চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে কোভিড-১৯ এর প্রাদূর্ভাবের পর থেকে পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ রাখছিলেন ব্রিসবেনের দুই বাচ্চার মা মোনা পেরেজ।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে তিনি তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে এবং ছয় বছর বয়সী ছেলেকে স্কুলের টার্ম-১ শেষ হওয়ার তিন সপ্তাহ আগেই ছাড়িয়ে নেন। সেই সময়টিতে কুইন্সল্যান্ডের বেশিরভাগ স্কুল-শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাচ্ছিল।
তবে, তিনি অচিরেই বুঝতে পারেন যে, তার সন্তানদের হোম-বেসড লার্নিং বা ঘরে থেকে পড়াশোনা করার বিষয়টি বাস্তবিকভাবেই কঠিন।
টিউটর ইয়োর ওউন চাইল্ড ডট কমের এডুকেশন কনসালটেন্ট টামারা কিড গত ১৪ বছর ধরে তার দুই সন্তানকে ঘরে পড়াচ্ছেন। তিনি বলেন যে, অভিভাবকদেরকে এটা উপলব্ধি করা উচিত যে, কোভিড-১৯ এর কারণে হোম-বেসড লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে স্কুল শিক্ষকেরা সহায়তা করেন। আর, এটি সত্যিকারের হোম-স্কুলিং থেকে ভিন্ন রকম। হোম-স্কুলিং-এ আপনার সন্তানকে স্কুল-ব্যবস্থা থেকে পুরোপুরিই অপসারণ করা হয়।
বর্তমানে ঘরে থেকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে শিশুদেরকে সহায়তা করে স্কুলগুলো ও শিক্ষকেরা। টামারা কিড বলরছেন, বহু শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে অভিভাবকেরা অনেকটা শিক্ষকের মতোই কাজ করছেন। প্রাইমারি স্কুলের একজন প্রাক্তন শিক্ষিকা টামারা কিড বলেন, হোম-বেসড লার্নিংয়ের ক্ষেত্রে স্কুলের গৎ-বাধা সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টার প্রোগ্রাম অনুসরণ করা যাবে না।
টামারা কিড পরামর্শ দেন, কম-বয়সী শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলের বেশিরভাগ কাজ সকালে করতে হবে। এ ছাড়া তিনি জোর দেন, টিনেজারদেরকে দেরি করে ঘুম থেকে উঠার সুযোগ দিতে, যেন তারা তাদের বাড়ন্ত দেহের বিকাশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।
একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কুল অস্ট্রেলিয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন অভিযাত্রী, ফটোগ্রাফার ও লেখক জেসন কিম্বার্লি।
এটি মূলত এডুকেশনাল রিসোর্স বা শিক্ষা-উপকরণ সরবরাহ করে। শতকরা ৯০ ভাগ অস্ট্রেলিয়ান স্কুল এবং মোনা পেরেজের মতো অভিভাবকেরা এসব ব্যবহার করেন।
করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির কাজের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের নানা স্থানের অভিভাবকদের জন্য তারা তাদের অনলাইন রিসোর্সগুলো আরও সহজ করছে যেন এগুলো সহজেই ঘর থেকে অ্যাকসেস করা যায়।
কিম্বার্লি বলেন, অস্ট্রেলিয়ান পাঠ্যসূচির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো, যেমন, গণিত ও ইংরেজির জন্য শিক্ষা-উপকরণ তৈরি করা ছাড়াও ফ্রি লার্নিং অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে কুল অস্ট্রেলিয়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক দক্ষতাকে প্রমোট করে।
কিম্বার্লি স্বীকার করেন যে, কোভিড-১৯ এর কারণে অভিভাবকেরা নজীরবিহীন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। সে কারণে গতানুগতিকভাবে করার বিভিন্ন পদ্ধতি মানুষ ছুড়ে ফেলেছে।
অভিভাবকদেরকে ইতিবাচক থাকার বিষয়ে উৎসাহিত করেন তিনি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ পরিবারের সবার খুব কাছাকাছি এসে গেছে। এ সুযোগ কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করার পরামর্শ দেন তিন।
ভিক্টোরিয়া-ভিত্তিক সাউদার্ন মাইগ্রান্ট অ্যান্ড রিফিউজি সেন্টারের প্রধান রমেশ কুমার বলেন, তার প্রতিষ্ঠান যে-সব শিক্ষার্থীকে সহায়তা করে তাদের মধ্যে অনেকেই ভিন্ন রকম বাস্তবতার সম্মুখীন।
রমেশ কুমারের বহু ক্লায়েন্ট অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন সাফল্য অর্জনের জন্য। তবে, কোভিড-১৯ এর কারণে জব-কাট, সোশাল-আইসোলেশন এবং হোম-স্কুলিংয়ের কারণে সে-সব পরিবারের উপর অতিরিক্ত বোঝা চেপেছে।
সাউথ-ইস্ট কমিউনিটি লিঙ্কস ও স্থানীয় স্কুলগুলোর সঙ্গে মিলে যৌথভাবে এই প্রতিষ্ঠানটি শিশুদেরকে ঘরে থেকে পড়াশোনার উপকরণ যোগায়।
রমেশ কুমার বলেন, যে-সব শিক্ষার্থীর বাবা-মা ইংরেজি বলতে পারেন না, তাদেরকে ঘরে থেকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হতে হয়।
রমেশ কুমার বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে অভিবাসী বা শরণার্থী ব্যাকগ্রাউন্ডের কোনো কোনো শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম-নেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না। পড়াশোনার প্রতি পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগও অনেক সময়ে তাদের থাকে না।
কোভিড-১৯ এর কারণে অনলাইনে হোমওয়ার্ক সাপোর্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে পড়াশোনায় সহায়তা করছে সাউদার্ন অ্যান্ড মাইগ্রান্ট রিফিউজি সেন্টার।
অবসরপ্রাপ্ত গণিত শিক্ষক ওয়াল্টার ভেলস শিক্ষার্থীদেরকে সহায়তা করে থাকেন।
২০১০ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে হাইস্কুল শিক্ষার্থীদেরকে হোমওয়ার্ক টিউটর হিসেবে সহায়তা করে থাকেন তিনি। এটি পুরোটাই স্বেচ্ছাশ্রম।
ভেলস বলেন, টার্ম-১ এর শেষ থেকে হোমওয়ার্ক সাপোর্ট যখন অনলাইনে দেওয়া শুরু হলো তখন থেকে তিনি অনলাইনে জুমের মাধ্যমে টিউটোরিং করছেন।
আশ্রয়প্রার্থী এবং শরণার্থী পরিবারগুলো থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দেখে তিনি েএই কষ্টসাধ্য কাজটি চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত বোধ করেন।
২০১০ ও ২০১১ সালে নিউ জিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ভূমিকম্পের ঘটনার পর শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা পর্যালোচনা করে দেখেন যে, হোম-বেসড লার্নিংয়ের কয়েক সপ্তাহ পরে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই বিষয় লক্ষ করেছেন মোনা পেরেজ তার সন্তানদের ক্ষেত্রেও।
ভেলস বলেন, অভিভাবকদেরকে এটা মনে রাখতে হবে যে, তারা শিক্ষক নন। এ বিষয়গুলো সহজ রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
নিউ সাউথ ওয়েলসে শিক্ষার্থীরা সোমবার, ১১ মে থেকে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। সপ্তাহে এক দিন করে। পাবলিক স্কুলগুলোতে যখন থেকে ফেস-টু-ফেস স্কুলিং পুনরায় শুরু হবে, তখন থেকে ইয়ার-১২ শিক্ষার্থীরা পূর্ণকালীন স্কুলিং শুরু করবে।
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় স্কুল খোলা রয়েছে। অভিভাবকরা চাইলে তাদের সন্তানদেরকে স্কুলে পাঠাতে পারবেন।
ভিক্টোরিয়ায় সব সকরকারি স্কুলে টার্ম-২ এ রিমোট ও ফ্লেক্সিবল লার্নিং অ্যারেঞ্জমেন্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে-সব শিক্ষার্থী ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে তাদেরকে ঘরেই অবস্থান করতে বলা হচ্ছে।
তাসমানিয়ায় যেখানে যেখানে সম্ভব শিক্ষার্থীদেরকে ঘরে থেকেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নর্দার্ন, নর্থ-ওয়েস্ট এবং সাউদার্ন রিজিওনে স্কুলগুলো খোলা রয়েছে সেসব শিক্ষার্থীর জন্য, যাদেরকে ঘরে দেখাশোনা করার কেউ নেই।
সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কম হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরকে স্কুলে যেতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
নর্দার্ন টেরিটোরিতে সকল শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে স্কুলে উপস্থিত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কুইন্সল্যান্ডে, সোমবার ১১ মে থেকে প্রেপ, ইয়ার-১, ইয়ার ১১ এবং ইয়ার ১২ শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল পুনরায় খোলা হয়েছে। ইয়ার-২ থেকে ইয়ার-১০ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য বলা হয়েছে, তাদের মধ্যে যাদেরকে ঘরে তত্ত্বাবধান করা এবং পড়াশোনা করানো সম্ভব হবে, তাদেরকে ঘরে থাকতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপিটাল টেরিটোরির স্কুলগুলো টার্ম-২ থেকে রিমোট টিচিং করছে। এসেনশিয়াল ওয়ার্কারদের সন্তানদেরকে নয়টি স্কুল অনসাইট সুপারভিশন করছে।
হোম লার্নিং রিসোর্স বিষয়ক আরও তথ্যের জন্য ভিজিট করুন:
ACT
NSW
Northern Territory
Queensland
South Australia
Tasmania
Victoria:
Western Australia: