ব্ল্যাকটাউন সিটির ইয়াং সিটিজেন অফ দ্য ইয়ার ফাইনালিস্ট সপ্তম শ্রেণীর প্রতিভাবান কিশোর রাইয়ান রহমান একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে চায়

Blacktown City young citizen award finalist Year 7 student Raiyan Rahman wants to be a tech entreprenuer.

Blacktown City young citizen award finalist Year 7 student Raiyan Rahman wants to be a tech entreprenuer. Source: Rubel Rahman

সম্প্রতি নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্ল্যাকটাউন সিটি কাউন্সিল থেকে ইয়ং সিটিজেন অফ দ্য ইয়ার এওয়ার্ড-এ ফাইনালিস্ট হয়েছে ইয়ার সেভেনের একজন প্রতিভাবান কিশোর রাইয়ান রহমান।


রাইয়ানের প্রযুক্তিতে জ্ঞান এবং দক্ষতা দেখে অবাক হতে হয়, সে তার নিজস্ব কোডিং প্ল্যাটফর্ম রাইয়ান'স কোডিং হাবের মাধ্যমে অন্যান্য ছোট বাচ্চাদের কোডিং, রোবোটিক্স শেখাচ্ছে ।

সে তার নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার সমবয়সীদের ক্যালকুলাস এবং গণিত শেখাচ্ছে। এছাড়াও রাইয়ান খুব আকর্ষণীয় একটি প্রকল্পও হাতে নিয়েছে যেটি হচ্ছে এআই ফেস ডিটেকশন সিস্টেম যা মানুষের আবেগ চিহ্নিত করতে পারে।

সে সম্প্রতি নর্থহোম গ্রামার হাই স্কুলের বৃত্তি পেয়েছে তার একাডেমিক সাফল্যের জন্য।

রাইয়ান ও তার বাবা রুবেল রহমান কথা বলেছেন এসবিএস বাংলার সাথে। 

রাইয়ান কীভাবে প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করলো এ বিষয়ে তার বাবা রুবেল রহমান, যিনি নিজেও একজন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, তিনি এসবিএস বাংলাকে বলেন, রাইয়ানকে খুব অল্প বয়স থেকেই গেম-বেইসড কোডিংয়ের প্রোগ্রাম দেয়া হয়, তখন দেখা যায় যে সে খুব সহজেই সেগুলো করতে পারছে, এতে তার বেশ আগ্রহও ছিল।
Year 7 student Raiyan is holiding his Blacktown City's young citizen finalist award.
Year 7 student Raiyan is holiding his Blacktown City's young citizen finalist award. Source: Rubel Rahman
ব্ল্যাকটাউন সিটি কাউন্সিলের এওয়ার্ড সম্পর্কে রাইয়ান রহমান বলে যে, আমি মনে করি কাউন্সিল আমাকে পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে কারণ আমি অনেক ছেলেমেয়েদের ট্রেনিং দিয়েছি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ইভেন্ট অস্ট্রেলিয়া থেকে একটি অনুদান পেয়েছি এবং আমি সিডনির নর্থহোম গ্রামারে আমার পড়াশোনার কৃতিত্বের জন্য একটি বৃত্তি পেয়েছি।
রাইয়ান তার করা প্রকল্পগুলি সম্পর্কে বলে যে, তার গণিত এবং কোডিং শেখানোর জন্য দুটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, রায়ানস কোডিং হাব, এবং ম্যাথনিশিয়ান।

"মজার ব্যাপার হল, আমি ৫ বছর বয়সে নামতা শিখতে সমস্যায় পড়েছিলাম, তাই আমি নামতা শিখতে একটি প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলাম।"

"এসময় আমি themathnician.com.au নামে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছি যার মাধ্যমে বাচ্চাদের ক্যালকুলাস এবং অন্যান্য ধরণের গণিত শেখাই," রাইয়ান এসবিএস বাংলাকে বলছিলো।

এছাড়াও সে একটি এআই(আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ফেস ডিটেকশন সিস্টেমও তৈরি করেছে, যা মানুষকে মুখের ভাব চিনতে সাহায্য করে।
Blacktown City young citizen award finalist Year 7 student Raiyan Rahman with his parents.
Blacktown City young citizen award finalist Year 7 student Raiyan Rahman with his parents. Source: Rubel Rahman
এ প্রসঙ্গে সে বলে "উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি খুশি হন এবং তখন যদি আমার ফেস ডিটেকশন সিস্টেমটির দিকে তাকান, তখন সেটি আপনাকে বলবে যে আপনি খুশি। এটি মানুষের আবেগ যেমন দুঃখ, সুখ, বিস্ময় ইত্যাদি চিনতে পারে।"

পড়াশোনা, কোডিং-প্রোগ্রামিংসর্বোপরি এবং সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথমেটিক্স (STEM) শিক্ষার প্রতি তার আগ্রহ প্রসঙ্গে রাইয়ান বলে যে, এ প্রসঙ্গে আমি আমার পারিবারিক ইতিহাসে ফিরে যেতে চাই এবং এখন পর্যন্ত আমার অর্জনের সাথে এটি কীভাবে প্রাসঙ্গিক তা বলতে চাই।

সে বলে, "আমার প্রপিতামহ (পিতামহের বাবা)একজন কৃষক ছিলেন কিন্তু শিক্ষার প্রতি তিনি গুরুত্ব দিতেন। তিনি আক্ষরিক অর্থে তার সমস্ত সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে অনেক কষ্ট করেছিলেন, তবে একসময় তিনি সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সবাইকে শিক্ষিত করে তুলেছিলেন।"

"আমার দাদা পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কারণ তার পরিবার তার এসএসসির জন্য টিউশন ফি দিতে সক্ষম ছিল না, কিন্তু আমার দাদা কখনই হাল ছাড়েননি। ছোটবেলায় আমার দাদা রাতে গ্রামের বাজারে ব্যবসা করলেও দিনের বেলা স্কুলে যেতেন। ছোটবেলায় আমার দাদা নিজের লেখাপড়ার খরচ নিজেই চালাতেন। একসময় তিনি বাংলাদেশের একটি মর্যাদাপূর্ণ সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে একজন বিজ্ঞানী হয়ে ওঠেন।"
রাইয়ান বলে যে, আমি এই কথাগুলো বলছি কারণ আমার পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে এখানে সেটা বলার সুযোগ আছে এবং, আমার আজকের পরিচয়ের সাথে এটি প্রাসঙ্গিক।

এছাড়াও, আমি এটা বলতে খুব গর্ববোধ করি যে, আমার মাও একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী যিনি আমাকে শিশুকালেই বেসিক কোডিং শিখিয়েছিলেন।

রাইয়ান ভবিষ্যতে এআই ডেভেলপার হয়ে একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হতে চায়।

"আমি কমিউনিটিকে আরও সাহায্য করতে চাই এবং আমরা যে সমাজে বাস করব তা এগিয়ে নিতে চাই।"

ক্রিপ্টো কারেন্সি এবং এনএফটি-এর মতো প্রযুক্তিগুলি কী এবং সেগুলি কীভাবে আমাদের ভবিষ্যতকে রূপ দেবে এ প্রসঙ্গে রাইয়ান বলে, আমার দৃষ্টিতে ক্রিপ্টো সাধারণ মুদ্রার মতো যা অন্য মুদ্রায় রূপান্তরিত করা যায়।

"তবে, একমাত্র পার্থক্য হল যে সমস্ত ক্রিপ্টো ব্লকচেইনে (অনলাইন লেজার) সংরক্ষণ করা হয় এবং ক্রিপ্টো ব্যবহার করে যে লেনদেনগুলি করা হয় তা অপরিবর্তনীয়। আমি মনে করি ক্রিপ্টো উচ্চ গতির লেনদেন করে ভবিষ্যত পরিবর্তন করবে কিন্তু এর ঝুঁকিও আছে কারণ এটি হ্যাকারদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়ে উঠতে পারে।"

এনএফটি বা নন-ফাঞ্জিবল টোকেন সম্পর্কে রাইয়ান বলে যে এটি কপি করা যাবে না কারণ ছবির ভিতরে একটি বিশেষ কোড রয়েছে।

"আপনি ক্রিপ্টো দিয়ে এনএফটি (NFT) কিনতে পারেন। এনএফটিগুলিও বিশ্বে বিপ্লব ঘটাবে কারণ হয়তো একটি এনএফটি কিনে মেটাভার্সের থ্রীডি (3D) গ্রাফিক্সে তৈরি এক টুকরো জমির অধিকার পেতে পারেন। এই জমিটি সত্যিকারের জমির মতোই দরকারী এবং আকর্ষণীয় হতে পারে। আপনি একটি সুন্দর বাড়ি, খাঁড়ি বা একটি বাগান তৈরি করতে পারেন। একসময় আমরা আমাদের চারপাশে বিশ্বের এমন পরিবর্তনই হয়তো দেখবো!"

রাইয়ান রহমান এবং রুবেল রহমানের পুরো আলাপচারিতাটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

আরও দেখুন:

Share