বাংলাদেশে অধ্যাদেশ জারি:ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড

গত সোমবার ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন, সাধারণ জখম হলে আপসের বিধান রেখে ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০০০’-এর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন করে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশও জারি করেছে সরকার। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ মঙ্গলবার দুপুরে এ অধ্যাদেশ জারি করে। এর আগে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাতে সই করেন।

A student participates in a cultural event as part of a protest against rape and sexual assault in Dhaka, Bangladesh, on 12 October.

A student participates in a cultural event as part of a protest against rape and sexual assault in Dhaka, Bangladesh, on 12 October. (Representative image) Source: AAP

এর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে এই অধ্যাদেশ উপস্থাপন করতে হবে। আইনটি বলবৎ রাখতে চাইলে পরে বিল আকারে তা আনবে সরকার। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংসদ চালু না থাকায় এটি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে পারবেন।’

এদিকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইনের সংশোধন অনুযায়ী ধর্ষণের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সুযোগ থাকায় ধর্ষণের মতো অপরাধ কমে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই রয়েছে অর্থ দণ্ডের বিধান। এ আইনে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান করার পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে বিচার ও রায় কার্যকর করার জন্য আইন সংশোধনের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই করা হচ্ছিল বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে।

সম্প্রতি নোয়াখালীতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, সিলেটের এমসি কলেজে তুলে নিয়ে ধর্ষণসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যৌন নিপীড়নের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশজুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে সেই দাবি আবারও জোরালো হয়ে ওঠে। এই অধ্যাদেশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২০ নামে পরিচিত হবে।

অধ্যাদেশ জারি করার পর এখন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিতে পারবেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি যাবজ্জীবন সাজার যে বিধান করা হলো তাতে কি ধর্ষণ কমবে? ঢাকার একটি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন প্রশ্নের জবাবে নাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, এক কথায় তা বলা যাবে না। শুধু সাজা বাড়িয়ে সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো জঘন্যতম অপরাধ দূর করা যাবে না। হয়তো কিছুটা কমবে। এ অপরাধ সমাজ থেকে দূর করতে হলে গোড়ায় যেতে হবে। সাজা বাড়ানোর পাশাপাশি যেসব সমস্যা আছে, তা দূর করতে হবে। সংস্কার আনতে হবে প্রচলিত বিচারব্যবস্থায়।

ঐ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, মামলা আদালতে যাওয়ার পর যাঁরা বিচারের অংশ তাঁদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রথমেই দায়িত্ব আসে প্রসিকিউশনের ওপর। দক্ষ ও জ্ঞানী সিনিয়র আইনজীবীদের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে। মামলায় ঠিকমতো সাক্ষ্য নেওয়া হয় না। মামলার বিচার বিলম্বিত হয়। ফলে বিচারটাও সঠিক হয় না। আসামিরা খালাস পেয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাক্ষীরা ভয়ে আসে না। এলেও সঠিক সাক্ষ্য দেয় না। সে জন্য সাক্ষীদের সুরক্ষা আইন করতে হবে। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে যে পরিমাণ মামলার চাপ, তাতে বিচারকরাও ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারেন না। তাঁদের অধিক হারে মামলা নিষ্পত্তি দেখাতে গিয়ে তাড়াহুড়া করতে হয়। এই সুযোগে আসামিরা খালাস পেয়ে যায়।

তিনি বলেছেন, দেশে বর্তমানে ৩৫ লাখের বেশি মামলার জট রয়েছে। এ জট দূর করতে হলে ও ধর্ষণ মামলার দ্রুত বিচার করতে হলে বিচারক সংকট দূর করতে হবে। দেশে ছয়-সাত হাজার বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। এ মুহূর্তে এটা হয়তো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু প্রতিবছর ৫০০-৬০০ করে বিচারক নিয়োগ দেওয়া গেলে ধীরে ধীরে দক্ষ বিচারক গড়ে উঠবে। বিচার তাড়াতাড়ি শেষ হলে অপরাধীরা শাস্তি পাবে। তখন অপরাধপ্রবণতা কমবে। এখন বিচার বিলম্বিত হওয়ায় জামিনে বেরিয়ে আসামিরা নতুন করে অপরাধে জড়ায়। দ্রুত বিচার হলে অপরাধীরা সজাগ হবে।


Share
Published 14 October 2020 3:04pm
Updated 14 October 2020 3:12pm
By Ali Habib
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends