ওয়ার্কিং হলিডে ভিসায় আসা ব্যাকপ্যাকার কর্মীরা প্রতিনিয়ত শোষণের শিকার হচ্ছে, এবং এই কর্মসূচীর জরুরী পরিবর্তন প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছে একটি পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটি।
এই তদন্ত দল ওয়ার্কিং হলিডে মেকার প্রোগ্রামের ত্রুটিগুলো পরীক্ষা করেছে এবং অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিতে বিশেষ করে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সময় পর্যটন, এবং শ্রম সংকট মোকাবেলায় এর অবদান তুলে ধরেছে।
বুধবার মাইগ্রান্টস ওয়ার্কার্স সেন্টার (MWC) তাদের কমিটির সর্বশেষ শুনানিতে এই কর্মসূচীর সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে যাতে অভিবাসী কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়।
MWC ডিরেক্টর ম্যাট কুনকেল বলেন, এই প্রোগ্রামের ব্যর্থতায় নিয়োগদাতা এবং লেবার হায়ার সংস্থাগুলো ওয়ার্কিং হলিডে মেকারদের সাথে ব্যাপক বাজে আচরণ করেছে।
তিনি কমিটিকে বলেছেন "এদেশের ওয়ার্কিং হলিডে ভিসা প্রোগ্রামের কাঠামোগত ত্রুটি জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে।"
"এই ভিসা ক্লাসের যে মৌলিক সীমাবদ্ধতা - তা কর্মীদের অধিকারহীন করেছে, এবং অসৎ নিয়োগদাতারা তাদের শোষণ করতে ভালো সুযোগ নিয়েছে।"
"আমরা কোন বেতন পাইনি"
৩১ বছরের তাইওয়ানিজ নাগরিক সিয়েন তান চেন ওয়ার্কিং হলিডে ভিসার সময় কাজ করে কম বেতন পেয়েছেন। তিনি ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণ -পশ্চিম অঞ্চল ওয়েরেবির একটি কসাইখানায় কাজ করতেন, যে লেবার হায়ার কোম্পানির মাধ্যমে তিনি নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা লিকুইডেশনে চলে যায়।
তিনি এসবিএস নিউজকে বলেন, এর ফলে তিনি দুসপ্তাহের বেতন পাননি যা প্রায় ১৬০০ ডলার। তিনি দাবি করেন যে দুবছরেও তিনি কোন ক্ষতিপূরণ পাননি।
তিনি বলেন, "বেতন না পেয়ে প্রথমে বুঝতে পারিনি সাহায্যের জন্য কোথায় যাওয়া উচিত।"
"আমরা সবাই খুব ক্রুদ্ধ ছিলাম এবং হতাশ হয়ে পড়েছিলাম, আমরা জানতাম না কোথায় এ ব্যাপারে সাহায্য পাবো।"মিঃ চেন বলেন, তাকে বাসা ভাড়া, খাবার এবং যাতায়াত খরচের জন্য নিজের সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
Hsien Tan Chen says his underpayment situation is still yet to be resolved. Source: Supplied
তিনি বলেন, তিনি এখন শোষিত কর্মীদের জন্য কাজ করবেন যাতে নিয়োগদাতারা তাদের ঠকাতে না পারেন।
এ সময় মিঃ চেন দাবি করেন তিনি ফেয়ার ওয়ার্ক ওমবাডসম্যান-এর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, "এবং তারা এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু এখনো কোন ফলাফল পাইনি।"
তিনি বলেন,"তাদের সাথে যোগাযোগ করে মনে হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ব্যাকপাকারদের নিয়ে কিছু চিন্তা করে না, এবং আমাদের কাজ আমাদের নিজেদেরই করতে হবে - তারা আমাদের কথা ভাবেই না।"
অভিবাসীদের কর্মক্ষেত্রে অধিকারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে
এদিকে ফেয়ার ওয়ার্ক ওমবাডসম্যানও কমিটিকে বুধবার কিছু সাক্ষ্য-প্রমান দিয়েছে, যেখানে তারা বলেছে ওয়ার্কিং হলিডে মেকাররা অন্যায্যভাবে এইসব কর্মকান্ডের শিকার হয়েছে।
কমিটি জানতে পেরেছে এই ওয়ার্কিং হলিডে মেকাররা পুরো ওয়ার্কফোর্সের সংখ্যায় শতকরা একভাগ হলেও তাদের দিক থেকে অভিযোগ আসে শতকরা ৭ ভাগ যা উদ্বেগজনক।
ফেয়ার ওয়ার্ক ওমবাডসম্যান-এর এক্সেকিউটিভ ডিরেক্টর লুইস পিটার্স বলেন, ওয়ার্কিং হলিডে মেকারদের জন্য কাজের অধিকার প্রশ্নে সচেতনতা কার্যক্রমের বিষয়টি অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।
তিনি বলেন, "আমরা অভিবাসী কর্মীদের সচেতন করতে অগ্রাধিকার দিচ্ছি, বিশেষ করে অস্থায়ী ভিসাধারীদের জন্য, তারা যাতে কর্মক্ষেত্রের অধিকার এবং প্রাপ্য বিষয়ে সচেতন হয় এবং তাদের কোন উদ্বেগ থাকলে কিভাবে সাহায্য পেতে পারে সে বিষয়টি সম্পর্কে জানে।"
ওয়ার্কিং হলিডে মেকারদের দিক থেকে যে পাঁচটি বিষয়ের অভিযোগ তদন্ত করা হয়েছে তাতে আছে কাজের বেতন, পরিবেশ, প্রাপ্য কর্মঘণ্টার সম্মানী না পাওয়া, চুক্তি বাতিল হলে ক্ষতিপূরণ, এবং বাধ্যতামূলক অবসর।
'নিয়ম না মানার সংস্কৃতি'
মাইগ্রেশন পাথওয়ের ক্ষেত্রে মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কার্স সেন্টার কিছু সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে যাতে শোষণ থেকে কর্মীদের রক্ষা করা যায়।
MCW-এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী ছয় মাসের যে রেস্ট্রিকশন আছে তা তুলে নিতে বলা হয়েছে যেখানে নিয়োগদাতাদের সাথে ব্যাকপ্যাকারদের বেশি সময় কাজে থাকতে বাধা দেয়।
বর্তমান নিয়মে অন্যায্যভাবে চাকরিচ্যুত করার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ চাইতে হলে কর্মীদের নিয়োগদাতার সাথে অন্তত ওই সময় পর্যন্ত কাজ করেছে এমন শর্ত থাকতে হবে।
মিঃ কুনকেল বলেন, এই সীমাবদ্ধতার কারণে বা অন্যায্যভাবে চাকরিচ্যুতির সুরক্ষা ছাড়া অভিবাসী কর্মীরা তাদের নিরাপত্তা এবং প্রাপ্য সম্মানী না দেওয়ার মত বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারে না।
তিনি বলেন, "তারা এভাবেই ওয়ার্কিং হলিডে মেকারদের অধিকার লঙ্ঘন করছে এবং নিয়মনীতি না মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলছে।"
MWC অভিবাসী কর্মীদের বেতন মেরে দেওয়ার বিরুদ্ধে ফৌজদারি শাস্তি দাবি করেছে, সেইসাথে অতিরিক্ত জরিমানার ব্যবস্থা চায় যদি কেউ নিয়ম লংঘন করে।
তাছাড়া সংস্থাটি রিজিওনাল এলাকায় কাজের জন্য দ্বিতীয় বা তৃতীয় বছরের ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যে শর্ত আছে তার অবসান চায়।
আরো পড়ুন: