বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা, আমজাদ হোসেন আর নেই। গত ১৪ ডিসেম্বর, শুক্রবার ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি স্ত্রী আর চার ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় গত ১৮ নভেম্বর রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এই বরেণ্য গীতিকার ও চিত্রনাট্যকারকে।
আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ ২০ লাখ টাকা এবং এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ ২২ লাখ টাকা পরিবারের হাতে তুলে দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপর ২৭ নভেম্বর মধ্যরাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যাংকক নেওয়া হয় এবং সেখানে বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
১৯৪২ সালের ১৪ আগস্ট জামালপুরে জন্মগ্রহণ করেন আমজাদ হোসেন। পঞ্চাশের দশকে ঢাকায় এসে সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সঙ্গে জড়িত হন তিন।
মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়।আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক ‘ধারাপাত’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সালাহউদ্দিন। এতে আমজাদ হোসেন নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। এরপর তিনি জহির রায়হানের ইউনিটে কাজ শুরু করেন।
১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন নিজেই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। সিনেমার নাম ‘জুলেখা’। তার পরিচালিত অন্যান্য চলচ্চিত্র হচ্ছে: বাল্যবন্ধু, পিতাপুত্র, এই নিয়ে পৃথিবী, বাংলার মুখ, নয়নমনি, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, কসাই, জন্ম থেকে জ্বলছি, দুই পয়সার আলতা, সখিনার যুদ্ধ, ভাত দে, হীরামতি, প্রাণের মানুষ, সুন্দরী বধূ, কাল সকালে, গোলাপী এখন ঢাকায়, গোলাপী এখন বিলেতে, ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান আমজাদ হোসেন। তার পরিচালিত ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ছবিটি চার দশক ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বাধিক শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের রেকর্ড ধরে রেখেছিল। এছাড়া, ‘ভাত দে’ ছবিটি নয়টি শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক প্রদান করে। স্বাধীনতা পুরস্কারও লাভ করেছেন তিনি।
এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দু’বার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮১ সালে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত পালন করেন তিনি।
নিজের তৈরি সিনেমার জন্য বেশ কিছু গান লিখেছেন আমজাদ হোসেন। সেসব গানের মধ্যে রয়েছে: ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো/আমার নয়ন দুটি জলে ভাসতো আর ভালোবাসতো’, ‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ ছবির এই গানের সুরকার আলাউদ্দিন আলী। কণ্ঠ দিয়েছেন সৈয়দ আবদুল হাদী ও সামিনা চৌধুরী।