ভারতের প্রাক্তন আমলাদের অভিযোগ,সংবাদ মাধ্যমের একাংশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সংক্রমণের প্রভাব বাড়ার জন্য মুসলিমদের দোষারোপ করছে।এই ঘটনা অত্যন্ত অসংবেদনশীল আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয়।যে ১০১ জন আমলা চিঠি লিখেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন, প্রাক্তন ক্যাবিনেট সচিব কেএম চন্দ্রশেখর,প্রাক্তন আইপিএস এস দুলত আর জুলিও রিবেরিও, প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার অধিকর্তা বি হাবিবুল্লা, দিল্লির প্রাক্তন উপ-রাজ্যপাল নাজিব জং আর প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি।
ওই চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে,এই সংক্রমণের জেরে মানুষের মনে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।এই সুযোগে মুসলিমদের সামাজিক ভাবে দূরে রাখা হচ্ছে।পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে বলা হচ্ছে,এতে অন্যদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচান সম্ভব।চিঠিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে,এই বিপর্যয় মানুষের মনের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিয়েছে। তাই একজোট হয়ে, একে অপরের পাশে থেকে বিপর্যয় মোকাবিলা করতে হবে।সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে আমলাদের বার্তা,সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নাগরিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে ধর্মনিরেপেক্ষ প্রশাসকের ভূমিকা পালন করুন।
এদিকে জানা যাচ্ছে দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কাজের প্রধান মওলানা সাদ কান্দালভির ওপরে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করেছে দিল্লি পুলিস।তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ,তিনি বিনা অনুমতিতে মার্কাজে ধর্মীয় সমাবেশ করেছেন।ওই ডসিয়ারে মওলানা সাদ ছাড়াও তাঁর ৩ ছেলের নাম রাখা হয়েছে।রয়েছে তাঁর পরিচিত আরও অনেকের নামও।ডসিয়ারে জানানো হয়েছে,মওলানা সাচ প্রতিদিন রোজ সকাল আটটায় মার্কাজে আসেন। বেরিয়ে যান দুপুর দুটোয়।ফের আসেন ৪টের সময়।থাকেন রাত ১০টা পর্যন্ত।
পুলিসের দাবি মওলানা সাদের ছেলে ও ভাইপোরাও দিল্লির মার্কাজের সঙ্গে জড়িত এবং টাকাপয়সা লেনদেনের ক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতা রয়েছে।তদন্তকারীদের ধারণা,মওলানা সাদের কমপক্ষে ২ কোটি টাকা সম্পত্তি রয়েছে।ওইসব সম্পত্তির টাকা কোথা থেকে এসেছে তা বোঝার জন্য সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের সামলিতে সাদের ফার্ম হাউসে অভিযান চালায় পুলিস।কিন্তু কোনও কিছু পাওয়া যায়নি।জানা গেছে,দিল্লির জাকির নগরে একটি ৬ তলা বাড়িতে থাকেন মওলানা আব্দুল রহমান।পুলিসের অনুমান তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়ার পর মওলানা সাদ ও মওলানা আব্দুল রহমানের বাড়িতেই লুকিয়ে ছিলেন।
মার্চ মাসে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিঘি জামাতের এক সভা হয়।সেখানে যোগ দেন ৮৫০ বিদেশি।অনুমান করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে ভারতীয় জামাত সদস্যরা সংক্রমিত হয়েছেন।
অন্যদিকে ২৪ ঘণ্টায় দেশে সংক্রমণের হার ৬% বেড়েছে। শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হিসেবে এই পরিসংখ্যান,জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্র।সূত্রের আরও দাবি,মার্চের নিরিখে দিনপ্রতি এই সংক্রমণের হার সর্বনিম্ন।গত মাসেই ১০০ ছাড়িয়েছিল সংক্রমণ।দিনপ্রতি বিচারে বৃদ্ধির হার ছিল উদ্বেগজনক।
শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপার্ষদের একটি বৈঠক হয়েছে।স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের নেতৃত্বাধীন সেই বৈঠক থেকেই এই পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে বলে খবর।সেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে,দিনপ্রতি মৃত্যুর হার ৩.১% আর সুস্থ হওয়ার হার ২০%। এই ধারা অত্যন্ত আশাব্যাঞ্জক। অন্তত বাইরের অন্য দেশগুলোর বিচারে সংক্রমণ-সহ মৃত্যুর হার কমায় উদ্বেগ খানিকটা কমছে। এমন দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র।
সরকারি পরিসংখ্যান সূত্রে খবর,২৪ ঘণ্টায় ১হাজার ৪২৯টি নতুন সংক্রমণের খোঁজ মিলেছে।এই সংখ্যা ধরে শনিবার পর্যন্ত দেশে মোট সংক্রমিত ২৪ হাজার ৫০৬ জন। তবে বৃহস্পতিবার-শুক্রবার হিসেব করলে ২৪ ঘণ্টায় ১হাজার ৭৫২ জনের দেহে সংক্রমণ মিলেছিল।যা একদিনে সর্বাধিক বৃদ্ধি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক।সেই তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টার ৬% বৃদ্ধি অনেকটা আশাব্যাঞ্জক। এমনতাই দাবি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।