮ বছর কাজ করেছেন। এসব সমালোচনা তাকে দমাতে পারে নি।
১৯৭৫ সালে স্লোভেনিয়ান অনুষ্ঠান চালু করা হলে এর কয়েক মাস পর ব্রডকাস্টার হিসেবে যোগ দেন তিনি।
মিস্টার কোরোপেহ বলেন, তিনি কোনো সমস্যা বোধ করেন নি।
এরপর ধীরে ধীরে এসবিএস-এ ভাষার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯৪ সালের অস্ট্রেলিয়া ডে-তে এসবিএস তার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক চালু করে। এর ফলে এই মহাদেশের ৯০ শতাংশ অংশে বসবাসরত কমিউনিটিগুলো এসবিএস রেডিওর অনুষ্ঠান শুনতে পান।
১৯৯৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে এই ন্যাশনাল নেটওয়ার্কের প্রভাব অনুভূত হয়। একই সঙ্গে এসবিএস-টিভি এবং রেডিও-তে সংশ্লিষ্ট ভাষায় ধারাভাষ্যসহ খেলা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফুটবল অনুসারীরা এ চমৎকার সুযোগ হাত ছাড়া করেন নি।
এসবিএস এর জন্য যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদেরকে স্বীকৃতি দেন এবং অভিনন্দন জানান মিস্টার কোরোপেহ।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাবে।
এসবিএস এর উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে বর্ণিত আছে এর চার্টারে। সেটা হলো বৈশ্বিক বৈচিত্র আবিষ্কার করা, মূল্যায়ন ও উপলব্ধি করা এবং এজন্য সকল অস্ট্রেলিয়ানকে অনুপ্রাণিত করা, যেন এর মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।এসবিএস-কে ৭ বছর নেতৃত্ব দিয়েছেন এর সাবেক ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মাইকেল ইবিড।