মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব সারওয়ার সরকার জীবন। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে টানা তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিধানসভা নির্বাচনে বড় ব্যবধানে তাঁর দল তৃণমূলের জয়লাভের জন্যও নেত্রী মমতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুমধুর সম্পর্কের কথা সকলের জানা। বিতর্কিত তিস্তার জল নিয়ে টানাপোড়েনও সেই সম্পর্কে দাগ কাটতে পারে নি। ফলে মমতার জয়ে যে হাসিনা আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাবেনই, তা প্রত্যাশিত। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর দল তৃণমূলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরই তাঁকে লেখা চিঠিতে ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, তৃণমূল কংগ্রেস ধারাবাহিকভাবে তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠনে জনগণের সমর্থন লাভ করেছে, যা মমতার নেতৃত্বের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের অব্যাহত আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন। বাংলাদেশের মানুষ এবং সরকার মমতার প্রতি কৃতজ্ঞ। কারণ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির দীর্ঘ লালিত মূল্যবোধ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ ধারণ করেছেন। যে ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমান সারাজীবন অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন আরও উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জারি থাকবে এবং সাম্প্রতিক বছরে দু’দেশের পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো আরও বেশি করে প্রসারিত হয়েছে। আর এরপরই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন।এদিকে, ভারতের অনিয়ন্ত্রিত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, বৈঠকে নরেন্দ্র মোদী সামনে রাজ্য ও জেলাভিত্তিক করোনা আক্রান্তের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন দেশের ১২ টি রাজ্যে ১ লাখের বেশি সক্রিয় করোনা রোগী রয়েছেন। একই সঙ্গে রাজ্যগুলির স্বাস্থ্য পরিকাঠামো কোন পর্যায়ে রয়েছে তা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। স্বাস্থ্য পরিকাঠামো আরও বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সে বিষয়ে রাজ্যগুলিকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে কেন্দ্রীয় সরকার। দেশে ওষুধের সরবরাহ সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। রেমডেসিভির-সহ একাধিক ওষুধের উৎপাদন বাড়ানোর ওপরে জোর দিয়েছেন তিনি।
Prime Minister Narendra Modi addresses a public rally for West Bengal Assembly Election at Barasat on April 12, 2021 in North 24 Parganas, India. Source: AAP Image/Samir Jana/Hindustan Times/Sipa USA
এছাড়াও, আগামী কয়েক মাসে দেশজুড়ে ভ্যাকসিনেশনের হার কীভাবে বাড়ানো হবে, সে বিষয়ে পর্যালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনের জেরে যাতে ভ্যাকসিনেশনে গতি যাতে কমে না যায়, সে দিকে নজর দিতে বলেছেন তিনি।এর মধ্যে গোটা দেশে অক্সিজেন বরাদ্দের জন্য কেন্দ্রকে নতুন করে হিসেব করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং এমআর শাহের বেঞ্চ জানিয়েছে, যে প্রক্রিয়ায় দিল্লিতে অক্সিজেন বরাদ্দ করা হচ্ছে, তা আবার মূল্যায়ন করা উচিত। এবং অক্সিজেনে বরাদ্দের জন্য নতুন করে হিসেবে করতে হবে কেন্দ্রকে। শুধুমাত্র রাজ্যগুলিকে অক্সিজেন বরাদ্দের কাজ নয়, পরিবহণ পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। সংক্রমণের তৃতীয় ওয়েভ শীঘ্রই আসতে চলেছে। তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এসেছে।একই সঙ্গে করোনার তৃতীয় ওয়েভ রুখতে কী কী পরিকল্পনা করেছে এবং বিভিন্ন রাজ্যে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার পৌঁছনোর সময় কালোবাজারি বন্ধ করতে কেন্দ্র কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
A Covid-19 coronavirus patient breathes with the help of oxygen provided by a Gurdwara, a place of worship for Sikhs. Source: PRAKASH SINGH/AFP via Getty Images
অন্যদিকে, সারা বিশ্বে যত মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তার প্রায় অর্ধেকই ভারত থেকে। এই তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা, হু। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহে বিশ্বে মোট মৃত্যুর চারভাগের এক ভাগই হয়েছে ভারতে। অতিমারি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, হু। সেই রিপোর্টেই জানানো হয়েছে, গত সপ্তাহে বিশ্বের মোট কোভিড আক্রান্তের ৪৬ শতাংশই ভারতে। মৃত্যুর ২৫ শতাংশ হয়েছে ভারত থেকে। উল্লেখ্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর এপ্রিলের শুরু থেকেই ভারতে বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। গত কয়েক সপ্তাহে তা চরমে পৌঁছেছে। গত ১৪ দিন ধরে দেশের দৈনিক সংক্রমণ রয়েছে ৩ লক্ষের বেশি। গত ১০ দিন তা সাড়ে ৩ লক্ষের বেশি রয়েছে। ভারতের পিছনে থাকা আমেরিকা এবং ব্রাজিলেও দৈনিক আক্রান্ত থাকছে ১ লক্ষের অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বে করোনার অধিকাংশই হচ্ছে ভারতে। হু-র রিপোর্টে জানানো হয়েছে করোনার জেরে যেমন মৃত্যু হচ্ছে, তেমন করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও সামনে আসছে। যা ভারতের দৈনিক মৃত্যুকে লাগামছাড়া পর্যায়ে নিয়ে চলে গিয়েছে।এখন দেশে রোজ যত লোকের মৃত্যু হচ্ছে অতিমারির জেরে, গত বছর এর অর্ধেক মৃত্যুও হয় নি।
পাশাপাশি দেশবাসীকে বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া নিয়ে কী ভাবনা, কেন্দ্রের কাছে তা জানতে চাইল কলকাতা হাই কোর্ট। সোমবারের মধ্যে কেন্দ্রকে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে। তারপর পরবর্তী শুনানি। সিপিএম নেতা ডা. ফুয়াদ হালিমের দায়ের করা এক জনস্বার্থ মামলায় এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। রাজ্য এবং দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার দাবিতে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন সিপিএম নেতা তথা চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম। এই মামলায় বেশ কয়েকটি দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।ডা. ফুয়াদ হালিম বলেছেন, ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি অবিলম্বে রাজ্যে অক্সিজেন ও করোনার প্রয়োজনীয় ওষুধের যে কালোবাজারি চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সেইসঙ্গে করোনার চিকিৎসায় হাসপাতালে প্রয়োজনীয় শয্যা নিশ্চিত করার দাবিও মামলায় জানানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন ফুয়াদ হালিম। এই মামলায় তিনি কেন্দ্র ও রাজ্যকে পার্টি করেছিলেন।