গত ২৪ ডিসেম্বর, ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক হয় মোহাম্মদ সালাম নামে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থী। ভুয়া টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন সালাম।
মিয়ানমারে নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে শরণার্থী হয়ে বাস করছে তার স্বজনরা। পরিবারের সাথে ছুটি কাটাতে প্রায় আড়াই হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলারে বিমানের টিকেট কেটে ঢাকায় যায় সালাম। কিন্তু, বিমানবন্দরে তাকে আটকে দেয়া হয় এবং জানানো হয় যে, ভিসাটি ভুয়া।
মঙ্গলবার, ঢাকা বিমানবন্দর থেকে টেলিফোনে এসবিএস বাংলাকে সালাম বলেন, সিডনিতে কাজের ব্যস্ততা ও সময়ের অভাবে নিজে টুরিস্ট ভিসার আবেদন করতে পারেননি।
"পরিচিত একজনকে ৪০০ ডলার দিয়ে আমার জন্য ভিসা নেয়ার ব্যবস্থা করি," বলেছেন সালাম।
"কয়েকদিন পর ওই ব্যক্তি আমাকে হাতে লেখা (ম্যানুয়াল ভিসা) বাংলাদেশের টুরিস্ট ভিসাসহ ট্রাভেল ডকুমেন্টটি ফেরত দেয়।""ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের পর ইমিগ্রেশন অফিসারকে আমার পাসপোর্ট দেই। তখন অফিসার জানান, আমার ভিসাটি ভুয়া।"
বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে ইস্যুকৃত ভুয়া ভিসা। Source: SBS Bangla
সালামকে আরো জানানো হয় যে, তাকে সিডনি ফেরত পাঠানো হবে। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন সালাম।সালামসহ আরো প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসবিএস বাংলাকে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার।
সালামকে নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ইস্যুকৃত ডকুমেন্ট। Source: SBS Bangla
মোহাম্মদ সালাম যে ট্রাভেল ডকুমেন্টে ভ্রমণ করেছেন তা অস্ট্রেলিয়ান কনভেনশন ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সিটিডি), যাতে বাংলাদেশের ভিসা নেয়া ছিল। সিটিডি হচ্ছে বায়োমেট্রিক রিফিউজি ট্রাভেল ডকুমেন্ট, যা অস্ট্রেলিয়ার ডিপার্টমেন্ট অব ফরেইন এ্যাফেয়ার্স এন্ড ট্রেড দিয়ে থাকে। এ ডকুমেন্ট তাদেরকেই দেয়া হয়, যারা অস্ট্রেলিয়ায় স্বীকৃত শরণার্থী হয়ে বসবাস করছেন। এটা এক ধরণের পরিচয়পত্রও।একই ঘটনায় সালামের মত ভুক্তভোগী আরো দুই আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থী; তারা হচ্ছেন, হাশিম এবং হোসাইন।
অস্ট্রেলিয়ান ট্রাভেল ডকুমেন্ট। Source: SBS Bangla
এই দুই জন জানান, বাংলাদেশের টুরিস্ট ভিসা পেতে পরিচিত আরেক রোহিঙ্গাকে ৩৫০ ডলার করে দেন তারা।
সালামের মতই, হাতে লেখা বাংলাদেশের টুরিস্ট ভিসাসহ ট্রাভেল ডকুমেন্টগুলো হাশিম এবং হোসাইনকে ফেরত দেয় মধ্যস্বত্তভোগী সেই রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশে প্রবেশ করতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতারিত হওয়ার খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে নিজস্ব কমিউনিটিতে। নিজেদের ভিসাটি সঠিক কিনা তা যাচাই করতে সোমবার ক্যানবেরাস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে যায় হাশিম এবং হোসাইন।
হাশিম বলেন, "হাইকমিশন থেকে বললো যে, এই ভিসা তারা দেয় নাই। যে এই ভিসা দিয়েছে, তার নাম, ঠিকানা চেয়েছে হাইকমিশন।"
"হাইকমিশনার আমাকে বলেছেন, এটা ভুয়া ভিসা। পরে আমাদের দু’জনকেই আসল ভিসা দিয়ে দেন," বলেছেন হোসাইন।
নতুন মেশিন রিডেবল ভিসা। Source: SBS Bangla
মেশিন রিডেবল ভিসা
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে হাতে লেখা ভিসা বন্ধ করে মেশিন রিডেবল ভিসা (এমআরভি) দিচ্ছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ তথ্যটি এসবিএস বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান।
অস্ট্রেলিয়াব্যাপী বিতর্কিত ভুয়া ভিসা ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা সম্পর্কে জানেন বলেও নিশ্চিত করেছেন হাইকমিশনার। তবে এখনও অস্ট্রেলিয়ান কর্তৃপক্ষকে জানাননি তিনি।
"আমরা শুনেছি সিডনিতে কিছু এজেন্ট এই জালিয়াতি করছে," বলেছেন সুফিউর রহমান।
"আমরা তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।"
হাইকমিশনার দাবি করেন যে, ভুয়া ভিসায় দেয়া কমিশনের দ্বিতীয় সচিব শামীমা পারভীনের স্বাক্ষরটিও জাল করা হয়েছে।
তদন্ত হচ্ছে বাংলাদেশে
এরইমধ্যে, বাংলাদেশ সরকার এবং ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। এ বিষয়ে তদন্ত করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরই অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান।
প্রতারিত চারজন রোহিঙ্গার সাথে কথা বলে এসবিএস বাংলা জানতে পেরেছে যে, পশ্চিম সিডনি এবং এডিলেইডে বসবাসরত কমপক্ষে দুই জন এই জালিয়াতির সাথে জড়িত, তারা হয় বাংলাদেশী অথবা রোহিঙ্গা।
"লাকেম্বায় আজও (মঙ্গলবার) শুনলাম যে, অনেকেই ভুয়া ভিসার জন্য বাংলাদেশে যেতে পারছে না। আবার যারা গেছেন তাদের এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে দিচ্ছে না। শুধুমাত্র স্টিকার ভিসা থাকলে যেতে পারছে," বলেছেন হোসাইন।
হাশিম বলেন, "গতকাল (সোমবার) পুলিশকে জানিয়েছি। পুলিশ বলছে, আমি বাংলাদেশ থেকে আসার পর আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।"