হঠাৎ করেই পৃথিবীজুড়ে নেমে এসেছে এই মানবিক দুর্যোগ। এবারের মানবিক বিপর্যয়টা অন্য রকম। খুবই ভয়ের। ছোঁয়াচে রোগের শঙ্কা বিরাজমান। করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ । বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা স্থবিরতা এসে গেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বিশ্বব্যাপী। উন্নত বিশ্ব এটা নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান মনে করেন, এবারের এই দুর্যোগ গেল বিশ্বযুদ্ধের চেয়েও ভয়ানক। বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই ধুঁকছিল। আরেকটি বিশ্বমন্দা দরজায় দাঁড়িয়ে যখন, তখনই এলো এই অদৃশ্য শত্রুর মহা আক্রমণ। বাংলাদেশের অর্থনীতিও আজ সারা বিশ্বের সঙ্গে জড়াজড়ি করে আছে। আমাদের প্রধানতম রপ্তানি খাত, রেমিট্যান্স, কৃষিপণ্য—সব কিছুই বিশ্বের হাল-হকিকতের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তাই আমাদের অর্থনীতি ও সমাজে যে এই দুর্যোগের প্রভাব পড়বে তা তো জানা কথা। তবে এই মুহূর্তের উদ্বেগ অর্থনীতি নয়। এখনকার দুর্ভাবনা কী করে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা যায় তাকে ঘিরেই।ড. আতিউর রহমানের মতে, এই মহাসংকট মোকাবেলার জন্য দরকার হবে বিপুল অর্থ। স্বভাবতই আমাদের মতো একটি অর্থনীতির জন্য এটি একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। কারণ আমাদের সম্পদ খুবই সীমিত। কাজেই যথাযথ অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেই আমাদের এগোতে হবে। তিনি মনে করেন বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের পক্ষ থেকে সহায়তা এলে এ ধাক্কাটি কাটিয়ে উঠতে বেশি বেগ পেতে হবে না। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে এই মহামারি কত দিন ধরে চলে তার ওপর। এর তাণ্ডব দীর্ঘতর হলে অন্যভাবে ভাবতে হবে।
Dr Atiur Rahman Source: Supplied
বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক সাবেক গভর্নর ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সালেহউদ্দিন আহমদের মতে বাংলাদেশ এখন একটি ক্রান্তিলগ্নে এসে পৌঁছেছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন মোটামুটি সন্তোষজনকভাবে এগোচ্ছিল; কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের আক্রমণের ফলে একটি খারাপ সময় সামনে এসেছে। এর ফলে যেটি হয়েছে, অর্থনীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। এখন দুটি চ্যালেঞ্জ—একটি বাহ্যিক, অন্যটি অভ্যন্তরীণ। অর্থনীতি এমনিতে অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখে ছিল। বিশ্বব্যাপী করোনা আক্রমণের ফলে এতে কতগুলো নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সে কারণে জরুরিভাবে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। এ মুহূর্তে আমরা সবাই ব্যস্ত এবং উদ্বিগ্ন আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে। তা সত্ত্বেও আমাদের যে অর্থনীতি তাতে করোনা বিপুল প্রভাব ফেলবে। সে কারণে এখনই যদি এ বিষয়ে না ভাবি, তাহলে মুশকিলে পড়ে যাব, তখন অর্থনীতিকে ভালো অবস্থানে বা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।কেন্দ্রীয় ব্যাংক কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন কোনোভাবেই জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ঋণখেলাপি ঘোষণা করা যাবে না। এটি ভালো উদ্যোগ হলেও যথেষ্ট নয় বলে মনে রছেন ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর মতে, সুদ মওকুফ করে দিতে হবে। একান্তই যদি সুদ মওকুফ করলে ব্যাংকের অসুবিধা হয়, তবে আরোপিত সুদের হার কমিয়ে দেওয়া উচিত এবং চক্রবৃদ্ধি হারের বদলে সরল হারে সুদ হিসাব করতে হবে। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দেওয়ার ব্যাপারে মত পকাশ করে তিনি বলেছেন, না হলে অর্থনৈতিক খাতের মন্থরতা বা ব্যাহত হওয়াকে ঠেকানো যাবে না। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নমনীয় হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে বলে মনে করন তিনি।
Dr. Salehuddin Ahmed Source: Supplied
তাঁর মতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য বৃদ্ধি করতে হবে। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্প্রসারণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা জোরালো হতে হবে। প্রবৃদ্ধি ঠিক রাখতে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বৃদ্ধি করতে হবে।
ড, সালেহউদ্দিন আহমদ মনে করেন, অর্থনৈতিক পুনর্বাসন করতে হলে চাহিদা ও সরবরাহ দুই দিকেই নজর দিতে হবে। কর্মহীন হলে, ব্যবসা বন্ধ হলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আয়ের উৎস কমে যাবে, ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। অতএব চাহিদার ঘাটতি দেখা দেবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদনশীল খাতে।