আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীরা যারা বোটে করে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে তাদের আবেদন করা নিয়ে উদ্বেগ

Asylum seekers arriving by boat

Source: AAP

আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থীরা যারা বোটে করে অস্ট্রেলিয়ায় আসে, তাদের হাজার হাজার অ্যাসাইলাম আবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এদের অ্যাসাইলামের আবেদনগুলো অন্য আবেদনগুলোর মতো বিবেচনা করা হচ্ছে না। ফলে তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন বিশেষজ্ঞরা সিডনিতে একত্রিত হন। তারা রিফিউজি স্ট্যাটাসের বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে আলোচনা করেন।


প্রায় দুই বছরে ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থী শরণার্থী বোটে করে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছে। তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস কমিশন।
 
২০১২ সালের পর যে-সব আশ্রয়প্রার্থী অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন, সুরক্ষা লাভের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে তাদেরকে ৪ বছর পর্যন্ত বাধা আরোপ করা হয়েছে। তাদের অবস্থা নিয়ে তাই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
হিউম্যান রাইটস কমিশনার Edward Santow বলেন, তাদের কেসগুলো প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘসূত্রিতার ফলে তাদের নানা রকম সমস্যা হচ্ছে।
 
২০১২ সাল থেকে আইন ও নীতিমালার ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার ফলে বোটে করে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের কেসগুলো অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থী গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় ভিন্নভাবে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
 
অস্ট্রেলিয়ান এবং আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যারা শরণার্থী আইন নিয়ে কাজ করেন, তারা সিডনিতে একটি সম্মেলনে একত্রিত হন। সেখানে প্রশ্ন তোলা হয় যে, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তি যে সত্যিকার অর্থেই একজন শরণার্থী, তা কীভাবে বোঝা যাবে?
 
কোয়ালিশন সরকার এই আশ্রয়প্রার্থী গোষ্ঠীর নাম দিয়েছে 'Legacy Caseload'। আর, প্রটেকশন বা সুরক্ষা ভিসার জন্য তাদের উপযুক্ততার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী আইনী বাধা আরোপ করেছে। Mental Health Nursing এর চেয়ার এবং ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার Mental Health and Suicide Prevention Research Group এর নেতা, প্রফেসর Nicholas Procter আশ্রয়প্রার্থী এই গোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেন। 
 
NSW বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা যায়, Caseload গোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীর কোনো দেশ নেই। তারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ইরান, ইরাক, লেবানন, পাকিস্তান, সোমালিয়া, শ্রী লঙ্কা, সুদান এবং ভিয়েতনামের মতো দেশ থেকে আসেন।
 
প্রফেসর Procter বলেন, এই গোষ্ঠীর লোকদের আত্মহত্যার হার দেখা হয়েছে গবেষণার একটি অংশে।
সম্মেলনের অন্যতম বক্তা Dr Hillary Evans Cameron ইতোপূর্বে আইনজীবি হিসেবে কাজ করেছেন। এখন তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টরেন্টোতে কর্মরত আছেন। শরণার্থী নির্ণয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি গবেষণা করছেন।
 
তিনি বলেন, সিদ্ধান্ত-গ্রহণ-প্রক্রিয়ায় উভয় পক্ষেই অনেক বাধা-বিপত্তি রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেরত যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো দেশ নিরাপদ কিংবা অনিরাপদ কিনা সেই ইস্যু, ক্রস-কালচারাল ভুল-বোঝাবুঝি এবং শরণার্থীদের স্মরণ-শক্তির ভূমিকার বিষয়টি। 
আশ্রয়প্রার্থী আবেদনকারীদের মধ্যে বড় একটি অংশ প্লেনে করে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। গত মাসে ফেডারাল সরকার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ১ জুলাই ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০১৯ পর্যন্ত  চার হাজারের বেশি ব্যক্তি প্লেনে করে এসেছেন এবং সুরক্ষা লাভের জন্য আবেদন করেছেন।
 
এর ফলে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে প্লেনে করে আসা আশ্রয়প্রার্থী আবেদনকারীদের সংখ্যা ৯৫,০০০ ছাড়িয়ে গেছে।
 
ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলসের Kaldor Centre for Refugee Law এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন Regina Jefferies। তিনি এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, বৈধ ভিসা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর বহুল সংখ্যক ব্যক্তি সুরক্ষা ভিসার জন্য আবেদন করে থাকে। এরপর তারা এখানে সেটল করে। অস্ট্রেলিয়ান এয়ারপোর্টে নামার পরপরই কত লোক ভিসার জন্য আবেদন করে এবং কতগুলো আবেদন নাকচ করা হয়, সে সম্পর্কে তেমন একটা জানা যায় না।
 
মিজ Jefferies বলেন, পরিষ্কার তথ্যের অভাবে প্রশ্ন উঠে যে, অ্যাসাইলাম অন অ্যারাইভালের জন্য কারা কারা আবেদন করতে পারবে, সেই বিষয়ে খোদ ডিপার্টমেন্টই তাদের নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করছে কিনা।
 
তিনি বলেন, কতজন প্রটেকশন এপ্লিকেশন অন অ্যারাইভাল জমা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন শুধুমাত্র সেই সংখ্যা জানা যায়। আর, গত পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বার্ষিক ১০০ এর নিচে রয়ে গেছে।
 
মিজ Jefferies বলেন, কতজন এসেছেন, এয়ারপোর্টে কতজন আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে কতজনের সেই আবেদন নাকচ হয়ে গেছে এবং এর ফলে কতজনকে অস্ট্রেলিয়া থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।
শরণার্থী হিসেবে সুরক্ষা লাভের আবেদনকারীদের নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, অন্যান্য দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়া ক্রমাগতভাবে বিশ্বের খুবই অল্প-সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করছে।
 
২০১৮ সালের শেষ নাগাদ UNHRC রিপোর্ট করে যে, সংখ্যা ৭০.৮ মিলিয়ন লোককে জবরদস্তি করে বাস্তুচ্যূত করা হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং সাউথ সুদানের লোকেরা।








Share