সিডনির লাকেম্বায় ইফতার বাজারে একদিন

Iftar

Source: SBS Bangla

প্রতিবছর রমজান এলেই লাকেম্বার রেলওয়ে প্যারেড জমজমাট ইফতার বাজারে পরিণত হয়।


সিডনির বাংলাদেশী-অধ্যুষিত লাকেম্বায় কেমন হচ্ছে এ বারের ইফতার বাজার?

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাভাষী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ বাস করেন লাকেম্বা ও ওয়ালী পার্ক এলাকায়। লাকেম্বার রেলওয়ে প্যারেডে বাংলাদেশী খাদ্যপণ্যের বিপণী ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে বেশ কয়েকটি। পুরো বছর জুড়ে সেখানে বাঙালিদের আনাগোনা চলে। চটপটি, ফুচকা, সিঙাড়া, পিঁয়াজুর পাশাপাশি দেশী হাতের রান্নার আকর্ষণে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

বছর ঘুরে রমজান মাস এলে লাকেম্বাও গম গম করে বাঙালিদের পদভারে। গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাকেম্বায় বসছে ইফতার বাজার। বিকাল থেকে শুরু হয়ে প্রায় ভোর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো। বিশেষত, শনি-রবিবার উইকএন্ডে পা রাখার জায়গা পাওয়া যায় না এখানে।

তবে, এ বছর লোকজন তেমন একটা আসছেন না, বলেন, গ্রামীণ চটপটি অ্যান্ড কাবাবের কর্ণধার আশরাফ।

এর জন্য তিনি কাউন্সিলের দ্বারা নির্ধারিত সময়সীমাকে দায়ী করেন। তার মতে, এক ঘণ্টা উইন্ডো টাইম যথেষ্ট নয়।

রেইন ফরেস্ট ফিউশন রেস্টুরেন্টের মিরাজ হোসেনও আশরাফের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর লোক-সমাগম কম হচ্ছে।

এবারের লোক-সমাগম নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্ট খুশবু রেস্টুরেন্টের আয়েশা আবিদ।
Lakemba Iftar Bazar
Source: SBS Bangla
লাকেম্বায় সপরিবারে ইফতার করতে আসা সাংবাদিক আউয়াল খানও এ রকম মতামত প্রকাশ করলেন। স্বদেশ বার্তার সম্পাদক ও বাংলা কথার নির্বাহী সম্পাদক আউয়াল খান বলেন, প্রতি দিন না হলেও মাঝে মাঝেই তিনি এখানে ইফতার করতে আসেন।

তার মতে, ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা সবসময়েই বেশি থাকে।

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ইফতারের সঙ্গে লাকেম্বার ইফতার বাজারের তুলনা করা যায় কি?

বছর খানেক আগে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন রিজওয়ান। লাকেম্বাতেই বসবাস করছেন। এখানে তিনি বাংলাদেশের ছোঁয়া পান।

গ্রামীণ চটপটি অ্যান্ড কাবাবের আশরাফ বলেন, ঢাকায় যে-সব ইফতার পাওয়া যায়, সে-সবই তারা তৈরি করেন।

রিজওয়ান অবশ্য ঢাকার ইফতারের পক্ষেই মত দেন।

গ্রিন একর থেকে ইফতার কিনতে আসেন সালমান আনোয়ার। তার মতে, বাংলাদেশের ইফতার বাংলাদেশের মতোই।

এবারের ইফতার বাজারে লোক-সমাগম কম হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি দিকের কথা বলেছেন স্থানীয় রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা।

প্রথমত, অর্থনৈতিক মন্দা, দ্বিতীয়ত, কাউন্সিলের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা, তৃতীয়ত, নিরাপত্তার বিষয়টি।

ঢাকায় ইফতার বাজারে নারীরা নিরাপত্তার সঙ্গে যেতে পারেন না, বলেন, খুশবু রেস্টুরেন্টের আয়েশা আবিদ। তার মতে, লাকেম্বার ইফতার বাজারে নারীরা অবাধে আসতে পারেন।

ক্রেতা সালমান আনোয়ার নিরাপত্তা ইস্যুকে কোনো সমস্যা মনে করেন না। লাকেম্বায় স্বপরিবারে ইফতার বাজারে আসা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, রেস্টুরেন্ট ভেদে বিষয়টি নির্ভর করে।
Lakemba Iftar Bazar
Source: SBS Bangla
লাকেম্বার ইফতার বাজারে বাংলাদেশী ও মুসলমান ছাড়াও ভীনদেশীরাও আসতেন। এ বছর তাদের উপস্থিতি তেমন একটা চোখে পড়ে নি।

এদিকে, ক্রাইস্টচার্চ ও শ্রী লঙ্কার সাম্প্রতিক নৃশংস হামলার কথা উল্লেখ করে সাংবাদিক আউয়াল খান বলেন, অবাঙালীরা এসব কারণে আসার সাহস পাচ্ছেন না। আর, নারী নিরাপত্তার সমস্যাটিকে তিনি বৈশ্বিক সমস্যা বলে মনে করেন।

লাকেম্বায় খাবারের মান কী রকম?

খাবারের মান ও স্বাদ ঢাকার থেকে কোনো অংশে কম নয় বলেও দাবি করেন গ্রামীণ চটপটির আশরাফ। তার মতে, লেকাম্বার ইফতারের আমেজটা ঢাকার মতোই।

অস্ট্রেলিয়ায় এখনও বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি দেখা দেয় নি বলেন সাংবাদিক আওয়াল খান। তবে, আমদানি করা কয়েকটি খাদ্য পণ্যের মান নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

ক্রেতা সালমান আনোয়ার মনে করেন, খাবারের মান ভাল।
Lakemba Iftar Bazar
Source: SBS Bangla
কাউন্সিলের ইনস্পেক্টররা একটু পর পর রাস্তায় টহল দিচ্ছিল। এসবিএস এর পক্ষ থেকে কথা বলতে চাইলে তারা বলেন, কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেই।

রোযা এলেই দেখা যায়, বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। লাকেম্বার বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টগুলোতেও কি একই অবস্থা?

গ্রামীণ চটপটির আশরাফ বলেন, দাম বেশি রাখা হয় না। যা রাখা হয় তা যৌক্তিক।

তবে, ভোক্তা রিজওয়ান বলেন, লাকেম্বায় দাম একটু বেশি হলেও সবকিছু মিলিয়ে ঠিকই আছে।

রেইন ফরেস্ট ফিউশনের মিরাজ হোসেন বলেন, ব্যবসা দীর্ঘ সময়ের জন্য, একদিনের জন্য নয়।
Lakemba Iftar Bazar
Source: SBS Bangla
প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .







Share