আগামীকাল বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

A Bangladeshi carries a giant photograph of Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina.

A Bangladeshi carries a giant photograph of Bangladesh Prime Minister Sheikh Hasina. Source: AAP

আর একদিন পর বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশটির একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে যেমন রয়েছে আনন্দ-উৎসাহ, অন্যদিকে রয়েছে সংঘাত-সংঘর্ষের শঙ্কা। বিরোধীদলের অভিযোগ, তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, বিরোধী দলের কর্মীদের জন্য এক ধরনের ভয়ের পরিবেশের মধ্যে বাংলাদেশের এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে।


বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের দাবি সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। দেশের সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে কিনা তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তবে সরকার দাবি করছে সংবাদমাধমের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না।এবার নিবন্ধিত ৩৯টি দলই প্রার্থী দিয়েছে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী যোগ হয়ে ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৮৪৭ জন।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। টানা ১৯ দিন বিরামহীনভাবে প্রার্থীরা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত ছিল। শুরু থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, মহা ধুম-ধামে  প্রচারণা চালিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও মহাজোটের প্রার্থীরা।
National Parliament House Bangladesh
National Parliament House Bangladesh Source: Wikimedia/ Kazal1968 (CC A SA 4.0)
১০ ডিসেম্বর থেকে এই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। এবারের নির্বাচনে মূলত দুটো জোটের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যার সঙ্গে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। দুই জোটের প্রার্থীর বাইরে আরো কিছু দল নিজ প্রতীকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে একটি ভিন্ন দিক রয়েছে। এবারই প্রথম সরকার ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের ৬টি আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে।

আগামীকাল রবিবার (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে।

এদিন যান চলাচলের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, ভোটগ্রহণের আগের দিন রাত ১২টা থেকে ভোটগ্রহণের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস,ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোটগুলোর চলাচলের ওপর উক্ত নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে।

তবে সারাদেশে ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে ২ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত ক্ষেত্র-বিশেষ আরো অধিককাল মোটরসাইকেল বা অনুরূপ যান চলাচল নিষেধ থাকবে।

এই নির্বাচন নিয়ে শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নজর রয়েছে। দশ বছর পর এই প্রথম একটি নির্বাচন হচ্ছে যাতে অংশ নিচ্ছে দেশটির সব প্রধান রাজনৈতিক দল। যদিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে খবর বেরুচ্ছে খুব কম। তারপরও জাতিসংঘসহ বেশ কিছু দেশ এই নির্বাচনের উপর নজর রাখছে।যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে  বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিক্রিয়া দিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশে মোবাইল থ্রিজি ও ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের ভোটের আগে ‘অপপ্রচার’ ঠেকাতে ইন্টারনেটের গতি কমানো হয়েছে বলে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর দেশের সব মোবাইল ফোন অপারেটরকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত মোবাইল ইন্টারনেটের থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে ।

তবে কতদিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকবে তা বলা হয় নি । থ্রিজি এবং ফোরজি ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হলেও ধীর গতির ইন্টারনেট টুজি সেবা এখনও চালু থাকবে। মোবাইল-ইন্টারনেট বন্ধ থাকলেও ব্রডব্যান্ড-ইন্টারনেট স্বাভাবিক থাকবে।

বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ আলাদা-আলাদাভাবে তাদের মতামত দিয়েছে।
UN secretary general Antonio Guterres ... not impressed
UN secretary general Antonio Guterres. Source: AAP
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেসের পক্ষে এক বিবৃতিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য এবং সবার অংশগ্রহণে হয় তা নিশ্চিত করতে। ওই বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, "সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নারী সমাজসহ সব বাংলাদেশি নাগরিকরা যেন নিরাপদে এবং নিশ্চিন্তে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নাগরিক সমাজ এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের তাদের ভূমিকা পালনে যেন পূর্ণ সমর্থন দেয়া হয়।"

ওই বিবৃতিতে একটি শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুর্নব্যক্ত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের নির্বাচনে তাদের মনোনীত পর্যবেক্ষক পাঠাতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র এ নিয়ে একটি বিবৃতিও দিয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের (এনডিআই) মাধ্যমে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন্স (আনফ্রেল) নামের একটি সংস্থাকে তহবিল দিবে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য। বাংলাদেশ সরকার ওই সংস্থাকে ভিসা না দেয়ায় ওই সংস্থাটি তাদের পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, যে-কোনো গণতান্ত্রিক নির্বাচনের আগে শান্তিপূর্ণভাবে মতপ্রকাশের অধিকার থাকতে হবে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তাদের কাজ করতে দিতে হবে এবং কোনো ধরনের সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয়ভীতির হুমকি ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে সবাইকে। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের অঙ্গীকার রক্ষায় উৎসাহিত করছি যাতে করে বাংলাদেশের সব মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে তাদের মতপ্রকাশ করতে পারেন।

অন্যদিকে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার বলেন, বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত নির্বাচনী প্রচারণায় উচ্চমাত্রার সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আর্ল রবার্ট মিলার আরো বলেন, ৩০ ডিসেম্বরে ভোটের দিন সহিংসতার আশঙ্কা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আশা করে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল-সমাবেশে সবার অধিকার থাকবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে। সবার জন্য সমান অধিকার থাকবে। সভা-সমাবেশ, মিছিল,মিটিংয়ের অধিকার থাকবে। এখন পর্যন্ত যে সহিংসতা হয়েছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন। ভোটের দিন অধিক মাত্রায় সহিংসতার আশঙ্কা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ব্যবস্থা নিতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। এই নির্বাচন যাতে বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তারা বাংলাদেশের সরকার, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ অফিসের একজন জুনিয়র মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেন, বাংলাদেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং বহুদলীয় নির্বাচন দেখতে চায় তার দেশ। যুক্তরাজ্যের বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা দফতর ইউকেএইড কিছু বেসরকারি সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য সহায়তা দিয়েছে।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .























Share