মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দেবে ভারত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুরোধে ভারত থেকে আমেরিকায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রফতানিতে সিলমোহর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।করোনা লড়াইয়ে প্রধান অস্ত্র হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প করোনার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধক হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের রফতানির উপর থেকে সব বিধিনিষেধ সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে।ওষুধ রফতানিতে ভারতের কাছ থেকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া না মেলায় সুর চড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যদি ভারত এই ওষুধ রফতানি না করে তাহলে ছেড়ে কথা বলবেনা আমেরিকা। কিন্তু আমেরিকার কাছে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে এই কঠিন সময়ে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।উল্লেখ্য,করোনাভাইরাস প্যানেডেমিক দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরই বেশ কিছু ওষুধের রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার।কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। ২৪টি ওষুধের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

Lab

Source: Pixabay

ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন,করোনা মহামারীর প্রভাব দেখে ভারত সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে আন্তর্জাতিক বিশ্বের সংহতি ও সহযোগিতা বজায় রাখবে।করোনা ভাইরাস থেকে নিরাময়ে সক্ষম প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হবে অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতেও।তাঁর কথায় ,গোটা বিশ্বে এই মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে।এই সময় মানবিক দিক থেকে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ভারত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বেশ কিছু প্রতিবেশী দেশে উপযুক্ত পরিমাণে প্যারাসিটামল এবং হাইড্রোক্সিক্লোরোক্যুইন সরবরাহ করবে। এমন কিছু দেশকেই এই প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হবে যারা এই মহামারীতে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে।সুতরাং ভারত এই বিষয় নিয়ে কোনও জল্পনা চাইছে না। আবার এই বিষয়টি নিয়ে কোনও রাজনীতি করা হোক এমনটাও চাইছে না,বলেছেন কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র শ্রীবাস্তব।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী,সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৫ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৪০ জন। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৪২১। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়। ফলে এই মুহূর্তে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১৪। সুস্থ হয়েছেন ৩২৫ জন।দেশের অন্যান্য রাজ্যে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও, ত্রিপুরায় এর আঁচ পড়েনি এত দিন।কিন্তু এ বার উত্তর-পূর্বের রাজ্য ত্রিপুরাও আক্রান্তের তালিকায়।

দেশের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি হারে যে রাজ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে তা হল মহারাষ্ট্র।ওই রাজ্যে নতুন করে মারণ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১২০ জন। বাড়ছে মৃত্যু মিছিলও, করোনার আক্রমণে আরও ৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে।সরকারি পরিসংখ্যান মতে,মোট ৮৬৮ জন আক্রান্ত করোনা ভাইরাসে,যা এখনও পর্যন্ত দেশের অন্যান্য রাজ্যের থেকে অনেকটাই বেশি। আর বাণিজ্যনগরী মুম্বইতে এখন কার্যত শ্মশানের নিস্তব্ধতা।মহারাষ্ট্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে জায়গায় থাবা বসিয়েছে করোনা, সেই জায়গাটি হল মুম্বই। মুম্বইতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫২৬, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে দেশকে সুস্থ থাকার বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।পাশাপাশি এই বিশেষ দিনে করোনা যুদ্ধে শামিল স্বাস্থ্যকর্মীদের লড়াইকে কুর্নিশও জানিয়েছেন তিনি।ট্যুইটে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন,শুধু একে-অপরের সুস্বাস্থ্য কামনাই নয়,করোনার বিরুদ্ধে যে ডাক্তার, নার্স, মেডিক্যাল কর্মী ও স্বাস্থ্য কর্মীরা সাহসের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছেন, তাঁদের কুর্নিশও জানাচ্ছেন।পাশাপাশি এ দিন ফের সোশ্যাল ডিসট্যানসিং মেনে চলার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।তিনি লিখেছেন,এই বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে আসুন আমরা সোশ্যাল ডিসট্যানসিং মেনে চলি যাতে আমরা নিজেদের ও অন্যান্যদের প্রাণ বাঁচাতে পারি।প্রার্থনা করি এই গোটা বছর যাতে মানুষ ফিটনেসের উপর জোর দেন যাতে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।

আগামী দু’সপ্তাহ লড়াইটা যে কঠিন হতে চলেছে, সে সাবধানবাণী আগেই দিয়ে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সোমবার আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যাবৃদ্ধি যখন আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে যাচ্ছে, তখন বিজেপির প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে আরও একবার সতর্কবার্তা শুনিয়েছেন তিনি। বলেছেন,জনতা কার্ফু থেকে লকডাউন, শত অসুবিধা সত্ত্বেও দেশবাসী অনুশাসন মেনেছে,একজোট হয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়েছে,আর সেটাই দেশবাসীকে দীর্ঘ লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছে।সামনে এখন লম্বা লড়াই।ক্লান্ত হলে চলবে না,এ লড়াই জিততে হবে।প্রধানমন্ত্রীর এই সতর্কবাণী অবধারিত ভাবে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে,তবে কি করোনার সংক্রমণ রুখতে ১৪ এপ্রিলের পর বাড়তে চলেছে লকডাউনের মেয়াদ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে কোনও জবাব না দিলেও সরকারি সূত্রে খবর, কয়েক দিনের গতিপ্রকৃতি বিচার করে আগামী সপ্তাহের মন্ত্রিসভার বৈঠকে হতে পারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।


Share
Published 7 April 2020 7:25pm
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends