বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া একমাত্র বিদেশী যোদ্ধা উইলিয়াম ওডারল্যান্ড বীরপ্রতীক

William A S Oduerland fought for Bangladesh in 1971

William A S Oduerland fought for Bangladesh in 1971 Source: The Daily Star

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একমাত্র বিদেশি ওলন্দাজ-অস্ট্রেলীয় নাগরিক উইলিয়াম ওডারল্যান্ড বীরপ্রতীক। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব বীর প্রতীক প্রদান করে। তিনিই একমাত্র বিদেশী এই রাষ্ট্রীয় খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া একমাত্র বিদেশী যোদ্ধা উইলিয়াম ওডারল্যান্ড বীরপ্রতীক কে নিয়ে কথা বলেছি শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব ডক্টর কাইয়ুম পারভেজ এর সঙ্গে।


Dr. Qayum Parvez
Dr. Qaiyum Parvez Source: Supplied
১৯৭০ সালের শেষ দিকে ওডারল্যান্ড ঢাকায় বাটা স্যু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নেদারল্যান্ডস থেকে প্রথম ঢাকায় আসেন। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ আন্দোলনে উত্তাল ছিল তখন থেকেই তিনি পাকিস্তানির বর্বরতা প্রতক্ষ করতেন। ১৯৭১-এ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মার্চের গণ আন্দোলন, ২৫ মার্চ এর রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট এবং এর পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকান্ড ও নৃশংস বর্বরতার প্রতিবাদ জানাতে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন।

বহুজাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়াতে তাঁর পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর নীতিনির্ধারক মহলে অনুপ্রবেশ করার এবং বিভিন্ন তথ্য জানার সুযোগ পান। তার ঢাকা সেনানিবাসে অবাধ যাতায়াত এর সুযোগ ছিল। তিনি পাকিস্তানীদের গোপন সংবাদ সংগ্রহ করা শুরু করেন এবং এসব সংবাদ তিনি গোপনে প্রেরণ করতেন ২নং সেক্টর এর ক্যাপ্টেন এ. টি. এম. হায়দার এবং জেড ফোর্সের কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এর কাছে।এছাড়াও তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা এবং বিভিন্ন ধরণের সাহায্য সহায়তা করতেন।

তিনি মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস নির্যাতন ও গণহত্যার আলোকচিত্র তুলে গোপনে বহিঃবিশ্বের বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমে পাঠাতেন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে কাজ করতেন । বর্বর পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড, বীভৎস মরণযজ্ঞ প্রত্যক্ষ করে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ্রগহণের সিদ্ধান্ত নেন। যুদ্ধকালে তিনি প্রধান সেনাপতি এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। সে সময় তিনি ঢাকাস্থ অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাইকমিশনের গোপন সহযোগিতা পেতেন। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হবার পর তিনি ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং পূর্বতন কর্মস্থলে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করে নিজ দেশ অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যান।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ ও অসামান্য নৈপুণ্যতার কারণে পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক সম্মাননায় ভূষিত করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর প্রতীক পুরস্কারপ্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম ২ নম্বর সেক্টরের গণবাহিনীর তালিকায় ৩১৭ নম্বর। ১৯৯৮ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে ওডারল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। তিনি বীর প্রতীক পদকের সম্মানী ১০,০০০ টাকা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টে দান করে দেন। একমাত্র বিদেশি হিসেবে তাঁকে বাংলাদেশ সরকার এই খেতাবে ভূষিত করেছে। মৃত্যুর পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত গর্বভরে ও শ্রদ্ধার্ঘ্য চিত্তে নামের সঙ্গে বীর প্রতীক খেতাবটি লিখেছিলেন তিনি।বাংলাদেশের প্রতি অপরিমেয় ভালবাসার জন্য বাঙ্গালী জাতির কাছে তিনি বিশেষভাবে সম্মানিত ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে।


Share