পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্যে যে চারটি রেড জোন ছিল, তার মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুর ইতিমধ্যেই রেড থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে গিয়েছে।এ ছাড়া আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর, মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরলিয়া, পূর্ব বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম জেলার পরিস্থিতি তুলনামূলক ভাল।এই জেলাগুলোয় কোনও করোনা সংক্রমণ নেই।কিন্তু এ সব জেলাতেও ডিএম-এসপি-দের যথাযথ নজরদারি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার দুপুরে সিল করে দেওয়া হয়েছে কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গা।রাজাবাজার, মানিকতলা, নারকেলডাঙা- সহ কাকুরগাছি সিল করা হয়েছে।এইসব এলকার প্রবেশপথ সম্পূর্ণভাবে আটকে দেয় পুলিশ।এমনকী পাড়ার অলিগলিতে ঢুকতে বা বেরোতে হলে পুলিশের অনুমতি নিতে হবে।এর পাশাপাশি ওই এলাকায় বাজার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।ভিড় কমাতে বিধাননগরের তিনটি বাজার ৫ দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন।জগৎপুর বাজার, জ্যাংরা বাজারও বন্ধ রাখা হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতায় করোনা নিয়ন্ত্রণে বস্তি, লেবার কোয়ার্টার, রেল ঝুপড়ির মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সমীক্ষায় উদ্যোগী হয়েছে কলকাতা পুরসভা।
কলকাতা এবং লাগোয়া জেলায় এবার থেকে বাজারে গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন,পাঁচ জনের বেশি বাজারে যাওয়া যাবে না।আদৌ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কিনা, প্রত্যেকে মাস্ক পরেছেন কিনা,তা নজরদারিতে এবার থেকে বাজারে মোতায়েন থাকবে সশস্ত্র পুলিস।নিয়মভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।হাওড়ার প্রত্যেক বাজার পুলিস স্যানিটাইজ করবে বলে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে স্পর্শকাতর এলাকাগুলোয় এ বার সশস্ত্র পুলিশকেও নামানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী এদিনও বলেছেন, বাজারে যেতে গেলে সব নিয়ম মানতে হবে।চেষ্টা করুন বাড়ি থেকে কম বেরনোর।তিনি বলেছেন, মেদিনীপুর, আসানসোল রেড জোন থেকে অরেঞ্জ জোনে চলে এসেছে।উত্তর ২৪ পরগনাকেও অরেঞ্জ জোনে আনতে হবে।তবে শিলিগুড়িতেও কড়া নজরদারি প্রয়োজন বলে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে উদ্দেশ্য করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,কলকাতাও রেড জোনে রয়েছে।কয়েকটা ওয়ার্ডেও বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে।শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই হবে।সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের তিনি বলেছেন বেশি করে করোনা টেস্টের বিষয়টি দেখতে।
রাজ্য সচিবালয়,নবান্ন থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে ফের মানুষের কাছেই তাঁদের বোঝাতে ছুটেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠকে বাজারে ভিড় করা জনতার উদ্দেশে রীতিমতো ধমক দিয়েছেন তিনি।বলেছেন, এভাবে চললে গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকানো যাবে না।এরপরই তিনি পৌঁছে যান ভবানীপুরের একটি রেশন দোকানে।হাতে ছিল বেশ কিছু মাস্ক।
সাধারণ মানুষের হাতে সেই মাস্কগুলি তুলে দেন তিনি। শুধু তাই নয়,কীভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, তাও বুঝিয়ে দেন।সেইসঙ্গে রেশন দোকানেও নির্দেশ দেন,পাঁচ কিলো করে চাল দিতে যদি ব্যাগে অসুবিধা হয়, তাহলে আলাদা-আলাদা প্যাকেট তৈরি করে রাখা হোক।মুখ্যমন্ত্রী সেইসঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,পার্টির নামে রেশনের মাল লুঠ করা হচ্ছে।যে দলের লোকই এই কাজ করুক, বরদাস্ত করবেন না।এ বিষয়ে কড়া হোন জেলা পুলিশ ও প্রশাসন।এর আগেও অবশ্য বারবার পথে নেমে সাধারণ মানুষকে সচেতন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং কীভাবে বজায় রাখতে হবে, তা রাস্তায় এঁকে দেখিয়ে দিয়েছেন।