করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ হওয়ায় কর্মক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন তামিল শরণার্থী থুশান্তন কাগনেশ্বরেণ।
মেলবোর্নের একটি রিসাইক্লিং প্লান্টে কাজ করতেন তিনি। সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন ২৯ বছর বয়সী এই তামিল যুবক। তিনি ক্যাজুয়ালি কাজ করেন এবং তার কোনো সিক লিভ ছিল না। করোনা-আক্রান্ত হওয়ায় এখন তাকে বিনা-বেতনে বাধ্যতামূলকভাবে সেল্ফ-আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আবার কবে নাগাদ কাজে যেতে পারবেন তা নিয়ে তিনি বেশ উদ্বিগ্ন।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে ... খুবই কঠিন।”
“আমার বাড়িতে একা থাকা ... আমি অনেক নিঃসঙ্গ বোধ করি এবং মানসিক চাপ অনুভব করি।”
থুশান্তন কাগনেশ্বরেণ-এর মতো ক্যাজুয়াল কর্মীদের যাদের কোনো সিক লিভ নেই কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের জন্য সেল্ফ-আইসোলেশনে যেতে হয়, তাদেরকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি চাপ বাড়ছিল। ফেডারাল সরকার তাই গত সোমবার এ রকম কর্মীদের জন্য ।
জবকিপার এবং জবসিকার পেমেন্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে অস্থায়ী ভিসাধারীরা উপযুক্ত না হলেও তারা এই ‘প্যানডেমিক লিভ ডিজাস্টার পেমেন্ট’ পাওয়ার জন্য উপযুক্ততা লাভ করবেন।
অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে এর অন্তর্ভুক্ত করায় কোনো কোনো অভিবাসন সমর্থক-গোষ্ঠী খুশি হয়েছে। তবে, কেউ কেউ অবশ্য আরও বেশি সহায়তা আশা করেছিল।
অ্যাসাইলাম সিকার রিসোর্স সেন্টারের সিইও কন কারাপাঙ্গিয়োটিডিস বলেন,
“সঠিক সিদ্ধান্তের দিকে এটি একটি পদক্ষেপ। তবে, (লক্ষ্যে পৌঁছার ক্ষেত্রে) এখনও খুব একটা দূরত্ব অতিক্রম করা হয় নি।”
“প্রধানমন্ত্রী স্বল্প-মেয়াদী যে সমাধান প্রস্তাব করেছেন, তা চলমান সংক্রমণের পেছনে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেগুলোর সমাধান করে না।”
এটা বোঝা যাচ্ছে যে, মে মাসের মধ্যভাগ থেকে ভিক্টোরিয়ায় করোনাভাইরাসের যতো সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর প্রায় ৮০ শতাংশই ঘটেছে কর্মক্ষেত্রে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে।
মাইগ্রান্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার-এর ডাইরেক্টর ম্যাট কাঙ্কেল বলেন, অস্থায়ী ভিসাধারীদের সামনে দু’টি বিকল্প রয়েছে, তারা কি অসুস্থাবস্থায়ও কাজে যাবেন, নাকি বিল পরিশোধ করা থেকে বিরত থাকবেন? এর মধ্য থেকে একটি পথ বেছে নিতে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে।
তিনি বলেন,
“এই এককালীন পেমেন্ট খুবই সহায়ক উদ্যোগ।”
“(তবে) তাদের দরকার চলমান সহায়তার, এককালীন পেমেন্টের কোনো সিরিজ নয় ... এটাই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার থামানো যাবে।”
তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব
ভিক্টোরিয়া সরকার ইতোমধ্যে জনগণকে ৩০০ ডলার করে হার্ডশিপ পেমেন্ট দেওয়া শুরু করেছে। কোভিড-১৯ টেস্টিংয়ের জন্য যারা বাধ্যতামূলকভাবে আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, মূলত তারাই এই পেমেন্ট পাচ্ছেন। এছাড়া, যারা করোনাভাইরাস টেস্টে পজিটিভ ধরা পড়েছেন, তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে ১,৫০০ ডলার করে।
প্যানডেমিক লিভ ডিজাস্টার পেমেন্ট-এর অর্থায়ন করছে যৌথভাবে ভিক্টোরিয়া সরকার ও ফেডারাল সরকার। অস্থায়ী ভিসাধারীদেরকে অর্থ প্রদান করছে ভিক্টোরিয়া সরকার আর অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও স্থায়ী অভিবাসীদেরকে অর্থ প্রদান করছে ফেডারাল সরকার।
প্যানডেমিক লিভ ডিজাস্টার পেমেন্ট-এর উপযুক্ততা লাভ করতে হলে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার সময়টিতে কাজ থাকতে হবে এবং জবকিপার বা জবসিকার পেমেন্ট গ্রহণ করা যাবে না।
সোশাল সার্ভিসেস মিনিস্টার অ্যান রাস্টন বলেন, এই নতুন পেমেন্টের মাধ্যমে জনগণ কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে।
মঙ্গলবার রিপোর্টারদেরকে তিনি বলেন,
“ভিক্টোরিয়ানদের উপরে বিগত কয়েক দিনের লকডাউনের যে-বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে, তার স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে এই পেমেন্টের মাধ্যমে।”
“ভিক্টোরিয়ার বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে আমরা যে তৎপর ও সক্ষম- এটি নিশ্চিত করতে ভিক্টোরিয়া সরকারের সঙ্গে আমরা আরও নিবিড়ভাবে এবং সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করা চালিয়ে যাব।”
মিস্টার কাগনেশ্বরেণ বলেন, ভিক্টোরিয়া সরকারের কাছ থেকে তিনি ৩০০ ডলার হার্ডশিপ পেমেন্ট পেয়েছেন। তিনি এখনও পুরো ১,৫০০ ডলার পেমেন্ট পান নি।
তবে, করোনাভাইরাস টেস্ট করার জন্য তিনি অনুতপ্ত নন, বলেন তিনি।
“আমি মনে করি, সবারই টেস্ট করা উচিত। তারা অর্থ প্রদান করুক বা না করুক। কারণ, এটি জীবনের প্রতি হুমকি।”
“সবারই উচিত টেস্ট করাতে যাওয়া, সরকারের সহায়তায় কিংবা সহায়তা ছাড়াও।”
ফেডারাল সরকার জানিয়েছে, প্যানডেমিক লিভ ডিজাস্টার পেমেন্ট প্রদান করা চালিয়ে যাবে তারা। যতো দিন এর প্রয়োজন থাকবে, ততো দিন। যারা একাধিক বার সেল্ফ-আইসোলেশনে যেতে বাধ্য হবেন, তারাও এটি পাবেন।
অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে অবশ্যই পরস্পরের মাঝে কমপক্ষে ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জন-সমাগমের সীমা সম্পর্কে জানতে আপনার রাজ্যের নিষেধাজ্ঞাগুলো দেখুন।
মেট্রোপলিটন মেলবোর্নের বাসিন্দাদেরকে চতুর্থ পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞাগুলো অনুসরণ করতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই রাত ৮:০০ পিএম থেকে ভোর ৫:০০ এএম পর্যন্ত কার্ফিউ মেনে চলতে হবে। নিষেধাজ্ঞাগুলোর সম্পূর্ণ তালিকা পাওয়া যাবে এখানে:
ঘর ছেড়ে বাইরে যাওয়ার সময়ে ভিক্টোরিয়ার সবাইকে অবশ্যই চেহারা ঢাকতে হবে, তারা যেখানেই বাস করুন না কেন।
আপনার মাঝে যদি সর্দি-কাশির (কোল্ড কিংবা ফ্লু) লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে ঘরে অবস্থান করুন এবং আপনার ডাক্তারকে কল করে কিংবা করোনাভাইরাস হেলথ ইনফরমেশন হটলাইন, 1800 020 080 নম্বরে কল করে টেস্টের ব্যবস্থা করুন।
Source: SBS
আপনার যদি শ্বাস-কষ্ট কিংবা মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখা দেয়, তাহলে 000 নম্বরে কল করুন।
৬৩ টি ভাষায় এ বিষয়ক সংবাদ ও তথ্য পেতে ভিজিট করুন: .বাংলায় করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিষয়ক আমাদের সর্বশেষ আপডেটের জন্য ভিজিট করুন:
Source: SBS