জীবনযাত্রার সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
অস্ট্রেলিয়ার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর সোমবার রেট কমানোর প্রত্যাশার ঠিক পরেই এই পূর্বাভাস এসেছে, এবং এর অর্থ এটি অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলোর জন্য সংকট আরো কঠিন করে তুলতে পারে।
ওয়াশিংটনে এর বার্ষিক সভায়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ, পিয়েরে-অলিভার গৌরিঞ্চাস, এমন একটি বার্তা দিয়েছেন যা মানুষ শুনতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন,"আমরা সুসংবাদ দিয়ে শুরু করছি, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে আমরা জয়ী হতে যাচ্ছি।"
তবে এরপরে যা বলা হয়েছে তা বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান শুনতে চাইবে না।
যদিও আইএমএফের পূর্বাভাস হচ্ছে বেশিরভাগ দেশে মুদ্রাস্ফীতি কমবে, তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রে তা ভিন্ন থাকবে বলে আভাস দেয়া হয়েছে।
এটি এমনকি ভবিষ্যদ্বাণী করে যে অস্ট্রেলিয়ার ভোক্তা মূল্য সূচক আগামী বছরের শেষ নাগাদ ২.৮ শতাংশ থেকে ৩.৬ শতাংশে উন্নীত হবে, যা ৪১টি দেশের মধ্যে আগামী বছরের শেষ নাগাদ দেশটিকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির দেশে পরিণত করবে।
এদিকে মধ্য ইউরোপের স্লোভাকিয়ায় সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হার থাকবে, যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৪.৮ শতাংশে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
এবং অস্ট্রেলিয়ার তুলনায়, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মতো অন্যান্য উন্নত অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশ বা তার কম থাকবে।
স্টিফেন স্মিথ ডেলয়েট এক্সেস ইকোনমিকসের (Deloitte Access Economics) অংশীদার। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি কমানোর ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে থাকার কারণ রয়েছে।
তিনি বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার মুদ্রাস্ফীতি অন্যান্য দেশের তুলনায় ধীরে কমছে কারণ এটি শুরুও হয়েছিল পরে। এছাড়াও, সরকার জনগণকে জ্বালানি খরচে সাহায্য করার জন্য অর্থ দিচ্ছে, যার ফলে মূল্যস্ফীতি কম মনে হয়। কিন্তু পরের বছর এই সাহায্য বন্ধ হয়ে গেলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে।
অস্ট্রেলিয়ান ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকস আগামী সপ্তাহে সর্বশেষ ত্রৈমাসিক তথ্য সরবরাহ করবে।
তবে সোমবার অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক-এর ডেপুটি গভর্নর অ্যান্ড্রু হাউসার রেট কমাতে ধীরে চলো নীতির ইঙ্গিত দিয়েছেন।
মিঃ হাউসার সর্বশেষ চাকরির বাজারের তথ্য সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কারণ তিনি এটি এত শক্তিশালী হবে বলে আশা করেননি।
গত মাসে, অস্ট্রেলিয়া ৪.১ শতাংশ বেকারত্বের হার রেকর্ড করেছে, যা শ্রমবাজারকে স্থিতিশীল এবং টানটান অবস্থায় দেখায়।
তবে ১৯৯০-এর দশকের পর থেকে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে ধীর গতিতে রয়েছে এবং এই সংখ্যা প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
ডেলয়েটের স্টিফেন স্মিথ বলেছেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি আগামী কয়েক বছরে মন্থর হয়ে পড়বে।
তিনি বলছেন, "এই মুহুর্তে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে এমন কয়েকটি মূল বিষয়ের মধ্যে আছে, চীনের সাথে সম্পর্ক এবং আবাসন বাজারের নিম্নগতি।"
তাছাড়া অস্ট্রেলিয়ার উৎপাদনশীলতা নিয়েও চিন্তিত স্মিথ।
তিনি উল্লেখ করেছেন যে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি তার প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট গতিশীল নয়।
অস্ট্রেলিয়ার ওপর আইএমএফের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস ক্যানবেরা থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডাটন বলেছেন যে আইএমএফের খবরটি অনেক অস্ট্রেলিয়ানকে আতঙ্কিত করবে।
তিনি বলছেন, সরকার যদি মূল্যস্ফীতি কমাতে গত তিনটি বাজেটে পদক্ষেপ নিত, তাহলে অস্ট্রেলিয়ান পরিবারগুলি ইতিমধ্যেই তাদের মর্টগেজের জন্য কম সুদ দিত। আমি মনে করি আইএমএফ (IMF) সতর্ক করছে যে আলবানিজি সরকার কীভাবে অর্থনীতিকে ভালভাবে পরিচালনা করতে হয় তা জানে না, যে কারণে এখানে মুদ্রাস্ফীতি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এই কারণে, অস্ট্রেলিয়ানরা আলবানিজি সরকারের দুর্বল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে ভুগছে।
আবাসন মন্ত্রী ক্লেয়ার ও'নিল তার সরকারের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, তবে এটাও স্বীকার করেছেন যে অস্ট্রেলিয়ানরা জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে বেশ সংকটে আছে।
ফেডারেল নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকায়, জীবনযাত্রার সংকট উভয় প্রধান দলের জন্য একটি প্রধান সমস্যা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারে ক্লিক করুন।
পাওয়া যাচ্ছে?
এসবিএস বাংলা এখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত দক্ষিণ এশীয় সকল জনগোষ্ঠীর জন্য এসবিএস সাউথ এশিয়ান চ্যানেলের অংশ।
এসবিএস বাংলা লাইভ শুনুন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় এসবিএস সাউথ এশিয়ান-এ, ডিজিটাল রেডিওতে, কিংবা, আপনার টেলিভিশনের ৩০৫ নম্বর চ্যানেলে। এছাড়া, এসবিএস অডিও অ্যাপ-এ কিংবা আমাদের ওয়েবসাইটে। ভিজিট করুন
আর, এসবিএস বাংলার এবং ইউটিউবেও পাবেন। ইউটিউবে সাবসক্রাইব করুন চ্যানেল। উপভোগ করুন দক্ষিণ এশীয় ১০টি ভাষায় নানা অনুষ্ঠান। আরও রয়েছে ইংরেজি ভাষায় ।