Police are being accused of brutality as India's protests grow increasingly violent. Source: AP
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি জানিয়েছেন ,জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’র বিষয়ে ঘোষণা হয়েছে কিন্তু কোনও তারিখ বা নির্দিষ্ট করে কোনও সময় জানানো হয়নি।এই কাজ কবে থেকে শুরু হবে, সেই বিষয়েও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সর্বভারতীয় এনআরসি আইনের খসড়াও এখনও তৈরি নয়, যখন হবে, তখন হবে।তিনি আরও বলেছেন,কিছু মানুষ ইচ্ছাকৃত ভাবে গুজব ছড়াচ্ছে যে এখনই গোটা দেশে এনআরসি চালু হবে এবং মুসলিমদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। এই বিষয়ে দেশের সব প্রথম সারির সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হচ্ছে যাতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা দূর হয়।
কর্নাটকের মেঙ্গালুরু জেলার পাঁচটি পুলিশ স্টেশনে শুক্রবার মধ্যরাত পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে একের পর এক রাজ্যে বিক্ষোভের আগুন ,অশান্তির আশঙ্কায় রাজধানী বেঙ্গালুরুতে ২১ ডিসেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি থাকবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার ভাস্কর রাও। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, মেঙ্গালুরুতে চার পুলিশকর্মীকে দেখা গিয়েছে গুলি চালাতে। সেখানে পড়ুয়াদের একটি দলকে লক্ষ করেই গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ।দিল্লির জামিয়া মিলিয়া এবং আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি অভিযানের বিরুদ্ধে গত কয়েকদিন থেকে বেঙ্গালুরুতে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
এর মধ্যেই সিএএ এবং এনআরসি-র বিরুদ্ধে একাধিক সংগঠনের তরফে শহরে বিক্ষোভ দেখানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। একে সমর্থন করেছিল কংগ্রেস, এনসিপি এবং সিপিআই(এম)-সহ বামপন্থী দলগুলি। মাইসোর ব্যাংক সার্কেলে বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যাতেও বেঙ্গালুরুর টাউন হলে সমস্ত কলেজের পড়ুয়ারা একটি জমায়েতের ডাক দেওয়া হয়ে ছিল।কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বাসবরাজ বোমানি বলেছেন, সরকার কোনও ধরনের হিংসা চায় না, সে কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সিএএ বিরোধী আন্দোলন ঘিরে রক্তাক্ত লক্ষ্ণৌতে বৃহস্পতিবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক ব্যক্তির। কীভাবে মৃত মোহাম্মদ উকিল গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ গুলি চালিয়েছিল। তাতেই জখম হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। যদিও পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর সম্ভাবনা কার্যত খারিজ করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। উত্তরপ্রদেশ পুলিশের প্রধান ওমপ্রকাশ সিং বলেছেন, ওই ব্যক্তির পুলিশের গুলিতে জখম হয়ে মৃত্যুর কোন চান্স নেই।
এর আগে,অশান্তির আশংকায় বুধবার রাত থেকেই সারা উত্তরপ্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল প্রশাসন। চার জনের বেশি লোকের জমায়েতের উপর জারি করা হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। সংবেদনশীল এলাকা হওয়ায় সকাল থেকে বিশাল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেই নির্দেশ উপেক্ষা করেই লক্ষ্ণৌতে মিছিল করে সমাজবাদী পার্টি-সহ একাধিক সংগঠন। কারফিউ উপেক্ষা করেই বিক্ষোভে শামিল হয় মানুষ। মিছিল আটকানোর চেষ্টা করা হলে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।বিক্ষোভকারীরা কয়েকটি মোটরবাইক ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সাম্ভাল এলাকায় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় সরকারি বাস। একটি পুলিশ পোস্টেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর চালানো হয় সরকারি সম্পত্তি। পুলিশকে লক্ষ করে পাথর ছোড়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। আটক করা হয় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে। পরিস্থিতি ঘোরালো দেখে এলাকার ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যেই নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েছেন সাংবাদিকরা। প্রায় ৩০ জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে বলে খবর। অভিযোগ ,কেরালার অন্তত তিনটি নিউজ চ্যানেলের সাংবাদিক ও চিত্র-সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহ করতে বাধা দেয় মেঙ্গালুরুর পুলিশ। এই তিনটি নিউজ চ্যানেল হল,নিউজ ২৪, মিডিয়া ওয়ান এবং এশিয়ানেট। এই বিষয়ে সম্প্রচারিত হওয়া একটি ভিডিও-য় দেখা গিয়েছে এক পুলিশ অফিসার আরও বেশ কয়েকজন সশস্ত্র পুলিশকর্মীকে নিয়ে একজন সাংবাদিক ও চিত্র-সাংবাদিককে বাধা দেন।
সাংবাদিকদের কাছে পুলিশ অফিসার পরিচয়পত্র দেখতে চান। চ্যানেলের দেওয়ার পরিচয়পত্র দেখে জানিয়ে দেন যে সরকার থেকে দেওয়া অ্যাক্রিডিয়েশন কার্ড ছাড়া খবর সংগ্রহ করতে দেওয়া হবে না। ক্যামেরা বন্ধ করে তাঁদের সেখান থেকে বের করে দেন তিনি।শুক্রবার মেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার পি এস হর্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে অ্যাক্রিডিয়েশন কার্ড ছাড়া অনেকে খবর সংগ্রহ করার নামে আপত্তিকর কাজ করে বেড়াচ্ছে। এই ধরনের বেশ কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে,নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ভারত জুড়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির তা পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিকরা বৈঠক করেছেন। বিক্ষোভের নামে সর্বত্র যে ভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে ২ জন ও লক্ষ্ণৌতে ১ জন বিক্ষোভকারী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন।এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে পারে এই আশংকায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উচ্চপদস্থ কর্তারা দেশের সুরক্ষাব্যবস্থা পর্যালোচনা করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। যদিও, সূত্রের খবর, তিনি এই বৈঠকে ছিলেন না।
পাশাপাশি ,নাগরিক সমাজের একটা বড় অংশ একে,এমার্জেন্সির চেয়েও খারাপ বলে আখ্যা দিচ্ছেন।বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে বেঙ্গালুরুর ঘটনা। রামচন্দ্র গুহর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইতিহাসবিদকে সেখানে শারীরিক হেনস্থা করে আটক করে পুলিশ। বেঙ্গালুরুর মতোই প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করার সাক্ষী দিল্লিও। সেখানে মিছিলের রুট বেছে বেছে ১৪৪ ধারা জারি করার পাশাপাশি অন্তত চার ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট-সহ মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থাটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যেই যোগেন্দ্র যাদব, সীতারাম ইয়েচুরি এবং বৃন্দা ও প্রকাশ কারাটদের আটক করে পুলিশ।নতুন নাগরিকত্ব আইন এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির প্রতিবাদে অপর্ণা সেন, কৌশিক সেনদের নেতৃত্বে কলকাতায় মিছিল হয়েছে। অপর্ণা সেনের বার্তা, ধর্মনিরপেক্ষতায় সুতোয় বাঁধা দেশ। সুতো ছিন্ন হলে দেশ ভেঙে যাবে। অপর্ণা সেন বলেছেন, এটি আমাদের উপমহাদেশ। এখানে ধর্মনিরপেক্ষতায় সুতোয় বহু ভাষা, সংস্কৃতি, জাতিগোষ্ঠী একসঙ্গে বাঁধা রয়েছে। যদি এই সুতো ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে দেশ ভেঙে যাবে। মিছিল থেকেই অভিনেতা কৌশিক সেন বলেছেন, সবাই নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করছে। এখন জামিয়া মিলিয়া, এরপর আমাদের সঙ্গে ঘটতে পারে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করতে হবে।জনমত তৈরি হওয়া দরকার। কেন্দ্রের টনক নড়া উচিত।
Policemen detain an injured student outside Jamia Millia Islamia university during a protest against the Citizenship Amendment Act in New Delhi, India. Source: AAP
কলকাতায় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অবশ্য নিন্দার পাশাপাশি প্রশাসনিক তাণ্ডব দেখে ,স্বস্তিও পাচ্ছেন।তাঁর কথায়,সুশীল সমাজের উপর আক্রমণ ইতিহাস কখনও ভালো ভাবে নেয়নি।সে কাজ করে বিজেপি ভালোই করেছে।নিজেরাই ওদের পতনের রাস্তাটা চওড়া করেছে।শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মত, এমার্জেন্সির সময়ে ইন্দিরা গান্ধী সরকারের মনোভাবও এত বর্বর ছিল না।তাঁর সঙ্গে একমত বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়ও। কংগ্রেসি ঘরানার হয়েও তিনি এমার্জেন্সির কড়া সমালোচক।
প্রবীণ ইতিহাসবিদও বলছেন, সরকারকে রক্ষা করতে ইন্দিরা গান্ধী এমার্জেন্সি ঘোষণা করেছিলেন।রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মৌলিক অধিকার খর্ব করেছিলেন। কিন্তু সরকার তা করছে না।তাঁদের একটা দূরভিসন্ধি আছে।ইন্দিরার মতো নিজের পরিকল্পনা সরাসরি প্রকাশ করার বদলে একটা ছকে এগোচ্ছে। বিপদটা শুধু মুসলিমদের নয়, সকলের। আর তার প্রতিবাদ হলেই আক্রমণ, সংবিধানের স্তম্ভগুলিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে এই সরকার ফের দেশবাসীর স্বাধীনতা কেড়ে নেবে,বলেছেন প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়।