১৯৯০ এর দশকে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তী পেস বোলার গ্লেন ম্যাকগ্রাথ শ্রীলঙ্কার তারকা অলরাউন্ডার সনৎ জয়সূরিয়াকে “ব্ল্যাক মাঙ্কি” বা কাল বানর বলেছল বলে অভিযোগ রয়েছে। আর, ২০০৩ সালে ড্যারেন লেহম্যানকে পাঁচ ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে খেলার সময়ে আউট হওয়ার পর তিনি বর্ণবাদী তীর্যক মন্তব্য করেছিলেন। তাই বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সঙ্গে বর্ণবাদের সম্পৃক্ততার বিষয়টির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে ঘিরে বর্ণ-বৈষম্যের একটি আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটেছিল ২০০৫ সালে, যখন সাউথ আফ্রিকা অস্ট্রেলিয়ায় সফরে এসেছিল।
তখন, প্রথম টেস্টে স্থানীয় দর্শকদের কেউ কেউ সফরকারী খেলোয়াড়দের প্রতি চিৎকার করছিল “কাফফির” বলে। এটি একটি বর্ণবাদী শব্দ যা সাধারণত ব্লাক আফ্রিকানদের প্রতি অবজ্ঞাসূচকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
স্থানীয় দর্শকদের এই আচরণ নিয়ে তদন্ত করতে বাধ্য হয় আইসিসি।
ওয়াকলি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট সাংবাদিক ম্যালকম কন বলেন, বর্ণবাদের শিকড় আসলে প্রোথিত আছে এই দেশটি গড়ে ওঠার সময় থেকেই। আর, এর আগে, বিভিন্ন প্রজন্মের খেলোয়াড় ও দর্শকেরা যারা পাক-ভারত উপমহাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন, তাদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল।
অস্ট্রেলিয়া এ রকম শ্বেতাঙ্গ দেশ ছিল।ম্যালকম কন
কিন্তু, ক্রিকেট-ইতিহাসবিদ ও লেখক প্যাট্রিক স্কিন বলেন, যদিও অবস্থার উন্নতি ঘটছে, তারপরও আমাদের ক্রিকেটে বর্ণবাদী কলঙ্কের বিষয়টি নির্ভর করে আপনি আসলে কার সঙ্গে কথা বলছেন তার উপরে।
“একজন বলেন তারা প্রতি দুই থেকে তিন সপ্তাহে দুর্ব্যবহারের শিকার হন। অন্যরা বলতে পারেন, এটা পুরোপুরিই অতিরঞ্জিত এবং অসমঞ্জস এবং এর কোনো ভিত্তি নেই।”
“এটা নিয়ে কথা বলাটা খুবই অস্বস্তিকর; এটি খুব কঠিন একটি বিষয়। আপনি যদি কোনো কিছু নিয়ে কথা না বলেন, তাহলে আপনি সে বিষয়টির উন্নয়ন করতে পারবেন না।”
তিনি বলেন, বর্ণবাদী ঘটনা একচেটিয়াভাবে শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই ঘটে না।
বর্ণবাদী আচরণ পুরো বিশ্ব জুড়েই ঘটতে দেখা যায়। আর, অস্ট্রেলিয়ানরা যখন অনুবব করে যে, এ জন্য শুধু তাদেরকেই চিহ্নিত করা হচ্ছে, তখন তারা কিছুটা মনক্ষুণ্ন হয়। তারপরও, এটি যা ঠিক সেটাই আমাদেরকে বলতে হবে। এটি পুরোদস্তুর খারাপ ও কাপুরুষোচিত যে, খেলায় জিতার জন্য কারও বংশ নিয়ে অপমান করা। এটি প্রতারণামূলক, এটি কাপুরুষোচিত আচরণ এবং এটি যা ঠিক তা-ই এটাকে বলা উচিত।প্যাট্রিক স্কিন
অস্ট্রেলিয়া দল অধিকতর বৈচিত্রপূর্ণ ও সাংস্কৃতিকভাবে সচেতন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, ধীরে ধীরে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে।
উসমান খাজার জন্ম পাকিস্তানে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে খেলা প্রথম মুসলিম ক্রিকেটার তিনি। ২০১১ সালে সিডনি অ্যাশেজ টেস্টে তার অভিষেক ঘটে।
তিনি বলেন, “আমার বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে লোকেরা স্লেজ করতো, তারপরও আমি খেলেছি। আমার বিরুদ্ধে অনেক বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে। তবে, সেগুলো আমার জন্য প্রতিবন্ধক হতে পারে নি; কারণ, আমার ভাইয়েরা কিংবা আমার পরিবার কখনই এটাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করতে দেয় নি। আমি সবসময়ই এগুলো উপেক্ষা করেছি।”
অস্ট্রেলিয়ার একজন কমিউনিটি ক্রিকেটার ভবন নাগর অভিবাসীদেরকে কিছু পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দুর্ব্যবহারের শিকার হলে আপনাকে অবশ্যই সেটি নিয়ে কথা বলতে হবে।
তিনি বলেন, “ক্রিকেটের চেতনা নিয়ে খেলুন। আর, আপনি যদি অনুভব করেন যে, আপনার সঙ্গে যথাযথ আচরণ করা হচ্ছে না, তখন সেটা মেনে নিবেন না।”
ন্যায়-সঙ্গত আচরণ না দেখলে, প্রতিবাদ করুন। তা যদি আপনার নিজের ক্লাবের বিরুদ্ধেই হয়, কিংবা নিজের দলের বিরুদ্ধেই হয় কিংবা অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধেই হয়; বর্ণবাদী আচরণ আপনার সহ্য করা উচিত নয়।ভবন নাগর
এ সম্পর্কে আরও শুনুন কালার্স অফ ক্রিকেটের অষ্টম ও শেষ পর্বটিতে। সেজন্য ক্লিক করুন উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে।
ভাষান্তর: সিকদার তাহের আহমদ
Hear more by clicking play above, or find in the SBS Radio app or your favourite podcast app such as or .
Hosts: Preeti Jabbal and Kulasegaram Sanchayan
Lead Producer: Deeju Sivadas
Producers: Sahil Makkar, Vatsal Patel, Abhas Parajuli
Sound Design: Max Gosford
Program Manager: Manpreet Kaur Singh
Advisor: Patrick Skene
Colours of Cricket is an eight-part podcast series, created by SBS Radio's South Asian language programs; SBS Bangla, SBS Gujarati, SBS Hindi, SBS Malayalam, SBS Nepali, SBS Punjabi, SBS Sinhala, SBS Tamil, and SBS Urdu.