বাংলাদেশে কোভিড-১৯: কী বলছেন চিকিৎসকরা
বাংলদেশের চিকিৎসকরা মনে করছেন, মানুষকে আশ্বস্ত করার জায়গাটা হলো এই যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সবাই কিন্তু মৃত্যুবরণ করবে না। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষের কোনো উপসর্গই থাকবে না। ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মানুষের উপসর্গ দেখা দেবে আর তাদের মধ্যে অল্প কিছুসংখ্যক মৃত্যুবরণ করবে। এটিই বাস্তবতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল বলছেন, শেষ কোথায় এটি এখন বোধ হয় কেউই বলতে পারবে না। তবে শেষ অবশ্যই হবে। এটি এমন কোনো জিনিস নয় যে তা দিয়ে মানবসভ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে।তিনি বলেন কতগুলো বৈজ্ঞানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে এ কথা বলা যায়। ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চলছে। চলে আসবে। দ্বিতীয় বিষয় হলো, এই ভাইরাসে এত মানুষ কেন অসুস্থ হচ্ছে বা মারা যাচ্ছে? কারণ এটি আমাদের জন্য নতুন একটি ভাইরাস। এর বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না। যখন আস্তে আস্তে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়ে যাবে তখন আশপাশের আরো অনেক মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে।
ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল Source: Supplied
এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সারা জীবন স্থায়ী হবে, নাকি কয়েক মাস বা কয়েক সপ্তাহ—সেটি আমরা জানি না। কারণ ভাইরাসটিই নতুন। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অবশ্যই তৈরি হবে। যেমন সংক্রমিত হওয়ার কারণে যখন ১০ জন মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে তখন আশপাশের আরো পাঁচ-সাতজন বা ১০ জনের মধ্যেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ডেভেলপ করবে। এটিকে হার্ড ইমিউনিটি বলে। একসময় আসবে যখন এই ভাইরাস আমাদের আশপাশেই থাকবে; কিন্তু হার্ড ইমিউনিটির কারণে বা ভ্যাকসিনের কারণে এটি নতুন করে আর আমাদের সংক্রমিত করতে পারবে না। ফলে একপর্যায়ে এটি থামতে বাধ্য হবে। সেটি কবে হবে, তা অবশ্য আমরা হলফ করে বলতে পারি না। তবে যত তাড়াতাড়ি থামবে ততই মঙ্গল।ঢাকার ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ মনে করেন, সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধ মানবসভ্যতা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁর মতে, ওষুধ দিয়ে বহু রোগ সারানো যায় না বা যাবে না। অনেক রোগের এখনো কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি এবং অনেক রোগের জন্য কোনো ওষুধের দরকার হয় না। ওষুধ দিয়ে মহামারি ঠেকানোর পথও সম্ভবত কার্যকর হবে না। তিনি মনে করেন, সব ধরনের ফ্লু বা রোগের বিরুদ্ধে জয়লাভের জন্য আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হবে এবং শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে।রংপুর মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সাবেক প্রধান অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় করোনাকালীন মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে নিজেকে সদা প্রস্তুত রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা দরকার। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুমের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মানসিক চাপ কমানোর জন্য প্রার্থনা ও মেডিটেশন করা যেতে পারে। অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় বলছেন, এই সংকট চিরস্থায়ী নয়; এটি অচিরেই কেটে যাবে। রাত শেষে ভোরের আলো আবার দেখতে পাবো আমরা।
অধ্যাপক মুনীরউদ্দিন আহমদ Source: Supplied
অধ্যাপক ডা. জ্যোতির্ময় রায় Source: Supplied