মুসলিম রোহিঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিতে মায়ানমারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ আইসিজির

Rohingya

Rohingya refugees in the camp at Cox's Bazar in Bangladesh (SBS) Source: SBS

দা ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস মুসলিম রোহিঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীকে হয়রানি এবং নৃশংসতা থেকে সুরক্ষা দিতে মায়ানমারকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণে নির্দেশ দিয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে করা অপরাধের প্রমান সংরক্ষণ করতে আদেশ দিয়েছে।রোহিঙ্গ্যা জনগণের ওপর সামরিক বাহিনীর অভিযান চালানোর পর মায়ানমার এই প্রথমবার বিচারের মুখোমুখি হয়ে এই নির্দেশ পেলো। রোহিঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গ্যা প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়।


 

বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বিতর্ক নিরসনে গঠিত জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের আদালতে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত নভেম্বরে মায়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করে এই অভিযোগে যে তারা রোহিংগাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে যা ১৯৪৮ সালের কনভেনশনের লঙ্ঘন।

গাম্বিয়া এই মামলার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আহবান জানিয়েছিল কারণ এর নিস্পত্তি হতে কয়েক বছর সময় নিতে পারতো।

২০১৭ সালে সামরিক বাহিনীর অভিযানের প্রেক্ষিতে সাতশত ত্রিশ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলো, এবং বাংলাদেশের ভেতরে সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন ক্যাম্পগুলোতে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য হয়েছিল।

প্রিসাইডিং জাজ ইউসুফ আব্দুলকোয়াই সর্বসম্মতিক্রমে এই আদেশ পাঠ করেন।


রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে যে সব ক্ষেত্রে তাদের নিবৃত থাকতে হবে তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা এবং ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা, পুরো জনগোষ্ঠী বা তার অংশবিশেষকে নিশ্চিহ্ন করা।

মিঃ আব্দুলকোয়াই আরো যোগ করেন যে, কোর্ট এই মতামত দিচ্ছে যে মায়ানমারে রোহিঙ্গারা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করছে। তিনি আগামী চার মাসের মধ্যে মায়ানমারকে এই বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে, এবং এরপর থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর প্রতিবেদন দিতে আদেশ দেন।

রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে বিতর্ক নিরসনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ বিচার বিভাগ ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস বা আইসিজে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর স্থাপিত হয়েছিল।

এর আগে সংস্থাটি প্রথমবারের মত রুল দেয় যে, এই মামলায় তাদের বিচারিক এখতিয়ার আছে।

আইসিজে'র আদেশ পালনে দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা আছে, কিন্তু এর আদেশ পালনে বাধ্য করার কোন ক্ষমতা নেই। এ সত্ত্বেও বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট তুন খিন এই আদেশকে ঐতিহাসিক বলে বর্ণনা করেন।

এই আদেশ এমন সময়ে এলো যখন মায়ানমার কমিশন সিদ্ধান্তে এসেছে যে কিছু সৈনিক সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ওপর সম্ভবত যুদ্ধাপরাধ করেছে, কিন্তু তাতে পুরো মিলিটারি গণহত্যার দায়ে দোষী নয়।

বুধবার মায়ানমারের একশতেরও বেশি সিভিল সোসাইটি সংগঠন এক যোথ বিবৃতিতে আইসিজে মামলার প্রতি সমর্থন জানায় যা অত্যন্ত বিরল।

তারা বলে যে মায়ানমারের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম নয় এবং তারা অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত না করে নিপীড়ন চালিয়ে যেতে দিবে।

মায়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দুত ইয়াংহি লি রাশিয়া, চায়না, এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের ভূমিকা এবং রোহিঙ্গা মামলা বিষয়টিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে নেয়ার ব্যর্থতার জন্য সমালোচনা করেছেন।

মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা অঙ্ সান সু কি তার দেশের বিরুদ্ধে আনা ব্যাপক ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং গনহত্যার অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গত ডিসেম্বরে দা হেগে গিয়েছিলেন।

তবে মায়ানমার অস্বীকার করেই চলেছে, তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইসিজের রুলিংয়ের পর বলেছে যে রাখাইন রাজ্যে কোন গণহত্যা হয়নি।


Share