ব্রাজিলের নারী অ্যানি উইলি ডো সান্টোস অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করতে এসেছেন। এটা যদি একটি ফ্রি অনলাইন কোর্স না হতো তাহলে হয়তো তিনি এদেশে আসতেন না।
৩৮ বছর বয়সী এই নারী ব্রাজিল থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে দুই সপ্তাহের কোর্স 'Future-Proofing the Health Workforce' করার জন্য।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে মিজ ডো সান্টোস ব্রিসবেনে আসেন। বর্তমানে তিনি গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার অফ অ্যাডভান্সড হেলথ সার্ভিসেস ম্যানেজমেন্ট কোর্স করছেন।
কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন দেশের সীমান্তগুলো বন্ধ করা হলে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অবস্থান করা ও নতুনভাবে আসার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা লাগে।
তবে, অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত এজেন্সি Austrade-এর সহায়তায় ২০ টি অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ডিজিটাল এডুকেশন প্লাটফরম FutureLearn-এর সঙ্গে মিলে বিশ্ব জুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০ টি ফ্রি কোর্সের ব্যবস্থা করেছে।
FutureLearn-এর চিফ কন্টেন্ট অ্যান্ড পার্টনারশিপ অফিসার জাস্টিন কুক বলেন, এটি যে-কোনো স্থানের যে-কোনো শিক্ষার্থীর জন্য উপযোগী।
'Study with Australia' ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইতোমধ্যে অর্ধ-মিলিয়নেরও বেশি শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এদের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্য, ভারত, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, দি ফিলিপিন্স এবং ইন্দোনেশিয়ার।
সাইন-আপ করা একজন শিক্ষার্থী হলেন আনিসা হুসনি। লকডাউন ও রমযানের সময়ে তিনি দেখতে পান, তার হাতে অতিরিক্ত সময় আছে।
এ সময়টিকে কাজে লাগাতে ৩৬ বছর বয়সী মিজ হুসনি ডেকিন ইউনিভার্সিটির দুই সপ্তাহের একটি কোর্স 'Introduction to Sustainability and Development'-এ ভর্তি হন।
মালয়শিয়ার মেলিসা ট্যান তার জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে ইউনিভার্সিটি অফ ওলঙগঙ-এ দুই সপ্তাহের একটি কোর্স 'Power of Podcasting' করছেন। এখন তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন একটি দীর্ঘমেয়াদী কোর্স করতে চান।
এটা এমনই একটি বাজার যা ফেডারাল সরকার হারাতে চায় না।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অর্থনীতিতে গত বছরে ২৫০,০০০ কর্ম-সংস্থান তৈরি করেছে এবং ৪০ বিলিয়ন ডলার উপার্জিত হয়েছে তাদের মাধ্যমে।
Austrade-এর হেড অফ গ্লোবাল এডুকেশন রেবেকা হল বলেন, এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীর সময়টিতে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির সুযোগ দেওয়া হচ্ছে এবং এটি একটি 'Try before you buy' স্কিম।
অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর এই সময়টিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা পর্যাপ্ত সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে না বলে বলা হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে বিশ্বে অস্ট্রেলিয়ার এতদিন ধরে যে সুনাম রয়েছে তা এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ায় অস্থায়ী ভিসাধারীরা তাদের সুপার অ্যানুয়েশন ফান্ড থেকে ১০,০০০ ডলার পর্যন্ত উত্তোলন করার অনুমতি পেয়েছিলেন। এই সুযোগ ৩০ জুন শেষ হয়ে গেছে।
নিউ জিল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স এবং জার্মেনি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে এক্সটেনসিভ ফাইন্যান্সিয়াল হার্ডশিপ সাপোর্ট প্রদানের প্রস্তাব করেছে।
অস্ট্রেলিয়ার এডুকেশন মিনিস্টার ড্যান টিহান বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার চাহিদা বাধাগ্রস্ত হবে না। এই স্বাস্থ্য সঙ্কটে দেশটির প্রতিক্রিয়া দেখে এই চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকবে বলে আশা করা হয়। তারা যখন ভর্তি হয় তখন আশা করা হয় যে, তাদের কাছে যাতায়াত খরচ, অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর প্রথম বছরে জীবন-যাপন ও পড়াশোনার খরচ থাকবে এবং প্রয়োজন হলে তারা তাদের পরিবারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করবে।
কিন্তু, এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে শিক্ষার্থীদের জন্য তাদের পরিবারের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করা কঠিন হয়ে গেছে। কারণ, তারাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
ক্যানবেরায় অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ব্রায়ান শমিট বলেন, সরকার আরও কিছু করতে পারতো।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।
ইউনিভার্সিটি নেতৃবৃন্দ বলছেন, শিক্ষার্থীদের সহায়তায় যা যা করা সম্ভব ছিল সে-সব তারা করেছেন। তবে, এ পর্যন্ত এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে আনুমানিক প্রায় ২২৫ মিলিয়ন ডলার।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ ক্যানবেরা একটি পাইলট প্রোগ্রাম নিয়ে ফেডারাল সরকারের সঙ্গে কাজ করছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় ভাগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদেরকে ক্যানবেরায় একটি চার্টার করা প্লেনের মাধ্যমে নিয়ে আসার জন্য।
পৌঁছানোর পর শিক্ষার্থীদেরকে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হবে। আর, তাদেরকে করোনাভাইরাস পরীক্ষাও করা হবে।
আপনার ভাষায় করোনাভাইরাস নিয়ে হালনাগাদ তথ্যের জন্য দেখুন: sbs.com.au/coronavirus