*আধেয় সতর্কতা: যৌন নিগ্রহের কথা বলা হয়েছে এই আধেয়টিতে।
লিলি* বলেন, তার ৩৮ তম জন্মদিনটি ছিল তার এ বছরের চমৎকার দিনগুলোর একটি।
গত মাসে ব্রিসবেনে একটি স্থানীয় ট্যাভার্নে (সরাইখানায়) খাবার ও পানীয় গ্রহণের পর তিনি তার বন্ধু-বান্ধবদেরকে বিদায় জানান। তখন প্রায় মধ্যরাত। তখন তিনি একটি উবার ডাকেন। অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাত হয় এরপরেই।
এসবিএস নিউজকে তিনি বলেন,
“একটি চমৎকার রাতের পর, বাড়ি ফেরার পথে (ড্রাইভারের সঙ্গে) আমি সত্যিই প্রচুর কথা বলছিলাম। যখন আমার বাড়িতে পৌঁছুলাম, সে তখন আমাকে আজব সব প্রশ্ন করতে লাগল। যেমন, ‘বাড়িতে কি আপনি ও আপনার মেয়েই শুধু থাকেন?’ এবং ‘আজ রাতে আপনার মেয়ে কোথায়?’”
যাত্রীর আসনে তিনি বসেছিলেন। তিনি বলেন, বাড়ির সামনে আসার পর ড্রাইভার গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়।
“এই পর্যায়ে আমি ভাবতে লাগলাম, ‘এখন এটা একটু অস্বাভাবিক ও অদ্ভুত দিকে মোড় নিচ্ছে’। তখন সে তার সিটবেল্ট খুলে ফেলে এবং আমি ভাবলাম, ‘এটা আসলেই অদ্ভুত দিকে যাচ্ছে’। আর তাই আমি বললাম, ‘আমাকে এখন যেতে হবে’।”
এই পর্যায়ে, তিনি বলেন, ড্রাইভার তাকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করে।
“আবারও, আমি ভাবলাম, ‘এটি আজব’ তবে আমি অনুমান করলাম এবং ভাবলাম, ‘আমি তোমাকে আলিঙ্গন করবো, যেন এরপর আমি ঘরে চলে যেতে পারি’।”
“এরপর সে আমাকে চুমু খাওয়ার চেষ্টা করে… আমি আমার মাথা সরিয়ে নিই এবং সে আমার দিকে দ্বিধাগ্রস্তভাবে তাকায় এবং উৎসাহিত করে এবং দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে। আমি বললাম, ‘না’ এবং আমি গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।”
“গাড়ি থেকে নেমে আমি হতভম্ব হয়ে যাই, আমি অনেক বেশি অস্বস্তি অনুভব করতে থাকি।”
গাড়ি থেকে নেমে আমি হতভম্ব হয়ে যাই, আমি অনেক বেশি অস্বস্তি অনুভব করতে থাকি।
এর পরের দিন লিলি উবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং এই ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট করেন। তিনি বলেন,
“আমার সঙ্গে যা ঘটেছে তা অন্য কারও সঙ্গে ঘটুক, সেটা আমি চাই নি।”
“যা ঘটেছে তা ভেবে, আমি কৃতজ্ঞ যে, আমি একটুখানি বয়স্ক এবং আমি মনে করি, আমি অনেক বেশি দৃঢ়প্রত্যয়ী। তাই আমি আমার দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে পেরেছি। ভিন্ন পরিস্থিতিতে কী ঘটতে পারতো তা ভাবতে আমি ঘৃণা করি।”
উবার কমিউনিটি অপারেশন্স টিমের কাছ থেকে প্রাথমিকভাবে সাড়া পান লিলি। তাকে বলা হয়, তারা “ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বের সঙ্গে“ নেয় এবং “আমরা এই ঘটনা সম্পর্কে সতর্কতার সঙ্গে দেখবো।”
কিন্তু, কয়েকদিন পর লিলি সেই একই টিমের কাছ থেকে একটি ইমেইল পান, যেখানে বলা হয়েছে, অ্যাপটিতে তার প্রবেশাধিকার (অ্যাকসেস) সাময়িকভাবে বন্ধ (ব্লক) করা হয়েছে। কারণ, উবার “সম্প্রতি আপনার ভ্রমণগুলোর কোনো একটি থেকে আপনার অশোভন ব্যবহার সম্পর্কিত কিছু উদ্বেগজনক ফিডব্যাক পেয়েছে।”লিলি বলেন, উবার তার অভিযোগ নিয়ে যেভাবে কাজ করেছে তা নিয়ে তিনি “মর্মাহত”। তিনি বলেন, তার অ্যাকাউন্ট ব্লক করার পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করাটা খুবই কঠিন হয়ে গেছে।
Uber blocked Lily's access to the app. Source: Supplied
“এটা হতাশাজনক যে, তারা আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, যখন কিনা আমি ভুল কিছুই করি নি। আর, তারা আমার কাছ থেকে শোনার জন্য আমাকে কোনো সুযোগই দিচ্ছে না।”
“তারা বলেছে, তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবে। তবে, তারা তা কখনই করে নি। আর, টেলিফোনে যোগাযোগের জন্য উবারের কোনো ফোন লাইন নেই। তাই, তাদের কোনো ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার কোনো উপায় নেই।”
অভিযোগ উঠা এই ঘটনার পর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিলির উবার অ্যাকাউন্টটি সাসপেন্ড রয়েছে।
এসবিএস নিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে উবার বলে, তারা কোনো ব্যক্তির কেস নিয়ে মন্তব্য করতে পারে না। এই রাইডশেয়ার কোম্পানিটি এ বিষয়েও কোনো মন্তব্য করে নি যে, সেই ড্রাইভারের অ্যাকাউন্টটিও কি সেই একই কারণে সাসপেন্ড করা হয়েছে কিনা।
উবারের একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন,
“যদি কোনো রাইডার এবং ড্রাইভার-পার্টনার পরস্পরের বিরুদ্ধে নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো রিপোর্ট করেন, তখন আমরা অ্যাপে উভয়ের অ্যাকসেস সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেই আর এর গ্লোবাল ইনসিডেন্ট টিম তখন এই বিষয়টি নিয়ে দেখে।”
“আমাদের একটি একনিষ্ঠ আইন-প্রয়োগকারী টিম আছে যারা পুলিশের সঙ্গে মিলে প্রতি দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ করে এবং জরুরি বিষয়গুলোতে সাড়া দেয় ও তদন্তগুলোতে সহায়তা করে।”
“কোনো ধরনের পরিবহনই যেখানে শত ভাগ ঘটনাবিহীন নয়, তখন আমরা আমাদের ভূমিকা পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের অ্যাপের নিরাপদ ব্যবহার তুলে ধরি, কঠিন ইস্যুগুলো নিয়ে কাজ করি এবং নিরাপত্তা-বিশেষজ্ঞদের ও দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে মিলে সমাধান বের করি।”
গত মাসে দ্য ফিড রিপোর্ট করেছিল যে, একজন নারী উবার-ড্রাইভার এই রাইডশেয়ার কোম্পানিটিকে বলেছিল, একজন পুরুষ যাত্রীর দ্বারা তিনি যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।
নিপীড়িতদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান
মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজির লেকচারার বিয়াঙ্কা ফিলবোর্ন যৌন সহিংসতা ও নিগ্রহ নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, উবার থেকে লিলি যে জবাব পেয়েছেন তা আশ্চর্যজনক নয়। তিনি বলেন,
“ব্যবসার মডেলে অবনতি হয়েছে। তারা আসলেই শুধুমাত্র ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে খরচ কমাতে চাচ্ছে। আপনি দেখবেন যে, সবকিছুই চুক্তি ভিত্তিক এবং সবকিছুই আউটসোর্সের মাধ্যমে করা হয়।”
“অভিযোগের সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এটা আসলে ভাল সিস্টেম তৈরি করে না। বিশেষভাবে, যৌন নিগ্রহের অভিযোগে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে আপনি সত্যিই একজন একনিষ্ঠ মানুষের প্রয়োজন অনুভব করেন, যিনি বিষয়টি বোঝেন এবং অভিযোগ করার জন্য যার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।”
ড. ফিলবোর্ন এবং আরও কয়েকজন গবেষক সম্প্রতি একটি পাইলট সার্ভে পরিচালনা করেছেন। ভিক্টোরিয়ার শতাধিক রাইডশেয়ার এবং ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহারকারীর উপরে পরিচালিত সেই সমীক্ষায় দেখা হয়েছে, তারা কতোটুকু নিরাপদ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে অনেকেই জানিয়েছেন যে, তারা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। এটাই সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। অর্ধেক সংখ্যক অংশগ্রহণকারী জানান, তাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ফ্লার্টিংয়ের (প্রগলভ আচরণের) অভিজ্ঞতা হয়েছে। আর ৪৬ শতাংশের অভিজ্ঞতা হয়েছে শারীরিক বিষয়ে অনাকাঙিক্ষত মন্তব্য শোনার।
জনগণের জন্য উবার সেফটি রেকর্ডের খুব সামান্যই তথ্য পাওয়া যায়। ২০১৯ সালে তারা একটি সেফটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭-১৮ সালে ৯৯.৯ শতাংশ রাইড সম্পন্ন হয়েছে “কোনো প্রকার নিরাপত্তা-বিষয়ক ইস্যু” ছাড়াই।
লিলি মনে করেন, বর্তমান সিস্টেম নারীদেরকে রিপোর্ট করতে নিরুৎসাহিত করবে।
যা ঘটেছে সেটাই আমি রিপোর্ট করেছি। এর বিপরীতে, আমার অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে এবং আমাকে এটা অনুভব করতে বাধ্য করা হয়েছে যে, আমি ভুল কিছু করেছি। এর দ্বারা কোন্ বার্তা পৌঁছাচ্ছে?
তিনি বলেন,
“যা ঘটেছে সেটাই আমি রিপোর্ট করেছি। এর বিপরীতে, আমার অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছে এবং আমাকে এটা অনুভব করতে বাধ্য করা হয়েছে যে, আমি ভুল কিছু করেছি। এর দ্বারা কোন্ বার্তা পৌঁছাচ্ছে?”
ড. ফিলবোর্ন বলেন, পাইলট সার্ভেতে দেখা গেছে যে, নিগ্রহের রিপোর্টকারীদের সংখ্যা অনেক কম। রাইডশেয়ার কিংবা ট্যাক্সি কোম্পানির কাছে রিপোর্ট করেছেন মাত্র ১৩ শতাংশ, আর পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেছেন মাত্র তিন শতাংশ।
“এটা সত্যি যে, (ভুক্তভোগীরা অনুভব করেন) এ বিষয়ে আর কিছুই করার নেই। দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান … তারা শুধু অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নেয় না।”
তিনি বলেন, তিনি এই গবেষণাটি বিস্তৃত করে জাতীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে চান। এতে কাস্টোমার ও ড্রাইভার- উভয়ের নিগ্রহের এবং নিরাপত্তা-বিষয়ক ইস্যু নিয়ে অভিজ্ঞতাগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
কুইন্সল্যান্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন লিলি। তিনি বলেন, তিনি আর কখনই উবারে চড়বেন না।
*নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
আপনি কিংবা আপনার পরিচিত কেউ যদি যৌন আক্রমণের শিকার হন, তাহলে কল করুন 1800 RESPECT এ 1800 737 732 নম্বরে কিংবা ভিজিট করুন . জরুরি পরিস্থিতিতে কল করুন 000 নম্বরে।
যৌন সহিংসতার শিকার ভুক্তভোগীদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে কুইন্সল্যান্ড পুলিশ। এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে জানতে দেখুন এই ।
আপনি কি আপনার ঘটনা এসবিএস নিউজকে বলতে চান?